সাঈদ মুহাম্মদ আনোয়ার, উখিয়া নিউজ ডটকম।
প্রকাশিত: ২০/০৮/২০২৫ ৩:৫৪ পিএম

কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের আন্দোলনের কারণে বুধবার সকাল থেকে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এনজিও অর্থায়নে পরিচালিত শিক্ষা প্রকল্প থেকে চাকরি হারানো স্থানীয় শিক্ষকরা সকাল থেকে উখিয়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পের যাতায়াতের বিভিন্ন উপসড়কে অবস্থান নিলে পুলিশ তাদের সরাতে গেলে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া সংঘটিত হয়।

একপর্যায়ে পুলিশ লাঠিচার্জ করে অন্তত ২৫ জনকে আটক করে উখিয়া থানায় নিয়ে যায়। লাঠিচার্জে আহত হয়েছেন প্রায় ১০ জন শিক্ষক। এদের মধ্যে গুরুতর আহত তিনজনকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেছেন, তারা শান্তিপূর্ণভাবে শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়েছিলেন, কিন্তু পুলিশ অকারণে বলপ্রয়োগ করেছে।

চাকরিচ্যুত শিক্ষক আবদুল করিম বলেন, “আমরা তিন মাস ধরে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছি। বারবার আলোচনার নামে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, কিন্তু সমাধান হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে সড়কে নেমেছি। পুলিশ কোনো কারণ ছাড়াই আমাদের মারধর করেছে।”

অন্যদিকে পুলিশের দাবি, আন্দোলনকারীরা সড়ক অবরোধ করে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি করায় তারা বাধ্য হয়েই ব্যবস্থা নিয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। ভিডিওতে দেখা যায়, এক নারী শিক্ষিকা আঞ্চলিক ভাষায় চিৎকার করে বলছেন, “এই মরি গিওই, মরি গিওই।”

এতে অনেকে ধারণা করেন, লাঠিচার্জে কেউ নিহত হয়েছেন। পরে জানা যায়, তিনি গুরুতর আহত হয়ে উখিয়া হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন এবং অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করেছে।
জেলা জামায়াতের আমীর ও উখিয়া-টেকনাফ আসনের সম্ভাব্য এমপি প্রার্থী অধ্যক্ষ নুর আহমদ আনোয়ারী এক বিবৃতিতে বলেন, “দমন-পীড়ন কোনো সমাধান নয়। আলোচনার মাধ্যমে শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবির সমাধান করতে হবে।”

তরুণ রাজনীতিবিদ ব্যারিস্টার সাফাত ফারদ্দিন চৌধুরী বলেন, “স্থানীয় হোস্ট কমিউনিটির শিক্ষকদের চলমান সমস্যা মধ্যস্থতায় শিক্ষক প্রতিনিধি, স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও এনজিওদের সঙ্গে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছিল। আমরা চাই এই বৈঠক অব্যাহত থাকুক, বৈঠকের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু সমাধান হোক।”

ছাত্রদল নেতা মাহবুব আহমেদ শাকিল তার ফেসবুকে লিখেছেন, “চেয়েছিল অধিকার, হয়ে গেল গ্রেফতার। জিনিয়া, উর্মি ও সাকিবসহ আটককৃতদের মুক্তি চাই।”

সাংবাদিক আজিম নিহাদ বলেন, “আন্দোলন করার অপরাধে একজন নারীকে তলপেটে লাথি মারা হয়েছে। এতে তিনি হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন। এ ধরনের অমানবিকতা মেনে নেওয়া যায় না।”

কক্সবাজারের সিনিয়র আইনজীবী আবদুল মন্নান বলেন, “রোহিঙ্গারা আমাদের পিঠে, চাকরি কেন অন্যের ঘরে? আমাকেও গ্রেপ্তার করা হোক।”

