ডেস্ক নিউজ:
গত জানুয়ারি মাসের পর থেকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাসহ সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি না হওয়ায় কড়া ভাষায় বিবৃতি দিয়েছেন জাতিসংঘের স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ার (বিশেষ দূত) ইয়াংহি লি। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের বলা হয়েছে যে মিয়ানমারে যেন রাতারাতি গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা প্রত্যাশা করা না হয়। কারণ এ জন্য সময় ও সুযোগ প্রয়োজন। তবে একইভাবে মিয়ানমারেরও আশা করা উচিত নয় যে তার ওপর জাতিসংঘের চলমান নিবিড় নজরদারি এবং বিশেষ পর্যবেক্ষণ কাঠামো রাতারাতি উঠে যাবে। সেখানে মানবাধিকার পরিস্থিতির প্রকৃত ও দৃশ্যমান অগ্রগতি না হওয়া পর্যন্ত নজরদারি ও পর্যবেক্ষণব্যবস্থা উঠে যেতে পারে না। ’
ইয়াংহি লি গত জানুয়ারি মাসে মিয়ানমার সফর করেছিলেন। এরপর গত ১০ থেকে ২১ জুলাই মিয়ানমার সফরের সময় পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে তিনি ওই বিবৃতি দেন। জানুয়ারি মাসে মিয়ানমার সফরের পর তিনি যে প্রতিবেদন দিয়েছিলেন, তার ভিত্তিতে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ মিয়ানমারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয়। তবে মিয়ানমার সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে তদন্তদলকেই ওই দেশটিতে ঢুকতে না দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। ইয়াংহি লি মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে তাঁর পুরো প্রতিবেদন আগামী অক্টোবর মাসে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে উপস্থাপন করবেন। মিয়ানমারে গত অক্টোবর মাসে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানের নামে নিপীড়ন-নির্যাতন শুরুর পর প্রায় ৭৫ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এর আগে থেকেই মিয়ানমারের প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মনে করে, রোহিঙ্গা সমস্যার উৎস ও সমাধান—দুটিই মিয়ানমারে।
জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর গতকাল সোমবার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, জাতিসংঘ দূত মিয়ানমারে ক্রমাবনতিশীল সংঘাতে মানবাধিকার নিয়ে উদ্বেগগুলোর বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি তাঁর বিবৃতিতে কঠোর ভাষা ব্যবহার করে মিয়ানমার সরকারের সমালোচনা করেন। এ মাসে ১২ দিন মিয়ানমার সফর শেষে তিনি রোহিঙ্গাসহ অন্য সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর থেকে বিতাড়নের ফলে চলমান মানবিক সংকট, নিরাপত্তা হেফাজতে মৃত্যু, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের মানববর্ম হিসেবে ব্যবহার, হত্যা, নির্যাতন নিয়ে উদ্বেগ লিপিবদ্ধ করেছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, জাতিসংঘের দূত ইয়াংহি লির মিয়ানমারে চলাফেরা ব্যাপকভাবে সীমিত করা হয়েছে। সংকটপূর্ণ এলাকাগুলোতে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর যাওয়ার সুযোগ কার্যত বন্ধ রয়েছে। ইয়াংহি লির সঙ্গে সাক্ষাৎ করা ব্যক্তিরা নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। মিয়ানমার সরকার তাঁর চলাফেরার ক্ষেত্রে নজিরবিহীন পূর্বশর্ত বেঁধে দিতে চেয়েছে।
ইয়াংহি লি বলেন, ‘আগের সরকারের কৌশলগুলো এখনো চলছে দেখতে পেয়ে আমি হতাশ হয়েছি। ’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি বুঝতে পারি, মিয়ানমারের নতুন সরকার জাতিসংঘের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চায়। তবে মিয়ানমারকে প্রথমে এমন রাষ্ট্র হতে হবে, যার ব্যাপারে খুব বেশি দৃষ্টি দেওয়ার বা নজরে রাখার প্রয়োজন পড়বে না। ’
ইয়াংহি লি বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন ঘটিয়ে তাদের বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। গত জানুয়ারি মাসে তাঁর আগের সফরের পর থেকে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি হয়নি।
ইয়াংহি লি জানান, অভিযানের সময় নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতন-নিপীড়নের তথ্য তিনি এখনো পাচ্ছেন। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব যাচাই প্রক্রিয়ায় কাজ করা গ্রাম প্রশাসক ও অন্য মুসলমানদের ভয় দেখানো হচ্ছে। বিশেষ করে কারাগারে আটকদের প্রতি আচরণ নিয়ে তিনি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
পাঠকের মতামত