
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দিয়ে যখন রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরিয়ে নিতে বিশ্ববাসীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তখনই কক্সবাজারে সরকারের একজন পদস্থ কর্মকর্তা রোহিঙ্গা নিয়ে উল্টো বক্তব্য দিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি করেছেন। গতকাল রবিবার কক্সবাজারে অনুষ্টিত দিনব্যাপি এক কারিগরি সেমিনারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দায়িত্ব প্রাপ্ত একজন ক্যাম্প ইনচার্জ (সিআইসি) রোহিঙ্গা বিষয়ে রিতীমত সরকার ও স্থানীয় জনগোষ্টির বিরুদ্ধাচারণ করে তোপের মুখে পড়েন।
স্থানীয় জনগোষ্টিকে সহায়তা দেয়ার উদ্দেশ্যে বিশ্বব্যাংকের একটি প্রকল্প ( ঝসড়উগজচঅ) নিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় আয়োজন করেছিল সেমিনারটি। সেমিনারে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং বিশ্বব্যাংকের বেশ কয়েকজন উর্ধতন কর্মকর্তার উপস্থিতিতেই ঘটেছে এমন ঘটনাটি। অনুষ্টানে কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া, রামু ও কক্সবাজার সদর উপজেলার ৪ নারী ভাইস চেয়ারম্যান সহ আরো বেশ কয়েকজন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এবং উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তারাও ছিলেন।
সরকারের উপ সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা আবু সালেহ মোঃ ওবায়দুল্লাহ সেমিনারে বলেন-‘রোহিঙ্গাদের কারনে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের শতকরা এক ভাগ স্থানীয় লোকজনও ক্ষতিগ্রস্থ নয়। বরং স্থানীয়রা রোহিঙ্গাদের নিয়ে অনেক টাকা-পয়সার মালিক বনেছে। এসব কারনে স্থানীয় জনগোষ্টি কেউই চান না রোহিঙ্গারা তাদের দেশে ফিরে যাক।’
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দায়িত্ব প্রাপ্ত একজন পদস্থ সরকারি কর্মকর্তার এমন বক্তব্যের সাথে সাথেই সেমিনারে অংশগ্রহণকারি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তীব্র প্রতিবাদে ফেটে পড়েন। জনপ্রতিনিধিরা সরকারের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিপরীতে রোহিঙ্গা বিষয়ে একজন পদস্থ সরকারি কর্মকর্তার এমন উদ্ভট বক্তব্য নিয়ে তাৎক্ষনিক প্রশ্ন তুলেছেন। তারা এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন-‘বিশ্বব্যাংক সহ সরকারের উর্ধতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এমন বক্তব্য তিনি কেন দিলেন তা খতিয়ে দেখা হবে।’
সেমিনারে অংশগ্রহণকারি টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মৌলভী আজিজ আহমদ এ প্রসঙ্গে বলেন-‘ রোহিঙ্গাদের কারনে ভয়াল পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরেই প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে গিয়ে বিশ্ববাসীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তাদের দেশে ফিরিয়ে নিতে। অথচ আমাদেরই একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রীরই বক্তব্যের বিরোধীতা করেছেন উক্ত সিআইসি।’ ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, উক্ত সিআইসি’র বক্তব্যে উপস্থিত স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সবাই উঠে গিয়ে প্রতিবাদ করেছেন এমন সরকার বিরোধী বক্তব্য নিয়ে।
কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদের নারী ভাইস চেয়ারম্যান হামিদা তাহের বলেন-‘বিশ্বব্যাংক রোহিঙ্গার কারনে ক্ষতিগ্রস্থ স্থানীয় জনগোষ্টিকে সহায়তা দিতে এসেছে। অথচ রোহিঙ্গা ক্যাম্পেরই একজন সরকারি কর্মকর্তা সেই সহায়তার বিরোধিতা করে বক্তব্য দেয়ায় আমরা রিতীমত সন্দিহান-এই কর্মকর্তার ভুমিকা নিয়ে।’ হামিদা তাহের বলেন, উক্ত সরকারি কর্মকর্তার এমন দেশবিরোধী বক্তব্য শুনে তার গা জ্বালা করছে। তিনি কর্মকর্তার এহেন বক্তব্যের বিষয়টি নিয়ে তদন্তের দাবি জানান।
এ বিষয়ে উক্ত কর্মকর্তা আবু সালেহ মোঃ ওবায়দুল্লাহ’র সাথে গতরাতে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন-‘আমি কি বলেছি তা উপস্থিত সবাই শুনেছেন। আপনি তা পত্রিকায় রিপোর্ট করেন।’ দেশের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার সুযোগ আছে কিনা এবং এ বিষয়ে তাঁর (কর্মকর্তা) বলার কিছু আছে কিনা তা জানতে চাইলে তিনি পূণরায় বলেন-‘আপনি পত্রিকায় রিপোর্ট করেন।’
এ বিষয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত শরনার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার ও সরকারের উপ সচিব মোহাম্মদ শামসুদ্দৌজা বলেন-‘ বিশ্বব্যাংকের প্রকল্পটি স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাবাসীর জন্য দেয়া হচ্ছে। ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এমন অনুষ্টানে আমাদের একজন কর্মকর্তা (সিআইসি) হয়ে এমন ধরণের বক্তব্য তেন দিলেন তা জানিনা।’
প্রসঙ্গত, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত উক্ত সিআইসি’র বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও গত ২৫ আগষ্ট বিতর্কিত রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহর লাখো রোহিঙ্গার সমাবেশের আয়োজন সহ নানা বিষয়েও অভিযোগ রয়েছে। সুত্র: আজকের দেশ বিদেশ
পাঠকের মতামত