ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ২৮/০৩/২০২৪ ১০:০১ এএম

আব্দুল কুদ্দুস,প্রথমআলো
রোববার বিকেল চারটা। কক্সবাজারের উখিয়ার প্রধান সড়ক থেকে বালুখালী আশ্রয়শিবিরে ঢোকার রাস্তায় দেখা গেল ১০-১৫টি দোকানে প্রস্তুত হচ্ছে ছোলা, পেঁয়াজু, জিলাপি, বেগুনি, শিঙাড়া-সমুচা, আলুর চপসহ বিভিন্ন প্রকারের ইফতারসামগ্রী।

নারী-পুরুষেরা দোকানে এসে ইফতারসামগ্রী কিনে ঘরে ফিরছেন। কেউ দোকানের সামনে, কেউ ঘরের মেঝেতে গোল হয়ে বসে টমেটো, শসা, কাঁচা মরিচ কাটাকুটি করছেন। এর সঙ্গে একটু আচার আর শর্ষের তেল দিয়ে মাখা হবে মুড়ি। মাগরিবের আজান পড়লেই বিসমিল্লাহ বলে শুরু হবে ইফতার। তবে বেশির ভাগ রোহিঙ্গার ইফতার চলে মসজিদে।

উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে ছোট-বড় মিলিয়ে মসজিদ রয়েছে প্রায় তিন হাজার। আর সেখানে রোহিঙ্গা রয়েছে প্রায় সাড়ে ১২ লাখ। ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর অভিযানের মুখে ঘরবাড়ি ছেড়ে প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। অন্য রোহিঙ্গারা আগে থেকেই বাংলাদেশে ছিল। তারাও নিজেদের জীবনটা হাতের মুঠোয় নিয়ে বিভিন্ন সময় এ দেশে এসেছে। কিন্তু এই দীর্ঘ সময় একজন রোহিঙ্গাকেও নিজ দেশে ফেরত পাঠানো যায়নি।

আশ্রয়শিবিরে শতভাগ লোক মুসলিম। ১২ বছরের শিশু থেকে ৮০ বছরের বৃদ্ধরাও রোজা রাখছেন।

বালুখালী আশ্রয়শিবির এলাকার সড়কের পাশে দোকানে জিলাপি তৈরি করছিলেন সলিম উল্লাহ। জিলাপি কেনার জন্য কিছুটা দূরে অপেক্ষায় কয়েকজন। প্রতি কেজি জিলাপির দাম ২৮০ টাকা। কেউ দুই পিস, কেউ চার পিস করে জিলাপি কিনছেন।

৩৩ বছর বয়সী সলিম উল্লাহ বললেন, নানা পদের খাবার দিয়ে ইফতার করা রোহিঙ্গাদের ঐতিহ্য। আশপাশের লোকজনকে ডেকে এনে খাওয়ানোকে সওয়াবের কাজ মনে করেন তাঁরা। কিন্তু চার-পাঁচ বছর ধরে সাহ্‌রি ও ইফতার ঠিকমতো করতে পারছেন না। কারণ, তাঁরা নিজ দেশে নেই। আর শরণার্থীজীবনে রয়েছে প্রবল অর্থসংকট।

এখানকার আরেকটি দোকানের মালিক নবী হোসেন। তাঁর দোকানে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজু, বেগুনি, শিঙাড়া। একটি পেঁয়াজু এক টাকা, এক চামচ ছোলা ১০ টাকা, একটি বেগুনি পাঁচ টাকা ও একটি আলুর চপ পাঁচ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রোজার শুরুর দিকে দিনে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকার ইফতারসামগ্রী বিক্রি হতো, এখন রমজানের মাঝামাঝি এসে পাঁচ-ছয় হাজার টাকার বেশি হচ্ছে না। তাঁর কথা, রোহিঙ্গাদের হাতে টাকা নেই।

একটি মসজিদের ইমাম সাইফুল ইসলাম বললেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে থাকতে যে রোহিঙ্গা গৃহকর্তা শত শত মানুষকে ইফতার করাতেন, আশ্রয়শিবিরে এসে সেই মানুষ অন্যের দেওয়া ইফতারি খেতে মসজিদে আসছেন। আশ্রয়শিবিরে চাল, ডাল, তেলসহ সবকিছু ফ্রি পাওয়া গেলেও ইফতারসামগ্রী তৈরির জন্য আলাদা করে কোনো বাজেট নেই।

টেকনাফের শালবাগান আশ্রয়শিবিরে প্রায় ৪৫ হাজার রোহিঙ্গার বাস। সেখানে যাতায়াতের ইটের রাস্তার দুই পাশেও রয়েছে ইফতারসামগ্রী তৈরির বেশ কিছু দোকান। বিক্রি হচ্ছে ছোলা, মুড়ি, তরমুজ, জিলাপি, পেঁয়াজু, নুডলস ও শরবত।

এখানকার একটি দোকানের মালিক আলী আহমেদ বললেন, রাখাইন রাজ্যের গজরবিলে তাঁর চিংড়ির খামার ছিল, বছরে যা আয় হতো তা বাংলাদেশি টাকার ১০-১২ লাখ টাকার কাছাকাছি। ছিল কাঠের দুই তলা বাড়ি। এখন তাঁকে এই শালবন পাহাড়ের ঝুপড়িতে থাকতে হচ্ছে। আসার সময় মা-বাবা, ছেলে-মেয়েসহ পরিবারের সদস্য ছিল ১১ জন। এখন সদস্যসংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৭। আলী আহমদ জানালেন, প্রথম দুই বছর রোজার মাসে শিবিরের প্রতিটি পরিবারে ছোলা, তরল দুধ, পাউডার দুধ, চিনি, ময়দা, সেমাই, খেজুরসহ খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হতো। কয়েক বছর ধরে তা আর দেওয়া হচ্ছে না।

রাখাইন রাজ্যের গজরবিল এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন আবদুল জলিল। প্রায় সাত বছর ধরে শালবন আশ্রয়শিবিরে উদ্বাস্তু জীবন কাটাচ্ছেন তিনি। জলিল জানালেন, আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গারা আগে মাসে মাথাপিছু ১২ মার্কিন ডলার অর্থসহায়তা পেত, এখন মাত্র ৮ ডলার পাওয়া যায়। এই টাকায় সংসার চলে না।

রোহিঙ্গা শিবিরের দেখভাল করে সরকারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন। এখানকার কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের কথায় বোঝা গেল, তিনি নিরুপায়। তাঁর কথা, রোহিঙ্গাদের ইফতারের জন্য আলাদা বরাদ্দ নেই। তবে কিছু বেসরকারি সংস্থা রোহিঙ্গা পরিবারে ইফতারসামগ্রী বিতরণ করে থাকে।

পাঠকের মতামত

কক্সবাজারে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে ধর্ম ও প্রশাসনের সমন্বিত উদ্যোগ

কক্সবাজারে বাল্যবিবাহ শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত হলো “বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে করণীয়” শীর্ষক আন্তঃধর্মীয় নেতৃবৃন্দের ...

বাংলাদেশি পাসপোর্টে রোহিঙ্গা সুন্দরী তৈয়বার মালয়েশিয়ায় ‘বিয়ে বাণিজ্য’

১৯৯৭ সালে মিয়ানমারের মংডু থেকে পালিয়ে এসে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় ...