![](https://www.ukhiyanews.com/wp-content/uploads/2016/12/Ukhiya-Pic-27-12.2016.jpg)
সরওয়ার আলম শাহীন, উখিয়া নিউজ ডটকম::
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী, পুলিশ ও রাখাইন সম্প্রদায়ের নির্যাতন কোন ভাবেই থামানো যাচ্ছে না। উপরোন্তু রোহিঙ্গাদের সেখানে ক্যাম্পবন্দি রাখার অভিনব কৌশল অবলম্বন করে রোহিঙ্গাদের বাড়ি, ঘর, দোকান পাট সহ নানা প্রকার স্থাপনা ধ্বংস করছে। ফলে মংডু এলাকায় মুসলিম রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে আবার নতুন করে আতংক দেখা দিয়েছে। সদ্য অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
সরেজমিন কুতুপালং বস্তি এলাকা ঘুরে গত এক সপ্তাহ ধরে মিয়ানমারের মংডু ও বুচিদংয়ের বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা নর-নারীর সাথে কথা বলা হয়। তারা জানান, নতুন করে নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়েছে। সেখানে খেয়ে মরার চাইতে এখানে না খেয়ে থাকবো,তবুও এখানে নিরাপদ।মংডু এলাকার নাইচাদং গ্রামের ছকিনা (২৪) জানায়, মংডু বাজারে তার স্বামীর একটি দোকান ছিল। মিয়ানমারের সেনারা গত শনিবার রাতে দোকানের মালামাল লুটপাট করে তার স্বামী অছিয়র রহমান (২৮) কে গলা কেটে হত্যা করেছে। সকালে গিয়ে দেখি তার স্বামীর রক্তাক্ত মরা লাশ। উপান্তর না দেখে দু’মেয়ে ও দু’ছেলেকে নিয়ে সহায় সম্বল ফেলে উনচিপ্রাং সীমান্ত দিয়ে এপারে চলে এসেছি।
প্রত্যক্ষদর্শী একজন ব্যবসায়ী নুরুল্লাহ (৪৫) জানায়, মিয়ানমারের সেনারা এবার ধ্বংসলীলায় মেতে উঠেছে। তারা ঘরবাড়ি ধ্বংস করে রোহিঙ্গা মুসলিমদের এক জায়গায় ক্যাম্পবন্দি করে জিম্মি অবস্থায় রাখার জন্য রোহিঙ্গাদের যাবতীয় স্থাপনা ধ্বংস করছে। অবস্থার অবনতি দেখে দু’মেয়ের ইজ্জত রক্ষার্থে অনেক কষ্টে নাফ নদী পার হয়ে বালুখালী পানবাজার সীমান্ত দিয়ে কুতুপালং বস্তিতে আশ্রয় নিয়েছি। সে জানায়, তাদের সাথে আরো ৪০ পরিবারের দু’শতাধিক রোহিঙ্গা নারী শিশু কুতুপালং বস্তিতে এসে পৌঁছেছে।কুতুপালং নিবন্ধিত রোহিঙ্গা নেতা ফয়সাল আনোয়ার জানায়, গত ৪/৫ দিন ধরে যেসব রোহিঙ্গা এসেছে তাদের মধ্যে অনেকেই ধর্ষিতা নারী। শিশুরা ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত। বয়স্করা ক্ষুধায়, তৃষ্ণায় কাতর হয়ে পড়েছে। এসব রোহিঙ্গারা সর্বশান্ত হয়ে এখানে আশ্রয় নিলেও পেটের তাগিদে রাস্তার আশে পাশে বসে কিছু পাওয়ার জন্য বাধ্য হয়ে অপেক্ষা করছে। উত্তরাঞ্চল থেকে পর্যটকনামধারী বেশ কিছু গাড়ী এসে রাস্তার ধারে ধারে থেমে থেমে রোহিঙ্গাদের অকাতরে টাকা ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করছে। যে কারণে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বাড়ছে বলে সে দাবী করে। এদিকে স্থানীয় কিছু লোকজন আশ্রয়হীন রোহিঙ্গাদের পুঁজি করে ঝুঁপড়ি ভাড়া বাণিজ্যে নেমে পড়েছে।ঘাপটি মেরে থাকা জঙ্গি সংগঠনগুলো কতিপয় এনজিওর সাথে আঁতাত ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের এ কাজে ব্যবহার করছে বিভিন্ন লেভেলে।স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে কুতুপালং ও টেকনাফের লেদা অরক্ষিত রোহিঙ্গা বস্তিতে নগদ টাকা বিতরণ করে যাচ্ছে বিভিন্ন টিমে ভাগ হয়ে অপরিচিত লোকজন।