এনসিপি’র কেন্দ্রীয় নেতা এসএম সুজা উদ্দিন এক ফেসবুক বার্তায় বলেন, “উখিয়া কোনো আলাদা দেশ নয় যে এখানে আন্দোলন করা যাবে না। উখিয়ায় আন্দোলনরত শিক্ষকদের সাথে সংহতি জানাতে গিয়ে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের সংগঠক জিনিয়া শারমিন রিয়া ও তারেকুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। অনতিবিলম্বে সম্মানের সাথে তাদের মুক্তি দিতে হবে এবং প্রশাসনকে এর জবাবদিহি করতে হবে।”

এনজিও কর্মী সোহেল উদ্দিন লিখেছেন, “স্থানীয় শিক্ষকদের উপর অমানবিক আচরণ, পুলিশি নির্যাতন ও গণগ্রেপ্তার শুধু উখিয়া-টেকনাফ নয়, পুরো কক্সবাজারের জন্য অশনি সংকেত।”

শিল্পী সিয়াম এলাহী মন্তব্য করেছেন, “জিনিয়াকে যেভাবে টেনে হিঁচড়ে গ্রেফতার করা হয়েছে, তা নজিরবিহীন। স্থানীয়দের বাদ দিয়ে বহিরাগতদের চাকরিতে নিয়োগ দেওয়ার বিরুদ্ধে এই আন্দোলন যৌক্তিক।”

জাতীয় শিক্ষক ফোরাম এক লিখিত বিবৃতিতে জানায়, “শিক্ষকরা শান্তিপূর্ণভাবে চাকরিতে পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। সেখানে লাঠিচার্জ ও গ্রেপ্তার সরকারের ফ্যাসিস্ট আচরণেরই বহিঃপ্রকাশ। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই এবং দ্রুত যৌক্তিক সমাধান দাবি করি।”

প্রসঙ্গত, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইউনিসেফের অর্থায়নে পরিচালিত শিক্ষা প্রকল্পে স্থানীয় শিক্ষকরা কর্মরত ছিলেন। সম্প্রতি প্রকল্পের একাংশ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ১২ শতাধিক শিক্ষক চাকরিচ্যুত হয়েছেন। এরপর থেকে তারা পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। সোমবারও কোটবাজার এলাকায় সড়ক অবরোধ করে শিক্ষকেরা প্রায় ১০ ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ রাখেন।

সর্বশেষ উখিয়া-টেকনাফ সড়কে পুলিশ ও শিক্ষকদের মুখোমুখি অবস্থান পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে। এনসিপি’র কেন্দ্রীয় নেতা এসএম সুজা উদ্দিনের নেতৃত্বে চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের অভিভাবকরা বর্তমানে উখিয়া থানায় রয়েছেন। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। অন্যদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো কোনো লিখিত বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয় রাজনৈতিক মহল আশঙ্কা করছে, দমনপীড়নের কারণে পরিস্থিতি আরও অস্থির হয়ে উঠতে পারে।

পাঠকের মতামত

উখিয়ায় চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের আন্দোলন , গ্রেপ্তার-২৮, পরে মুক্তি

জুলাই বিপ্লবী জিনিয়াকে ছাত্রলীগ ট্যাগে আটক করে ছিলো উখিয়ার পুলিশ কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাকরিচ্যুত ...

উখিয়ায় চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের আন্দোলনে পুলিশের লাঠিচার্জ, আটক ২০, আহত ৩

কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের পুনর্বহালের দাবিতে করা আন্দোলনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর লাঠিচার্জের ঘটনা ঘটেছে। ...

উখিয়া-টেকনাফ সড়কে চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের আন্দোলনে উত্তেজনা, পুলিশের লাঠিচার্জ

উখিয়া-টেকনাফ সড়কে চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের আন্দোলনকে ঘিরে আজও উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সকাল থেকে আন্দোলনে যোগ ...

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হলেন ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ সহিদুজ্জামান

কক্সবাজার-০৩ (সদর-রামু-ঈদগাঁও) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ সহিদুজ্জামান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ...