প্রকাশিত: ১৫/০২/২০১৭ ৯:২৬ এএম

বাংলাদেশি হিসেবেই পাসপোর্ট ছিল এক নারীর। ওমরাহ ভিসায় সৌদি আরব যাচ্ছিলেন। কিন্তু হজ বা ওমরাহ করতে গেলে নিকটাত্মীয় পুরুষ থাকার যে শর্ত তার গরমিল পায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সন্দেহে সঙ্গে থাকা পুরুষসহ আটক হন ওই নারী।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে ওই নারী জানিয়েছেন, চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের লতিফ নামে এক বাংলাদেশি তাঁকে ভাগ্নি পরিচয় দিয়ে পাসপোর্ট করতে সহায়তা করেছেন।

একই অভিযোগে গত মাসে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ১৪ জনকে আটক করা হয়। মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের এভাবে বাংলাদেশি পাসপোর্ট করিয়ে সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে পাঠাচ্ছে একাধিক চক্র। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা একটি চক্রের সন্ধান পেয়েছেন।

এ ঘটনায় চিন্তায় পড়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। ওই মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুল জলিল কালের কণ্ঠকে বলেন, এখনই এ বিষয়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নিতে পারলে আগামী দিনে এর ভয়াবহতা আরো বাড়বে। সে ক্ষেত্রে আবারও বাংলাদেশিদের পবিত্র ওমরাহ করার পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হতে পারে। এর আগে গত বছর রোহিঙ্গাদের পাচারের অভিযোগে বাংলাদেশিদের ওমরাহ করার অনুমতি বাতিল করেছিল সৌদি সরকার।

তবে রোহিঙ্গারা কিভাবে বাংলাদেশি পাসপোর্ট পায় তা জানতে এরই মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানান ধর্মসচিব।

হজসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে ওমরাহ ভিসায় রোহিঙ্গাদের সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে পাঠানোকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে একাধিক দালালচক্র। এদের সহায়তা করে কিছু অসাধু ওমরাহ এজেন্সি। এ ক্ষেত্রে বিমানবন্দরে সংশ্লিষ্ট ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের টাকা দিয়ে ‘ম্যানেজ’ করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। কড়াকড়ি আরোপ করা হলেই কেবল আটকের ঘটনা ঘটে।

হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) মহাসচিব শেখ আবদুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, চট্টগ্রামের মতো ঢাকায়ও শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে ওমরাহর নামে রোহিঙ্গাদের সৌদি আরবে পাঠানো হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি ইমিগ্রেশন পুলিশকে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে দিয়ে বাংলাদেশি পাসপোর্টে ওমরাহ ভিসায় রোহিঙ্গাদের সৌদি

আরব পাঠানো হচ্ছে। এর আগে ওমরাহর নামে মানবপাচারের কারণে সৌদি আরব বাংলাদেশকে ওমরাহর ভিসা বন্ধ করে দিয়েছিল। এতে দেশের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছিল। কিন্তু অসাধুচক্র নতুন করে ওমরাহ ভিসায় মানবপাচার শুরু করেছে। এতে আবারও বাংলাদেশ অভিযুক্ত হতে পারে। ’

গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর দিয়ে ওমরাহর নামে রোহিঙ্গাদের সৌদি আরবে পাচারে পুলিশের ইমিগ্রেশন শাখার যোগসূত্র থাকার কথা উঠে আসে। প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণ মেলায় তখন এক কর্মকর্তাসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে বদলি করা হয়।

মানবপাচারের অভিযোগ ওঠার পর গত বছরের নভেম্বরে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনের দায়িত্ব নেয় পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি)। গত মাসে ১৪ রোহিঙ্গাকে আটকের পর ইমিগ্রেশনের দায়িত্বে থাকা এসবির পুলিশ সুপার মো. শাহরিয়ার আলম বলেছিলেন, ‘চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলার কারণে এরা রোহিঙ্গা কি না, সেটা নিশ্চিত হওয়া বেশ কঠিন ছিল। কিন্তু জেরায় নারী-পুরুষের মধ্যে সম্পর্কের গরমিল পাওয়ায় তাদের রোহিঙ্গা বলে সন্দেহ হয়। পরে তাদের আটক করা হয়।

ওই ঘটনায় ধর্ম মন্ত্রণালয় সর্বশেষ চারটি এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল করে। এজেন্সিগুলো হলো ঢাকার মতিঝিলের সৌদিয়া বাংলা এয়ার সার্ভিসেস লিমিটেড (লাইসেন্স নং-৩৬০), নয়াপল্টনের টপ ওয়ান এভিয়েশন লাইসেন্স নং-৪০৭), সামিট এয়ার ইন্টারন্যাশনাল (লাইসেন্স নং-৩৩৮) ও প্যারামাউন্ট ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেড (লাইসেন্স নং-৩৬৪)।

বাংলাদেশি পাসপোর্টে রোহিঙ্গাদের বিমানবন্দর অতিক্রমের সঙ্গে ইমিগ্রেশন পুলিশের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এমন অভিযোগ রয়েছে। তবে আমরা এ বিষয়ে সতর্ক আছি। সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে কাউকেই রেহাই দেওয়া হচ্ছে না। ’ তিনি বলেন, ‘আমাদের পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে অনেক সতর্ক। এ ছাড়া কারোরই বিনা চ্যালেঞ্জে বিমানবন্দর অতিক্রমের সুযোগ নেই। কাউকে সন্দেহ হলে তাত্ক্ষণিক চ্যালেঞ্জ করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ’

পাঠকের মতামত