
বঙ্গোপসাগরে ডুবে যাওয়া নৌকা থেকে নারী-শিশুসহ ২৫ জন রোহিঙ্গাকে জীবিত উদ্ধারের সময় প্রাণ হারানো বিজিবি সদস্য মো. বিল্লাল হাসানের সাহসিকতা ও মানবিকতা নিয়ে আলোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ পুরো টেকনাফ সীমান্তে।
গত ২০ মার্চ গভীর রাতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় টেকনাফ বঙ্গোপসাগরে রোহিঙ্গাদের ওই নৌকাটি উত্তাল ঢেউয়ে ডুবে যায়। এই সময় খবর পেয়ে দ্রুত নৌকা যোগে সেখানে উপস্থিত হন বিল্লাল হাসান। উদ্ধারের একপর্যায়ে পা পিছলে সাগরে পানিতে পড়ে যান তিনি। পরে শাহপরীর দ্বীপ পশ্চিম পাড়া এলাকায় বিল্লালের লাশ পাওয়া যায়।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজিবি সদস্য বিল্লাল হাসানের এমন সাহসী দায়িত্বের প্রশংসা করে অনেকেই বলেছেন, নিজের কাজের প্রতি ভালোবাসা আর সম্মান থাকায় এভাবে নিজের প্রাণের বিনিময়ে অনেকগুলো মানুষের জীবন রক্ষা করেতে দেরি করেননি বিল্লাল।
জানা গেছে, আসন্ন ঈদুল ফিতরে ছুটিতে বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সাথে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করার কথা ছিল বিল্লাল হাসানের। আদরের দুই মেয়ে ও পরিবারের সদস্যদের জন্য কেনাকাটার কথাও মুঠোফোনে বলেছিলেন এই তো ক’দিন আগে।
বিল্লাল হাসানের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগরের ১৯ নম্বর দারোরা ইউনিয়নের কাজিয়াতল গ্রামে। তার পিতার নাম বজলুর রহমান। পরিবারে তারা দুইভাই ও এক বোন। বিল্লাল সবার বড়।
বিল্লালের সুখের সংসারে আছে দেড় বছরের আনহা বিন হাসান ও আট বছর বয়সের আন নাফি নামের দুটি কন্যা সন্তান। যারা এখন শুধু বাবা বাবা বলে খুঁজে ফিরছে সেই বিল্লালকে।
বিল্লালের এমন করুন মৃত্যুতে নিজ এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। ছেলেকে হারিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন মা নাছিমা আক্তার। স্বামীর মৃত্যুর খবর শুনে শোকে পাথর হয়ে আছেন প্রিয়তমা স্ত্রী রোকসানা। বলছেন, দুটি সন্তান নিয়ে এখন কোথায় দাঁড়াবেন?
নিহতের স্ত্রী রোকসানা বলেন, কথা ছিল ২৫ তারিখে ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসবেন। বাড়িতে ঈদ করবেন। এখন আমাকে সাগরে ভাসিয়ে সে চিরকালের জন্য ছুটি নিয়ে চলে গেছে না-ফেরার দেশে। দুটি অবুঝ শিশুসন্তান নিয়ে আমি এখন কোথায় দাঁড়াব।
টেকনাফর বিজিবির সদস্যরা বলেন, বিল্লাল একজন সাহসী সৈনিক ছিলেন, রোহিঙ্গাদের জীবন বাঁচাতে গিয়ে নিজে সাগরে পানিতে মৃত্যু বরণ করেন। সীমান্তে ৬ মাস দায়িত্ব পালনকালে কখনো পিছপা হননি। তার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করি, আমরা একজন সাহসী সহযোদ্ধাকে হারিয়েছি।
নিহতের ভাই নাসির উদ্দিন বলেন, বিল্লাল একজন সাহসী সৈনিক ছিলেন। দেশের জন্য তার দায়িত্ববোধের কমতি কখনোই কম ছিল না। কারো কোন বিপদ হলেই দ্রুত সেখানে ছুটে যেতেন বিল্লাল।
দেশ ও মানবতার সেবায় বিজিবি সদস্য বিল্লাল হাসানের সাহসী ভূমিকা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে সবার কাছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ গভীর শোক ও শ্রদ্ধার সঙ্গে তার আত্মত্যাগ স্মরণ করেছে। পাশাপাশি শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি জানিয়েছেন সমবেদনা।
পাঠকের মতামত