প্রকাশিত: ১৭/০৭/২০১৯ ৯:৪৬ পিএম

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা,
লেখার প্রারম্ভেই তোমাদের প্রতি আমার সমানুভূতি প্রকাশ করছি।জানি তোমাদের আকাশটা আজ বড়ই সংকোচিত।কোন কিছুই আজ আর তেমন ভালো লাগছেনা।খারাপ লাগাটা মোটেও অস্বাভাবিক নয়।তবে একটা কথা স্পষ্ট বলে রাখছি আজকের(১৭/০৭/২০১৯) তারিখে প্রকাশিত উচ্চমাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষায় তোমরা মোটেও অকৃতকার্য হওনি।তোমাদের মাধ্যমে বরং আমার মত তথাকথিত অভিভাবকরাই আজ অকৃতকার্য হয়েছি।তার কয়েকটি কারণ তোমাদের জ্ঞাতার্থে তুলে ধরছি।তোমাদের এখন অনেক বুঝার সক্ষমতা হয়েছে।তোমরা যারা উখিয়া বা টেকনাফ উপজেলা তথা কক্সবাজার জেলায় জন্মগ্রহণ করেছ তাদের অভিভাবক হিসেবে আমরা তোমাদের অকৃতকার্য করার জন্যই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব দিয়েছি।তোমরা রোহিঙ্গা শিশুদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার জন্য রাত-দিন খাটছিলে।আমরা যারা অভিভাবক ছিলাম আমরা কখনোই তোমাদের আজকের দিনের ভালো ফলাফল চায়নি।আবার তোমাদের পাশাপাশি তোমাদের কলেজের খন্ডখালিন শিক্ষকদেরও বেশি সুযোগ সুবিধা প্রদান করে তোমাদেরকে শিক্ষক সংকটে ফেলেছি।সেই আমরাই তোমাদের প্রিয় গৃহশিক্ষকদের টিউশনি কিংবা প্রাইভেট ব্যাচ পড়ানোর পরিবর্তে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের লার্নিং সেন্টারের দায়িত্ব প্রদান করছি।তারা কত ভালোভাবেই না সেসব ক্যাম্পবাসী শিশুদের নিয়ম মেনেই পাঠদান খেলাধূলা করাচ্ছেন।সেই আমরাই তোমাদের কলেজ যাবার সময় তোমারদের গতিপথ রোধকরে কালোকাচের প্রাইভেট গাড়িবহর নিয়ে মানবিক কর্মে যায় ফলে তোমরাও অনেকে কলেজে না গিয়ে ক্যাম্পে স্বেচ্ছাসেবক হতে বেশি আগ্রহী হলে।এতেই শেষ নয় তোমরা যখন সাদা শার্ট গায়ে দিয়ে কলেজে যাবার জন্য ঘন্টার ঘন্টা রাস্তার পাশে লোকাল বাসের জন্য অপেক্ষা করতে ঠিক তখনি আমরা বড়ট্রাকে অতিরিক্ত বাঁশবোঝায় করে বিজয়োল্লাসে ক্যাম্পে যেতাম আর তোমরা রাস্তার পাশে অনেক্ষণ অপেক্ষার পর যানজটের কবলে পড়ে আবার বাড়ি ফিরে যেতে বিফল মনোরথে।সেই আমরাই আবার তোমাদের রোহিঙ্গা সেবক বানানোর জন্য রাজপথে আন্দোলন করি;চাকরির মেলা করি। বিশ্বাস করবে কিনা জানিনা আমরা কখনোই তোমাদের নিয়ে অনেক বড় স্বপ্ন দেখিনি।আমরা চায়নি তোমার ডাক্তার ইন্জিনিয়ার কিংবা অনেক পদের ভালো মানুষ হও আমরা কেবল তোমাদের দিয়ে তাৎক্ষণিক কিছু পয়সা ইনকাম করতে চেয়েছি।