ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ০৫/১১/২০২৪ ৩:৫৮ পিএম

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ এখনও ঠিক না হলেও বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ প্রায় সব রাজনৈতিক দলই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। যৌক্তিক সময়ে নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে ইতোমধ্যে তাগিদ দিয়েছে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি। এর পাশাপাশি নির্বাচনী প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সারা দেশে বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় সক্রিয় হয়ে উঠেছেন বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা। দলটির লিয়াজোঁ কমিটি এরই মধ্যে তাদের নেতৃত্বে পরিচালিত যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক শুরু করেছে। সেখানেও অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি নির্বাচন সম্পর্কিত আলোচনাই মুখ্য হয়ে ওঠে। এর মধ্যেই বিএনপি প্রথমে দেশের ছয়টি এলাকায় এবং পরে সব জেলায় আলাদা চিঠি দিয়ে সমমনা দলের শীর্ষ নেতাদের সাংগঠনিক কার্যক্রমে সহযোগিতা করার নির্দেশনা দিয়েছে।

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী এবার এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। এ লক্ষ্যে সারা দেশেই নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে সরব রয়েছে তারা। দলটির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা এককভাবে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার প্রাথমিক কাজ শুরু করেছেন। এ ছাড়া যেসব নির্বাচনী আসনে ভালো করতে পারবে, সেসব আসনে প্রার্থী ঘোষণাও দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে জোটগতভাবে নির্বাচনে যাওয়ার জন্য বাকি ইসলামী দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনা অব্যাহত রেখেছে জামায়াতে ইসলামী।

৫ আগস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পর যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়, সেই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দুটি সংলাপে রাষ্ট্র সংস্কারের নানা প্রস্তাব দিলেও আগামী নির্বাচনের রোডম্যাপ চেয়েছে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো। রাজনৈতিক দলগুলোর চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে নির্বাচন সরকারের এক নম্বর অগ্রাধিকার। তবু ত্রয়োদশ নির্বাচনের নির্দিষ্ট দিনক্ষণ এখন পর্যন্ত ঘোষণা করা হয়নি।

Google News গুগল নিউজে প্রতিদিনের বাংলাদেশ”র খবর পড়তে ফলো করুন

তবে প্রথমে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ও পরে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল আগামী নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে কথা বলেছেন। ওয়াকার-উজ-জামান গত ২৪ সেপ্টেম্বর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার সম্পন্ন করে ১৮ মাস বা দেড় বছরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারকে পূর্ণ সহায়তার কথা বলেছেন। এরপর গত ১৭ অক্টোবর চ্যানেল আইয়ের ‘আজকের পত্রিকা’ অনুষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়, আগামী বছরের মধ্যে নির্বাচন করাটা হয়তো সম্ভব হতে পারে। অনেক ফ্যাক্টর রয়েছে। এটা প্রাইমারি অ্যাজাম্পশন (প্রাথমিক অনুমান)।’ এর আগে তিনিই গত ২৯ অক্টোবর নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠনের জন্য অনুসন্ধান বা সার্চ কমিটি গঠনের আগাম খবর দিয়ে বলেন, এর মধ্য দিয়ে দেশে নির্বাচনী অভিযাত্রা শুরু হয়ে গেছে।

বিএনপির নির্বাচনী প্রস্তুতি

৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর সমমনা দলগুলোকে নিয়ে নির্বাচনে যেতে ব্যাপক সরব হয়ে উঠেছে বিএনপি। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সংলাপে নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজ শেষ করে নির্বাচনী রোডম্যাপ দ্রুত দেওয়ার দাবি করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ ছাড়া সারা দেশে নির্বাচনী এলাকাগুলোয় সক্রিয় হয়ে উঠেছেন আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা। তারা জনসংযোগের পাশাপাশি সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোতে যোগ দেওয়া এবং নিজ নিজ এলাকায় দলের প্রতিটি ইউনিটকে পুনর্গঠন করে সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করার কাজ করছেন। নেতারা জানিয়েছেন, এর মূল উদ্দেশ্য হলো আগামী নির্বাচনের জন্য দল ও নিজের অবস্থান সুসংহত করে রাখা।

