
এইচএম এরশাদ ::
স্থায়ীভাবে থেকে যেতে রোহিঙ্গাদের টার্গেট হয়ত মালয়েশিয়া নতুবা বাংলাদেশে। মিয়ানমারের বিভিন্ন কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া রোহিঙ্গারা ফের অনুপ্রবেশ করছে। এতে অবৈধ রোহিঙ্গাবৃদ্ধি ও করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে ৫জন অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাকে আটক করে কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার গভীর রাতে ৩০জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে ভাসানচরে হস্তান্তর করার উদ্দেশে বুধবার নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
জানা যায়, গত বছর ২০২০সালে মিয়ানমারের বিভিন্ন রাজ্যের কারাগারে থাকা অন্য জাতিগোষ্ঠীর লোকজনের (হাজতি) সঙ্গে প্রায় এক হাজার রোহিঙ্গাকে মুক্তি দিয়েছিল মিয়ানমার সরকার। তারাও কৌশলে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। তাদের কারও কারও শরীরে করোনা সংক্রমণ পাওয়া গিয়েছিল। একই বছর মালয়েশিয়া ফেরত বলে দাবী করে জাতিসংঘের অনুরোধে সমুদ্রে ভাসমান অবস্থা থেকে ৪২৪জন রোহিঙ্গার জায়গা হয়েছে উখিয়া টেকনাফের বিভিন্ন শিবিরে। আবার শহরের নুনিয়াছড়া এবং সমুদ্র উপকূল থেকে উদ্ধার করে ৩০৬জন রোহিঙ্গাকে স্থান করে দেয়া হয়েছে ভাসানচরে। এভাবে বিচ্ছিন্নভাবে রোহিঙ্গারা রাখাইন রাজ্য থেকে ধীরে ধীরে ঢুকে পড়ছে বাংলাদেশে। এতে দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে অবৈধ রোহিঙ্গার সংখ্যা। কৌশলে তারা ছড়িয়ে পড়ছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে।
জানা যায়, কক্সবাজার, পেকুয়া, উখিয়া ও টেকনাফ সাগর উপকূলে বিভিন্ন স্থান থেকে ছোট ছোট নৌকাযোগে নিয়ে যাওয়া হয় ট্রলারে। উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী আশ্রয় শিবিরে বসবাসকারী ৩০ রোহিঙ্গা মঙ্গলবার রাতে সাগর পথে অবৈধভাবে মালেশিয়া যাবার উদ্দেশ্য রওনা দেয়। রোহিঙ্গা বহণকারী ট্রলারটি সাগরে গভীরে পৌছলে ডাকাত দলের কবলে পড়ে। পরবর্তী ট্রলারটি টেকনাফের বাহারছড়া সৈকতে ভিড়লে গ্রেফতার এড়াতে মানবপাচারের গডফাদার দালালসহ ২০ রোহিঙ্গা পালিয়ে যায়। কক্সবাজার শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শাহ রেজুওয়ান হায়াত বলেন, উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গাদেরকে ভাসানচরে নিয়ে যাবার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম হয়ে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
ইতোপূর্বে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের স্বভাবগত কারণ বলে উল্লেখ করে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রোহিঙ্গারা স্থায়ীভাবে বসবাস করতে হয়ত মালয়েশিয়া নতুবা বাংলাদেশকে টার্গেট করে পালিয়ে আসে মাতৃভূমি রাখাইন রাজ্য থেকে। রোহিঙ্গারা নগদ টাকা ও স্বর্ণ জমা রাখা ছাড়া কিছুই বুঝতে চায়না। নগদ টাকার জন্য হঠাৎ খুন করতে পারে রোহিঙ্গারা। চাঁদার টাকার অঙ্ক বাড়ানোর চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে রোহিঙ্গাদের একটি অংশ বালুখালী ক্যাম্পের স্থাপনা ও কথিত বলিবাজার মার্কেট পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়েছে। তারা যেখানে বসবাস করে সেখানে একটার পর একটা ঘটনা লেগেই থাকে। বাংলাদেশের ভূয়া ঠিকানায় পাসপোর্ট করে বিদেশে প্রবাস জীবনে বসবাসকারী, মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশের কারাগারে বন্দি রোহিঙ্গারা প্রথমে বাংলাদেশকে টার্গেট করে থাকে। সুযোগ পাওয়া মাত্রই ঢুকে পড়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশে। আর রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিশাল একটি অংশ কক্সবাজারের উখিয়া টেকনাফে আশ্রয় নেয়ায় এই অবৈধ বসবাসের সুযোগটা কাজে লাগাচ্ছে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা। ফলে রোহিঙ্গার সংখ্যা বৃদ্ধি পবার পাশাপাশি অনুপ্রবেশকারীদের কারণে করোনা আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয় অধিবাসিরা। সোমবার রাতে মংডূ থেকে টেকনাফের জাদিমোরা সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করেছে দুই রোহিঙ্গা। মঙ্গলবার জাদিমোরা শালবাগান ২৬ নাম্বার রোহিঙ্গা শিবির থেকে তাদের এপিবিএন পুলিশের হেফাজতে নেয়া হয়েছে। কক্সবাজার-১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক মো: তারিকুল ইসলাম তারিক এ তথ্যটি নিশ্চিত করে বলেন, ওই দুই রোহিঙ্গা যুবক যথাক্রমে মোহাম্মদ আমান উল্লাহ মংডূ বড় গৌজিবিলের বাসিন্দা মোহাম্মদ হানিফের পুত্র। মোহাম্মদ ইসহাক একই এলাকার মৃত-মোহাম্মদ সালামত উল্লাহর পুত্র।
সূত্র জানায়, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, দুবাইসহ মধ্যপ্রচ্যের বিভিন্ন দেশে অর্থ উপার্জনকারী হাজারো রোহিঙ্গার নিকটআত্মীয় উখিয়া টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। প্রবাসি রোহিঙ্গাদের কেউ কেউ মোটা অঙ্কের অর্থ পাঠিয়ে কক্সবাজার, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় ভিটা কিনে দালান গড়ে তোলেছে। অথচ উদ্বাস্তু হিসেবে ত্রাণ সামগ্রী ভোগ করছে তাদের স্বজনরা। বিভিন্ন দেশের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে এবং প্রবাস জীবন শেষে বাংলাদেশে ফিরে ওই অবৈধ রোহিঙ্গাদের ঠাঁই হচ্ছে হয়ত রোহিঙ্গা শিবিরে নতুবা তাদের ক্রয়কৃত ভিটায় গড়ে তোলা দালানে। এভাবে রোহিঙ্গাদের বিস্তৃতি ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। টেকনাফের জাদিমোরা শালবাগান ২৬ নাম্বার রোহিঙ্গা শিবির থেকে আটক অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গারা জানায়, মিয়ানমারের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে ২০১৭সাল থেকে আশ্রয় নেয়া তাদের পরিবারের কাছে এসেছে তারা। পরে উখিয়ার কুতুপালং ট্রানজিট পয়েন্টে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। ইতোপূর্বে উদ্ধার হওয়া তিন রোহিঙ্গাকেও হোম কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়।
সূত্র আরও জানায়, আশ্রয় শিবিরে কয়েক সদস্যকে রেখে বেশী পাবার আশায় রোহিঙ্গাদের অনেকে মালয়েশিয়া পাড়ি দিতে আগ্রহী। সাগরপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাবার চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসা দালালসহ ৩০ জন রোহিঙ্গাকে আটক করেছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড সদস্যরা। মঙ্গলবার টেকনাফ বাহারছড়ার বড় ডেইল সমুদ্র সৈকত এলাকা থেকে মাছ ধরার ট্রলারসহ তাদেরকে আটক করা হয়। এসব তথ্য নিশ্চিত করে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড সদর দফতর মিডিয়া কর্মকর্তা লে. কমান্ডার বিএন আমিরুল হক জানান, সাগরপথে মালয়েশিয়া যাবার চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে ট্রলারটি টেকনাফ সৈকতে ফিরে আসে। সেখান থেকে দালালসহ ৩০ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, রোহিঙ্গাদের বহনকারী ট্রলারটি সাগর হয়ে মালয়েশিয়া যাবার পথে বঙ্গোপসাগরে ডাকাতের কবলে পড়ে। এসময় ডাকাতরা তাদের মালপত্র লুট করে ট্রলারের ইঞ্জিন বিকল করে দেয়। পরে তারা ভেসে ভেসে উপকূলে ভিড়লে তাদের উদ্ধার করা হয়। সূত্র জনকণ্ঠ
পাঠকের মতামত