আমরা বড়ই বোকা কারণ আমরা তোমাদের বিপথে যাবার সকল রাস্তা উন্মুক্ত রেখে তোমাদের কাছ থেকে সঠিক ফলাফল আশা করছি! এযেন” নৌকা ঠেলে দিয়ে বেয়ানকে আজকে থাকতে বলা”র শামিল।প্রিয় বন্ধুরা তোমরা মোটেও হতাশ হয়োনা।এখনো সবকিছু শেষ হয়ে যায়নি।আমাদের নিজের যোগ্যতায় এই অস্থির জনপদেে সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হবে।সফলতা ফেতে হলে তোমাদের চেস্টা অব্যাহত রাখতে হবে।নচেৎ এই রোহিঙ্গা শিশুরাই একদিন আমাদের শাসন করবে।আমরা কেবলই তাদের খাদেম হয়ে থাকব।বরং এবারের এশিক্ষাটা কাজে লাগিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতিজ্ঞা করো।দেখবে তোমরাই সবথেকে বেশি ভালো করবে সবকিছুতেই।কবি বলেছেন একবার না পারিলে দেখ শতবার…আমি বল তোমরা কেবল দুইবার চেস্টা করো দেখবে আমার কথাই ঠিক।আজ আমি বেশি খুশি হতাম যদি আগামী তিন মাসের মধ্যে তোমাদের জন্য একটা বিশেষ পরীক্ষার আয়োজনপূর্বক তোমাদের আবার একটা সুযোগ দেওয়া হত।অথবা রোহিঙ্গা ভারে হাজারো সমস্যায় জর্জরিত উখিয়া- টেকনাফ উপজেলা তথা কক্সবাজার জেলার খাতাগুলো বিশেষ বিবেচনায় মূল্যায়ন করা হত।এই মুহূর্তে তোমাদের সান্ত্বনা দেবার ভাষা আমার জানা নেই তারপরেও নিজের বিবেকের তাড়নায় কথাগুলো তোমাদের জন্য লিখলাম।নিজের ভারাক্রান্ত মনটাকে একটু হালকা করলাম।বুঝনা কেন আমরা হলাম সরল-সোজা অভিভাবক। অভিভাবকরা কখনো নিষ্ঠুর হয়না;না তোমাদের জন্য না রোহিঙ্গাদের জন্য। একটা পরীক্ষা কখনোই তোমাদের অযোগ্য বলতে পারেনা।হয়ত তাদের মাপকাঠিতে তোমরা আজ অকৃতকার্য কিন্তু ভেবো দেখো তোমার তোমাদের পরিবার পরিজনের চোখে অনেক বেশি কৃতকার্য। মন খারাপ নাকরে আজই নতুন প্রতিজ্ঞায় বুকবাঁধ;সফলতা আসবেই।ক্ষমা করো মোদের-অভিভাবকদের।
ইতি,
তোমাদেরই বড় ভাই,
জিয়াউর রহমান মুকুল।”

লেখকঃ
জিয়াউর রহমান মুকুল,
মানবিক ও উন্নয়ন কর্মী,
শেড,কক্সবাজার।
ইমেলঃ [email protected]

পাঠকের মতামত

“বিগত প্রতিশ্রুতির রাজনীতি নয়, বাস্তবায়নই হোক উখিয়া-টেকনাফের আগামী”

“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণের দুটি গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত  উপজেলা—উখিয়া ও টেকনাফ। এই জনপদ আজ মাদক, ...

ভুল হোক ফুল

আমাদের এই ছোট্ট জীবনটার পুরোটাই হচ্ছে শিক্ষা ক্ষেত্র।যত সময় যাচ্ছে, ততই যেন আমরা নতুন বিষয় ...

উখিয়া-টেকনাফের রূপকার, উন্নয়নের নায়ক আমার দেখা শাহাজাহান চৌধুরী

উখিয়া-টেকনাফের অবিসংবাদিত নেতা বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, বিএনপি বিপ্লবী ও সাহসী বীরযোদ্ধা কক্সবাজার জেলা বিএনপির মান্যবর সভাপতি, ...