
গত ১৪ মার্চ জাতিসংঘ মহাসচিব কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে শরণার্থীদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এর পর পাঁচ মাস কেটে গেছে, কিন্তু অবস্থার কোনো পরিবর্তন ঘটেনি।
এ জন্য মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। উল্টো এই পাঁচ মাসে নতুন করে অনেক রোহিঙ্গা নাগরিককে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দিয়েছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার।
এ জন্য মিয়ারমারের ওপর আন্তর্জাতিকভাবে চাপ প্রয়োগ করা সম্ভব হয়নি। ফলে এই প্রক্রিয়া এখন ঝুলে গেছে।
অর্থ বিভাগ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে গত ১৪ মার্চ কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
সে সময় তিনি জানান, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যেতে চায়। ক্যাম্পেও ভালো পরিবেশ চায় তারা।
এ দুটি বার্তা তিনি বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিয়ে প্রত্যাবসন প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করার জন্য মিয়ানমারসহ সংশ্লিষ্ট দেশ ও সংস্থাগুলোকে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহায়তার আশ্বাস দেন।
সে সময় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, খুব দ্রুত শুরু হবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবসন প্রক্রিয়া। এ জন্য মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু অগ্রগতি হয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, মিয়ানমার সরকার সহযোগিতা করছে না।
এদিকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরকারের খরচ বাড়ছে। এই খরচ সামলাতে না পেরে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর ও বিশ্বব্যাংককে সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে সরকার। বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার অগ্রগতি জানতে চাওয়া হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়াতে হবে। আমরা সে চেষ্টা করে যাচ্ছি। এখানে আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন জরুরি। কিন্তু সেই সহযোগিতা আমরা পাচ্ছি না।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি ঢাকা সফরের সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
সে সময় রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন, রোহিঙ্গাদের কারণে সৃষ্ট নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সমস্যা, বিভিন্ন দেশে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন কার্যক্রম, যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা ইউএস-এইডের আর্থিক সহায়তা বন্ধের ফলে উদ্ভূত সমস্যা মোকাবিলা, রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে পুনর্বাসনসহ সামগ্রিক বিষয়ে বিশ্ববাসীর সহযোগিতার কথা জানান তিনি।
গ্র্যান্ডি বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসাও করেন রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য। প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। পাঁচ মাসের বেশি কেটে গেলেও তার আশ্বাস শুধু আশ্বাসই রয়ে গেছে।
বাংলাদেশে আশ্রিত প্রায় ১৫ লাখ রোহিঙ্গা এবং তাদের আশ্রয়দাতা স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে চলতি বছর সহায়তা দেওয়ার জন্য উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে প্রায় ১০০ কোটি ডলারের তহবিল চেয়েছে জাতিসংঘ গত ২৪ মার্চ এক বিবৃতিতে। সেই আহ্বানেরও ইতিবাচক সাড়া মেলেনি।
বিবৃতিতে জানানো হয়, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় জাতিসংঘ এবং শতাধিক অংশীদার মিলে দুই বছর মেয়াদি ‘২০২৫-২০২৬ যৌথ সাড়াদান পরিকল্পনা (জেআরপি)’ শুরু করেছে। এমন একটি সময়ে এই পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, যখন রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তার অর্থ ক্রমশ কমছে।
রোহিঙ্গা শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিয়ে এখনও অগ্রগতি হয়নি। আমরা মিয়ানমারসহ সংশ্লিষ্ট দেশ ও সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।
জানা গেছে, আশ্রিত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত না পাঠিয়ে তৃতীয় কোনো নিরাপদ অঞ্চলে স্থানান্তরের পক্ষে মত দিয়েছিল জাতিসংঘ ও ইউএনএইচসিআর। সমস্যার স্থায়ী সমাধানে জোর দিয়েছিল জাতিসংঘের ইউএনএইচসিআর। এ প্রস্তাবের সঙ্গে একমত পোষণ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র সরকারও।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সে মোতাবেক পরিকল্পনা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসন। এমনকি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) সভায় একই রকম পরামর্শ উঠে এসেছিল চলতি বছরের শুরুতে। এসব প্রস্তাবের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া এখন অনেক দূরে।
পাঠকের মতামত