তারা ১ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত এক একটি রোহিঙ্গা পরিবারকে প্রদান করেছে।নাম প্রকাশ না করার শর্তে টাকা প্রদানকারী ব্যক্তিরা জানান,তারা কারও নির্দেশে বা কোন সংস্থার পক্ষ থেকে এ টাকা বিতরণ করছেন না।তবে ধনাঢ্য ব্যক্তিবর্গ থেকে সাহায্য হিসেবে নিয়ে তা মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিলিয়ে দিচ্ছেন।সরকারি ভাবে এসব রোহিঙ্গাদের সাহায্য সহযোগীতা করা না হলেও বিভিন্ন এনজিও সংস্থা,ব্যক্তি ও জঙ্গি সংগঠনের উদ্যোগে অত্যান্ত গোপনীয়তা রক্ষা করে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ চলছে বাধাহীন ভাবে। সম্প্রতি কুতুপালং বস্তি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, চাষাবাদের জমিতে প্রায় শতাধিক ঝুঁপড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে আশ্রয় নেওয়া বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা জানান, এক একটি ঝুঁপড়ি ৫শত টাকা করে ভাড়া নিয়েছে। কুতুপালং বস্তি ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি আবু ছিদ্দিক জানান, অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা কুতুপালংয়ে আশ্রয় নিলেও তারা নিরাশ্রয় হওয়ার কারণে যে যেখানে পারে সেখানে অবস্থান নিয়ে কিছু পাওয়ার আশায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবস্থান করছে। পুলিশ শত চেষ্টা করেও তাদের বস্তি এলাকায় ফেরাতে পারছেনা। সুজনের সভাপতি নুর মুহাম্মদ সিকদার জানান,প্রায় দেড় লক্ষাধিক রোহিঙ্গার ভারে ন্যূয়ে পড়া জনপদ উখিয়ার সাধারণ মানুষ তাদের নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার উপক্রম হয়েছে।এভাবে ঢালাও ভাবে ত্রান সামগ্রী বিতরন করা হলে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রোধ করা সম্ভব নয়।বস্তিসহ অনুপ্রবেশকৃত রোহিঙ্গা নিয়ন্ত্রন জরুরী বলে তিনি মনে করেন।আর তা হলে অভাবের তাড়নায় এসব রোহিঙ্গারা অপরামুলক কর্মকান্ডে জড়াবে এটাই স্বাভাবিক।উখিয়া রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী জানান, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ প্রতিরোধে বিজিবি,পুলিশ,কোস্টগার্ডসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর থাকার পরও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে।এমতাবস্থায় এসব রোহিঙ্গাদের ত্রাণ সামগ্রী দিয়ে সহযোগীতা করা হলে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে উৎসাহিত করা হচ্ছে বলে প্রতীয়মান হয়। এঘটনার সত্যতা স্বীকার করে উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আবুল খায়ের জানান, রোহিঙ্গাদের অকাতরে টাকা বিলি করার সুবাদে রোহিঙ্গারা উখিয়ার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে। তাই অবৈধ লেনদেন বন্ধ করা না হলে এসব রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণ করা কারো পক্ষে সম্ভব হবে না।
এ ব্যাপারে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিনের যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,অনুপ্রবেশকৃত রোহিঙ্গা ও বস্তির রোহিঙ্গাদের উপর কড়া নজরদারী রাখা হয়েছে,রোহিঙ্গাদের মাঝে প্রসাশনের অনুমতি ছাড়া ত্রান সামগ্রী বিতরন বন্ধ করতে প্রয়োনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
পাঠকের মতামত