প্রকাশিত: ২৮/০৬/২০২১ ৮:৪১ পিএম

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে যাতায়াত নিয়ন্ত্রণে কড়াকড়ি অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আজ সোমবার সকাল ছয়টা থেকে শিবিরগুলোতে প্রবেশের প্রধান ফটকগুলোতে পাহারা বসিয়েছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)। শিবিরের অভ্যন্তরে কয়েক হাজার দোকানপাট, হাটবাজার বন্ধ রাখা হয়েছে। বিভিন্ন অলিগলি, সড়কে রোহিঙ্গাদের সমাগম ও আড্ডা বন্ধ করতে তৎপরতা চালাচ্ছে পুলিশ। স্বাস্থ্য, খাদ্য, পানি ও স্যানিটেশনের মতো জরুরি পরিষেবা ছাড়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক সেবার অন্য সব কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা বলেন, মাঝে রোহিঙ্গাদের মধ্যে করোনা সংক্রমণ বেড়ে গিয়েছিল। গত মে মাসে উখিয়া ও টেকনাফের ৫টি শিবিরে লকডাউন এবং অপর ২৯টি শিবিরে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। এর ফলে সংক্রমণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। এখন লকডাউন, শাটডাউন না থাকলেও আজ সকাল থেকে সব রোহিঙ্গা শিবিরে কড়াকড়িভাবে বিধিনিষেধ কার্যকর শুরু হচ্ছে। বিধিনিষেধ চলাকালীন জরুরি সেবা কার্যক্রম ছাড়া অন্য সব কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। বিধিনিষেধ মেনে চলতে সেবা কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত দেশি-বিদেশি সব সংস্থাকে ইতিমধ্যে লিখিতভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে অন্তত আট লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এর আগে পালিয়ে আসে আরও কয়েক লাখ। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১১ লাখ।আগের লকডাউনের সময় রোহিঙ্গারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে উখিয়া ও টেকনাফে যাতায়াত করেছিল। এখন বিধিনিষেধ অনেক কড়াকড়ি হচ্ছে। রোহিঙ্গারা ঘর থেকে বেরোতে পারছে না।

ক্যাম্পের ভেতরে-বাইরে যাতায়াত বন্ধ
কোনো রোহিঙ্গা শরণার্থী যাতে ক্যাম্প ছেড়ে বাইরে (উখিয়া ও টেকনাফ) যেতে না পারেন এবং বাইরের কেউ যেন ক্যাম্পের ভেতরে ঢুকতে না পারেন, সে জন্য পাহারা বসানো হয়েছে। সকাল থেকে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কেও যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণে কঠোর দেখা গেছে ট্রাফিক পুলিশকে। উখিয়া ও টেকনাফ সড়কে রিকশা, ইজিবাইক (টমটম) ছাড়া অন্য কোনো যানবাহনের চলাচল দেখা যায়নি। উখিয়া ও টেকনাফের অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ আছে। শরণার্থীশিবিরগুলোর পার্শ্ববর্তী হাটবাজারও বন্ধ রাখা হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) এস এম রাকিবুর রাজা বলেন, রিকশা ছাড়া সড়কে অন্য কোনো যানবাহন চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না। তবে কিছু কিছু এলাকায় পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে ইজিবাইক (টমটম) চলাচলের খবর পাওয়া যাচ্ছে। এগুলোও বন্ধ করা হবে।উখিয়ার কুতুপালং বাজার থেকে পশ্চিম দিকে কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবির। শিবিরের প্রবেশপথে পাহারা বসিয়েছে এপিবিএন। কেউ ভেতরে ঢুকতে চাইলে পুলিশ কারণ জানতে চায় আর গ্রহণযোগ্য কারণ না হলে ফিরিয়ে দিচ্ছে। উখিয়ার বালুখালী, জুমশিয়া, মধুরছড়া, লম্বাশিয়া শিবিরে প্রবেশের পাঁচ-ছয়টি অংশেও পুলিশের পাহারা দেখা গেছে। টেকনাফের নয়াপাড়া, জাদিমুরা, মুছনী, শালবন ক্যাম্পের প্রবেশপথেও একাধিক তল্লাশিচৌকি বসিয়েছে পুলিশ। বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে সেখানে লোকজনের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।

রোহিঙ্গা শিবিরে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ১৪ এপিবিএন ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক ও পুলিশ সুপার নাইমুল হক বলেন, রোহিঙ্গা শিবিরে প্রবেশের প্রতিটি ফটকে পুলিশের পাহারায় সকাল থেকে অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যত্রতত্র লোকসমাগম যেন না ঘটে, সে ব্যাপারে ক্যাম্পের অভ্যন্তরে পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে।
কুতুপালং ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা জালাল আহমদ বলেন, আগের লকডাউনের সময় রোহিঙ্গারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে উখিয়া ও টেকনাফে যাতায়াত করেছিল। এখন বিধিনিষেধ অনেক কড়াকড়ি হচ্ছে। রোহিঙ্গারা ঘর থেকে বেরোতে পারছে না। তবে পাহাড়ের ঢালুতে বসবাস করা রোহিঙ্গা শরণার্থীরা স্বাস্থ্যবিধি তেমন মানছে না।

কুতুপালং, মধুরছড়া, লম্বাশিয়া, বালুখালী আশ্রয়শিবিরের ভেতরে যাতায়াতের রাস্তা নেই, এমন স্থানগুলোতে লোকজনের সমাগম রয়ে গেছে। অধিকাংশ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশুর মুখে মাস্ক নেই। কেউ মানছে না সামাজিক দূরত্বও। তবে শিবিরের ভেতরের সড়কগুলোতে আগের মতো লোকসমাগম নেই

করোনায় এ পর্যন্ত রোহিঙ্গা মৃত্যুর সংখ্যা ২১

কক্সবাজার জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, গতকাল রোববার পর্যন্ত কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে ৬৬ হাজার ৮৪৩ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীর নমুনা পরীক্ষা করে ১ হাজার ৭১৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের গড় হার ২ দশমিক ৫৬। এ পর্যন্ত করোনায় রোহিঙ্গা শরণার্থী মারা গেছেন ২১ জন।

বিপরীতে এ পর্যন্ত কক্সবাজারের স্থানীয় লোকজনের মধ্যে ৯৯ হাজার ১১২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১০ হাজার ৩৩৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের গড় হার ১০ দশমিক ৪৩। স্থানীয় লোকজনের মধ্যে করোনায় এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১১৬ জন।

সর্বশেষ গতকাল জেলায় ৪৭০ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৮২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে রোহিঙ্গা শরণার্থী ৯ জন। বিষয়টি নিশ্চিত করে সিভিল সার্জন মাহবুবুর রহমান বলেন, শহরের পাশাপাশি এখন গ্রামাঞ্চলেও করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলায় এমনটা হচ্ছে। এখন রোহিঙ্গা শিবিরের পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন উপজেলায়ও বিধিনিষেধ কঠোরভাবে পালনের চেষ্টা চলছে। সুত্র:প্রথম আলো

পাঠকের মতামত

ডালিম বড়ুয়া ও তার স্ত্রী তান্নি বড়ুয়া’র বিরুদ্ধে ঘুমধুমের অসহায় পরিবার’কে হয়রানি’র অভিযোগ

বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে ঘুমধুমে বিএনপি, জামায়াত সহ অনেক নিরীহ পরিবারকে মামলা দিয়ে হয়রানির অহরহ ...

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছুরিকাঘাতে ঢাবি শিক্ষার্থী নিহত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। নিহত শিক্ষার্থীর নাম শাহরিয়ার আলম ...