
চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থেকে কক্সবাজার আসার পথে অপহৃত তরুণ রিয়াজুল হাসানকে (১৮) ধারাবাহিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে। যে নির্যাতনের আর্তনাদের শব্দ মুঠোফোনে শোনানো হচ্ছে বাবা। আর বারবার বলা হচ্ছে মুক্তিপণের টাকা না দিলে যে কোনো সময় হত্যার হুমকি।
অথচ সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক বাবা ফেরদৌস আলমের পক্ষে মুক্তিপণের টাকা পরিশোধ করার সামর্থ্য নেই। তাই বারবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আকুতি জানাচ্ছে অপহৃত ছেলে উদ্ধারের জন্য। যদিও পুলিশ ইতোমধ্যে নানা প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখলেও অপহৃতকে ৫ দিনেও উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
রিয়াজুল হাসান চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থানার চরম্বা ইউনিয়নের চরম্বা পদ্মশিখিলের বাসিন্দা ফেরদৌস আলমের ছেলে।
গত মঙ্গলবার ১৭ জুন দুপুরের দিকে বাড়ি থেকে বের হয়ে কক্সবাজার যাওয়ার পথে সে অপহরণের শিকার হয় বলে জানিয়েছেন বাবা ফেরদৌস আলম।
তিনি জানান, গত রোজার ঈদের আগে ছেলে বাবা ফেরদৌস আলমের সঙ্গে রাগ করে বাড়ি থেকে বের হয়ে কক্সবাজারে একটি দোকানে চাকরি করে। গত কোরবানির ঈদের আগের দিন বাড়িতে আসে। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার (১৭ জুন) দুইটার দিকে লোহাগাড়া থেকে কক্সবাজার যাওয়ার পথিমধ্যে সে নিখোঁজ হয়। নিখোঁজ থাকা কিশোরের ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বার-০১৮৭০-৪৯৫১৩৬ এ ফোন করলে অপরিচিত এক ব্যক্তি মুঠোফোনটি রিসিভ করে ছেলেকে জীবিত পাওয়ার ইচ্ছা থাকলে পাঁচ লাখ টাকা বিকাশ নম্বরে পাঠানোর জন্য হুমকি দেয়। অন্যথায় ছেলের লাশ গ্রহণের জন্য প্রস্তুত থাকতে হুমকি দেয়। পরে স্থানীয় থানায় একটি সাধারণ ডায়রি লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করে অপহৃত বা নিখোঁজ থাকা কিশোরের বর্তমান অবস্থান টেকনাফ থানাধীন হ্নীলা এলাকায় পরিলক্ষিত হয়।
ফেরদৌস আলম বলেন, এরপর থেকে আমার ছেলেকে ব্যাপকহারে মারধর করা হচ্ছ। ছেলেকে মারধরের আর্তনাদ ফোনে শোনানো হচ্ছে। অপহরণকারীরা এখন ১ লাখ টাকা দিলে ছেড়ে দেবে বলে জানাচ্ছে। কিন্তু আমার ওই সামর্থ্য নাই। পুলিশসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে বারবার যাচ্ছি। কিন্তু ছেলে উদ্ধার করা যাচ্ছে না। আমার ছেলেকে বাঁচান। যেকোনো মূহুর্তে ছেলেকে হত্যা করা হবে।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) হিমেল রায় বলেন, ‘লোহাগাড়া থেকে কক্সবাজার আসার পথে অপহৃত কিশোরকে উদ্ধারে পুলিশ তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারে এখন ফোন নম্বরটি সবশেষ অবস্থান পাওয়া যাচ্ছে নারায়ানগঞ্জে। পুলিশ এই বিষয়ে কাজ করছে।’
এব্যাপারে লোহাগাড়া থানার ওসি আরিফুর রহমান বলেন, ‘অপহৃত ছেলেটি কক্সবাজার এলাকায় চাকরি করতো। সংবাদ পেয়ে থানায় জিডি করা হয়েছে। তাৎক্ষণিক তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় তার অবস্থান টেকনাফ থানাধীন হ্নীলায় এলাকায় শনাক্ত হওয়ায় উদ্ধারে সহায়তা করার জন্য টেকনাফ থানার ওসি বরাবর বার্তা প্রেরণ করেছি। উদ্ধার তৎপরতা অব্যাহত রেখেছি।’
কক্সবাজার জেলা পুলিশ ও ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের তথ্য বলছে, এ নিয়ে গত সাড়ে ১৭ মাসে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ২৫৪ জনকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে।
পাঠকের মতামত