প্রকাশিত: ১৯/০৭/২০১৮ ৫:২৭ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১২:৩২ এএম

ডেস্ক রিপোর্ট ::
মরজিনা আক্তার (২৪)। কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার ৪নং রাজাপালং ইউনিয়নের হাজীর পাড়া এলাকার মোহাম্মদ আলমের স্ত্রী। সাফা ও সুমাইয়া নামে দুই শিশু কন্যার জননীও। তাকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ ‘গুম’ করার হয়েছে বলে মামলা দায়ের করা হয়। মরজিনা আক্তারের মা রাশেদা বেগম বাদি হয়ে চলতি বছরের আট মে কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় আসামী করা হয়েছে মরজিনার স্বামী মোহাম্মদ আলম ও তার এক দেবরকে। আদালতে অভিযোগ তুলেছে; যৌতুকের জন্য স্বামী প্রায় সময় নির্যাতন করত। যৌতুক না দেয়ায় হত্যা করে লাশ ‘গুম; করা হয়। এমন মামলার পর থেকেই পলাতক রয়েছে স্বামী মোহাম্মদ আলম ও তার এক দেবর।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেয়। পিবিআই মামলার রহস্য উদঘাটনে তদন্ত শুরু করে। তদন্তকালে বিশ^স্ত সোর্স ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নেন পিবিআই।
সেই সহায়তায় কথিত ‘গুম’ হওয়া মরজিনা আক্তারকে প্রায় তিন মাস পর চট্টগ্রাম উখিয়ায় ‘গুম’ হওয়া গৃহবধু চট্টগ্রামে জীবিত
থেকে জীবিত উদ্ধার করেছে কক্সবাজারের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন (পিবিআই)। ওই নারী চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী থানার রুবি কলোনীর কাছে টেকনিক্যাল গেইট এলাকার একটি ভাড়া বাসায় এতদিন আত্মগোপনে ছিলেন। মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে চট্টগ্রাম পিবিআই এর সহায়তায় কক্সবাজারের একটি টিম তিনদিন অভিযান পরিচালনা করে। এরপর তার অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পর গত সোমবার (১৬ জুলাই) দিবাগত রাত ১১ টার দিকে তাকে উদ্ধার করে।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে পিবিআই কক্সবাজার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এসময় পিবিআই কক্সবাজার কার্যালয়ের পরিদর্শক (এডমিন) মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ‘উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের হাজীর পাড়া গ্রামের মো. ইসহাকের স্ত্রী রাশেদা বেগম গত ৮ মে কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার বাদী অভিযোগ করেন, গত ২০০৯ সালের ১৫ নভেম্বর একই গ্রামের আপন জেঠাত ভাই মোহাম্মদ আলমের সাথে তার কন্যা মরজিনা আক্তারের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে যৌতুকের দাবিতে স্বামী ও শ^শুর বাড়ির লোকজন প্রায় মরজিনাকে নির্যাতন করে আসছিল। গত ২৪ এপ্রিল ব্যবসার কথা বলে মোহাম্মদ আলম শাশুড়ি রাশেদার কাছ থেকে ২ লাখ টাকা এনে দেওয়ার জন্য মরজিনাকে চাপ দেয়। এতে অস্বীকৃতি জানালে মোহাম্মদ আলম ও তার ভাই ক্ষিপ্ত হয়ে মরজিনাকে অপহরণ পূর্বক হত্যা করে লাশ গুম করে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেয়।
মেজবাহ উদ্দিন আরও বলেন, ‘তদন্তে জানা গেছে, মরজিনা শশুর বাড়িতে প্রায় সময় নির্যাতনের শিকার হতো। নির্যাতন থেকে বাঁচতে সে নিজ বাড়িতে চলে আসে। এবং সেখানে দুই শিশু কন্যা রেখে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায়। তার আগে ব্যবহার করা সিম কার্ডটিও ফেলে দেয়। চট্টগ্রামে গিয়ে সানভি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরী নামে একটি প্রতিষ্ঠানে হেলপার হিসেবে কাজ শুরু করে এবং চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী থানার রুবি কলোনীর কাছে জনৈক শাহজাহানের একটি টিনশেড বাসা ভাড়া নেয়। ওই ভাড়া বাসায় জনৈক বান্ধবী লিপিকে নিয়ে গত তিন মাস যাবৎ বসবাস করে আসছিল।’ উদ্ধার করা মরজিনাকে সকালে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান পরিদর্শক (এডমিন) মেজবাহ উদ্দিন।
জানতে চাইলে মরজিনা বলেন- আমাকে স্বামী ও দেবর প্রায় সময় নির্যাতন করত। বিশেষ করে যৌতুকের কারণে নির্যাতন করা হত। এমনকি আমার দেবরও আমাকে যৌন নির্যাতন করেছিল। বিষয়টি আমি আমার স্বামীকেও অবগত করেছি। কিন্তু সুরহা পায়নি। এলাকার সবাই জানে আমাকে নির্যাতনের বিষয়টি। কোনো প্রতিকার পায়নি কোনো সময়। তাই বাধ্য হয়ে নিজেকে আত্মগোপন করে রেখেছিলাম।
এদিকে মরজিনাকে উদ্ধারের পর কক্সবাজার পিবিআই কার্যালয়ে তিনমাস পর মা মেয়ের একসাথে দেখা হয়। দুই শিশু মেয়েকে পেয়ে কান্নায় জড়িয়ে পড়ে মরজিনা। কোলে তুলে নেন সন্তানদের।

পাঠকের মতামত