

উখিয়া-টেকনাফের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন সমীকরণ তৈরি হয়েছে পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরীকে ঘিরে। টানা ১৫ বছর ধরে তিনবার নির্বাচিত এই জনপ্রিয় চেয়ারম্যান এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো না থাকলেও তার তীক্ষ্ণবুদ্ধি ও অভিজ্ঞতা নিয়ে ১৫ বছর ধরে কাটিয়ে আসার কারণেই এবং ৫ আগস্টের পর থেকে অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকায় আওয়ামী লীগ তাকে সমর্থন করার সম্ভাবনা বেশি বলে স্থানীয় অভিজ্ঞ মহল মনে করেন।দলটি নির্বাচনে না যাওয়ায় এবং অনেক শীর্ষ নেতা আত্মগোপনে থাকায় তিনি এবার নিজস্ব ব্যানারে ভোটে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
পালংখালী ইউনিয়নের সাধারণ মানুষের কাছে গফুর উদ্দিন চৌধুরী একজন কর্মঠ ও নির্লোভ জনপ্রতিনিধি হিসেবে পরিচিত। তার ইউনিয়নে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড ও সেবা কার্যক্রমের কারণে তাকে ঘিরে স্থানীয় পর্যায়ে জনআস্থা গড়ে উঠেছে। এই প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের বেশ কিছু প্রভাবশালী নেতা নীরবে তাকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে নামার পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার কারণ জানতে চাইলে গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন,সবাই দলীয়ভাবে নির্বাচন করলে জনগণের আসল কণ্ঠস্বর হারিয়ে যায়। আমি দলের জন্য নয়, জনগণের জন্য রাজনীতি করি। জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে, তাদের সেবা অব্যাহত রাখতে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছি।”
বিএনপি-জামায়াতের শক্ত অবস্থানের মধ্যে জয়ের সম্ভাবনা কতটা?—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “৫ আগস্টের পর বিএনপির নেতা-কর্মীরা কী করেছে তা সবাই জানে। আমি পর্যন্ত তাদের অত্যাচার থেকে রেহাই পাইনি। আমাকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে ঢাকায় আটক করে জেলে পাঠানো হয়েছিল। সেই কষ্ট আজও ভুলতে পারিনি। তাই তাদের সঙ্গে এক মঞ্চে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না।”
বিএনপির প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরীর প্রসঙ্গ উঠতেই তিনি বলেন, “শাহজাহান চৌধুরী নিঃসন্দেহে একজন ভালো মানুষ। আমি তাকে ব্যক্তিগতভাবে সম্মান করি। তবে সুযোগ পেলে আমি জানতে চাইবো—আমার অপরাধ কী ছিল? কেন আমাকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হলো? কেন জেলে পাঠানো হলো?”
তিনি আরও বলেন, “শাহজাহান চৌধুরী এবার প্রবল সম্ভাবনাময় প্রার্থী ছিলেন, কিন্তু তার পরিবারের কিছু কর্মকাণ্ডে সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ। মানুষ শান্তিতে থাকতে চায়।
আওয়ামী লীগের নেতারা শেষ সময়ে শাহজাহান চৌধুরীর পক্ষে চলে যেতে পারেন—এমন আশঙ্কা নিয়ে গফুর উদ্দিন চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, “আমি কবর পর্যন্ত তাদের দলে যাবো না। এখন আমি নিজেই প্রার্থী, অন্য দলে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।”
শেষে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ কখনও বিএনপি-জামায়াতকে ভোট দেবে না। তাই এই আসনে যদি আমি লড়ি, জয়ের সম্ভাবনা আমারই বেশি। জনগণই আমার আসল শক্তি।”
স্থানীয় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, উখিয়া-টেকনাফ আসনে গফুর উদ্দিন চৌধুরীর প্রার্থিতা ভোটের সমীকরণ পাল্টে দিতে পারে। কারণ, আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংকের একটি বড় অংশ ইতোমধ্যেই তার প্রতি সহানুভূতিশীল। ফলে শাহজাহান চৌধুরী (বিএনপি) ও নুর আহমদ আনোয়ারি (জামায়াত)-এর মধ্যে যে দ্বিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা যাচ্ছিল, সেখানে গফুর উদ্দিন চৌধুরীর আগমন এবার নির্বাচনী মাঠে ত্রিমুখী উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।
 
 
 
 
 
 
 
পাঠকের মতামত