বিএনপির নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের দলের সার্বিক নির্বাচনী প্রস্তুতিতে এবার মূলত প্রাধান্য পাবে ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নেওয়া দলীয় প্রার্থী, বিশেষ করে বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল ও শ্রমিক দল এবং অঙ্গসংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও কৃষক দল থেকে উঠে আসা তরুণ নেতারা। এ ছাড়া দলের সাবেক এমপিদের মধ্যে যারা আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন তারাও নির্বাচনের জন্য দলের বিবেচনায় থাকার ইঙ্গিত পেয়েছেন। সে কারণে নির্বাচনী এলাকাগুলো চষে বেড়াতে শুরু করেছেন তারা।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ভবিষ্যতের জন্য দলীয় হাইকমান্ড প্রাধান্য দিচ্ছেন তাদেরÑ যারা নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে রাজপথে সক্রিয় ছিলেন।

তিনি বলেন, এখন নেতাকর্মীদের বলা হয়েছে তৃণমূল কর্মীদের পাশে দাঁড়াতে। তাদের সমস্যা দেখতে এবং জনগণের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ তৈরি করতে। দল দেখছে কারা দুঃসময়ে কাজ করেছে। অবশ্যই নির্বাচনের জন্য আত্মত্যাগ, ষোল বছরের ভূমিকা, জনপ্রিয়তা, সাংগঠনিক দক্ষতাÑ এসব বিষয় বিবেচনায় আসবে।

কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক এমপিরা এখন নিজ নিজ এলাকায় কাজ করলেও গত দশ বছরে যারা সক্রিয় ছিলেন না তারা এই নির্বাচনে কতটা বিবেচনায় আসবেন তা নিয়ে দলের মধ্যে আলোচনা আছে। তবে যারা যৌক্তিক কারণে নিষ্ক্রিয় ছিলেন তারা বিবেচনায় আসবেন কি না, সেটা দল আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।

অন্যদিকে বিএনপির তিন সহযোগী সংগঠন যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল সারা দেশে যৌথভাবে প্রতিটি জেলায় যৌথ কর্মিসভা করছে। বিএনপির নেতারা বলছেন, এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছেÑ ভবিষ্যৎ নির্বাচন সামনে রেখে তারেক রহমানের নির্দেশনা প্রতিটি জেলায় পৌঁছে দেওয়া। তিনটি সংগঠনের শীর্ষ নেতারা জেলা পর্যায় সফর করে এসব সমাবেশ সমন্বয় করছেন। এর ফলে মাঠপর্যায়ে তরুণ নেতা-কর্মীরা তাদের করণীয় সম্পর্কে বার্তা পাচ্ছেন বলে মনে করছেন দলের নেতারা।

বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘নির্বাচনমুখী দল হিসেবে বিএনপির নির্বাচনের প্রস্তুতি সব সময় ছিল এবং এটি থাকেও। তবে সময়ে সময়ে এর নানাদিক আপডেট হয় কিংবা কিছু পরিবর্তন হয়। এখন সেগুলো আমরা করছি।’

চলছে সংগঠন দৃঢ় করার কাজ

নির্বাচনকে গুরুত্ব দিয়ে সংগঠনকে তৃণমূলে গড়ে তোলার প্রস্তুতিও নিচ্ছে বিএনপি। মূলত ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে ক্ষমতা হারানোর পর থেকেই দেশজুড়ে বিএনপির বেশিরভাগ কমিটি হয়েছে ঢাকা থেকে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর থেকে দলের নেতারা মামলা ও হামলাসহ নানা কারণে এলাকায় অনিয়মিত ছিলেন কিংবা থাকতে পারেননি। এ কারণে ৫ আগস্টে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিএনপির অনুকূলে আসার পর থেকেই দেশজুড়ে কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেছে দলটির হাইকমান্ড।

এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘শেখ হাসিনার রেজিমে আমরা কোনো এলাকায় সাংগঠনিক তৎপরতা চালাতে পারিনি। এখন প্রতিটি এলাকায় প্রতিটি ইউনিটিকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড জোরদার করা হচ্ছে। এর মাধ্যমেই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হবে দল।’

শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতি পরবর্তী সময়ে নেতাকর্মীরা যেন দলের নাম ব্যবহার করে কোনো অন্যায় কাজ করতে না পারে, সেদিকেও লক্ষ রাখছে বিএনপি।

সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন

অন্যদিকে ভোটের বাজারে গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার দিকেও নজর দিয়েছে বিএনপি। দলটির নেতারা জানিয়েছেন, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর সারা দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা-লুটতরাজের অভিযোগ ওঠে। এ কারণে তাদের রক্ষায় দলীয় নেতাকর্মীরা সংখ্যালঘুদের মন্দির ও বাড়িঘর দিয়েছে। দুর্গাপূজা উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের সহায়তা ও মতবিনিময়ের আয়োজন করেছে বিএনপি।

বিএনপি সম্প্রতি চট্টগ্রাম নগরের নিউমার্কেট মোড়ে অবস্থিত স্বাধীনতা স্তম্ভে জাতীয় পতাকার অবমাননার অভিযোগে সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীসহ (৩৮) ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার বাদী বিএনপি নেতা ফিরোজ খানকে গত শুক্রবার দল থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। তিনি নগরের চান্দগাঁও থানার মোহরা ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক।

সমমনা দলগুলোর নেতাদের সবুজ সংকেত

অন্যদিকে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর যারা শীর্ষ নেতা রয়েছেন তাদের সহায়তার জন্য গত ২২ অক্টোবর দলের কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের দলীয় নেতাদের চিঠি দিয়ে পরামর্শ দিয়েছে বিএনপি। এই ছয় নেতা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলনে সক্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন উল্লেখ করে চিঠিতে তাদের নির্বাচনী এলাকায় জনসংযোগসহ সাংগঠনিক কার্যক্রমে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য স্থানীয় নেতাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে এই নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট সংসদীয় এলাকার থানা, উপজেলা বা পৌরসভায় বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের অবহিত করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতে বলা হয়। বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরে এই চিঠি দেওয়া হয়।

এই ছয় নেতা হলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, গণঅধিকার পরিষদের (একাংশ) সভাপতি নুরুল হক ও সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান ও ১২-দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা।

উল্লেখ্য, আ স ম রব লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি-কমলনগর), মাহমুদুর রহমান মান্না বগুড়া-৪ (শিবগঞ্জ), জোনায়েদ সাকি (ঢাকা-১২ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬), নুরুল হক পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা), রাশেদ খান ঝিনাইদহ-২ (সদর ও হরিণাকুণ্ডু), এহসানুল হুদা কিশোরগঞ্জ-৫ (নিকলী-বাজিতপুর) আসনে নির্বাচন করতে চান।

তবে এই চিঠি নিয়ে বিএনপির ভেতরে-বাইরে মিশ্র প্রতিক্রিয়াও দেখা দেয়। এ কারণে দলটির কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে সব জেলায় আরেকটি চিঠি পাঠানো হয়। এতে বিগত আওয়ামী শাসনামলে যুগপৎ আন্দোলনে যেসব সমমনা রাজনৈতিক দল সংগ্রামী ভূমিকা পালন করেছে, সেসব দলের শীর্ষ নেতারা তাদের নিজ আসনে নির্বিঘ্নে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেন, সেজন্য সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ নির্দেশনা নিয়েও মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে।

এ বিষয়ে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন, নির্বাচনে জিতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে আন্দোলনে যেসব দল ছিল তাদের সঙ্গে নিয়ে অর্থাৎ জাতীয় সরকার করে দেশ পরিচালনা করা হবে। ফলে নির্বাচনী প্রস্তুতিতেও এ বিষয়টিও নিঃসন্দেহে বিবেচনায় রাখা হচ্ছে।’

প্রসঙ্গত, বিএনপি শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত চলতি বছরের জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি। এর আগে ২০১৮ সালে দলটি অংশ নিয়েছিল ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জোটের অংশ হয়ে। ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করেছিল দলটি।

জামায়াত প্রার্থী ঘোষণা করছে

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ঢাকাসহ সারা দেশে নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে সরব রয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা এসব কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে যেসব নির্বাচনী আসনে তাদের অবস্থান ভালো, সেসব স্থানে প্রার্থীও ঘোষণা শুরু করেছে। জামায়াত এরই মধ্যে নির্বাচন ও সংস্কার কর্মসূচির রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে। আগামী নির্বাচন সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের (পিআর) পদ্ধতিতে করার দাবি জানিয়ে সংস্কার প্রস্তাব উত্থাপন করেছে দলটি। এককভাবে তিনশ আসনে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি বাকি ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে জোট করে নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতিও রাখছে দলটি।

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার জানান, আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে তাদের। এজন্য সারা দেশে প্রার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন তারা। তবে যেকোনো দলের সঙ্গে জোট করতেও প্রস্তুত রয়েছেন তারা।

তিনি বলেন, ‘নির্বাচন সামনে রেখে আমাদের এ সংক্রান্ত কমিটিগুলোর বৈঠক শুরু হয়েছে। জেলাগুলোকে আমরা প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিচ্ছি। আমাদের প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া, আগে যারা প্রার্থী ছিলেন অনেকে ইন্তেকাল করেছেন। সেখানে নতুন প্রার্থী যোগ-বিয়োগ, এসব প্রক্রিয়া আমরা শুরু করছি। সারা দেশে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি ইনশাআল্লাহ আমাদের আছে।’

উল্লেখ্য, কক্সবাজারের চকরিয়ায় গত শুক্রবার এক সমাবেশে কক্সবাজার শহর জামায়াতের আমির আবদুল্লাহ আল ফারুককে চকরিয়া-পেকুয়া আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেন সংগঠনটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান।

জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তরের নবনির্বাচিত আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন আগামী নির্বাচনে সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ) আসনে জামায়াতের পক্ষ থেকে নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করেন। বিয়ানীবাজার পৌর শহরের অভিজাত রেস্টুরেন্টের হলরুমে এক মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, ‘বিজয়ী হলে বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জকে একটি আধুনিক-আদর্শ জনপদ হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করব।’

অন্যদিকে নির্বাচন সামনে রেখে সমমনা ইসলামী দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনা করছে জামায়াত। এ প্রসঙ্গে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘দেশ গঠনের জন্য যেকোনো দল বা জোটের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হতে রাজি আছি। এজন্য জামায়াতে ইসলামী সব দলের সঙ্গে পৃথক ও সম্মিলিতভাবে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা আমাদের মতামত দিচ্ছি ওনারা ওনাদের মতামত দিচ্ছেন। প্রত্যেকের মধ্যেই আন্তরিকতা ও সহযোগিতা লক্ষ করা যাচ্ছে।’

এ বিষয়ে খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলনসহ সমমনা ইসলামী দলগুলো একটি ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম তৈরি করার জন্য নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করছে। প্রাথমিকভাবে সব দলই এ ধরনের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে অভিমত দিয়েছে। সামনে আরও আলোচনা হবে। ঐক্যের স্বার্থে প্রাথমিকভাবে আমরা সবাই একমত হয়েছি যে, কোনো দলের বিপক্ষে আমরা কিছু বলব না।

ঐক্য হলে নির্বাচন কীভাবে হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ নিয়েও আমরা আলোচনা করেছি। একক প্রতীকেও নির্বাচন করতে পারি, আবার যার যার প্রতীকেও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারি। যে আসনে যিনি মনোনয়ন পাবেন, সেই আসনে সেই প্রার্থীর প্রতীক হবে আমাদের জোটের প্রতীক।

তিনি বলেন, এগুলো প্রাথমিক আলোচনা। নির্বাচন যত কাছে আসবে, আমাদের আলোচনা আরও পরিণত রূপ পাবে।

পাঠকের মতামত

এস আলম গ্রুপের কারসাজি ইসলামী ব্যাংকে ৪ হাজার কোটি জামানত রেখে ৭৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ

নিয়ন্ত্রণ হাতে নিয়ে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ থেকে এস আলম গ্রুপ ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ...