প্রকাশিত: ১৬/১১/২০১৬ ৭:৪৫ এএম
ফাইল ছবি

BGBরফিকুল ইসলাম;;

মিয়ানমারে আরাকান প্রদেশের মংডু ও বুচিডং জেলার বিভিন্ন স্থানে সে দেশের সেনা ও সীমান্ত রক্ষী বিজিপির সাথে সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের মাঝে চলা সহিংসতা মাস পেরিয়ে গেছে। বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন এলাকাগুলো, নাফ নদীতে বিজিপির পাশাপাশি সেনা, নৌ, বিমান বাহিনী, পুলিশ ও কোস্ট গার্ডের যৌথ টহল ও অভিযানের প্রেক্ষিতে সীমানা নদী নাফ নির্ভরশীল শত শত জেলে পরিবারের মাঝে আতঙ্ক ও দুর্ভোগ চলছে। ইতিমধ্যে নাফ নদীতে মৎস্য শিকাররত ১২জন বাংলাদেশি জেলেকে মিয়ানমার যৌথ বাহিনী ধরে নিয়ে গেছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবির পক্ষ থেকে বাংলাদেশি জেলেদের ফিরিয়ে আনার জন্য জোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে জানা গেছে। মিয়ানমার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক গণমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে, গত মাসের প্রথমার্ধে বাংলাদেশের টেকনাফ সীমান্তের ওপারে অবস্থিত বিজিপির ৩টি আউট পোস্ট বা বিওপিতে একযোগে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ৯জন বিজিপি কর্মকর্তা ও সদস্যসহ ৫ হামলাকারী নিহত হয়। এ ঘটনায় অবশ্য কোন গ্রুপ দায় স্বীকার না করলেও মিয়ানমার সেনাবাহিনী দাবি করছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপ আরএসও, জমাতিল মুজাহিদীন এ ঘটনার জন্য দায়ী। সে থেকে মংডু জেলার উত্তরাঞ্চলের বড় গৌজবিল, ছোট গৌজবিল, সালিপিন, জামবনিয়া, কুলারবিল, রাবিল্লাহ, বলিবাজার, বড় সিকদারপাড়াসহ বিভিন্ন রোহিঙ্গা মুসলিম অধ্যুষিত গ্রাম ও পাড়া গুলোতে সে দেশের সশস্ত্র বাহিনীর নেতৃত্বে ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’ নামে যৌথ অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। গত শুক্রবার ও শনিবার যৌথবাহিনী ৩টি রোহিঙ্গা গ্রাম ঘিরে গান পাউডার দিয়ে শতাধিক ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে এতে ৪হাজারের মত অসহায় শিশু, নারী, পুরুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে। এ দু’দিনে এসব গ্রামে বিমান বাহিনী প্রথম বারের মত হেলিকপ্টার গানশীল, রকেট লাঞ্চার নিক্ষেপ করেছে। এ দুই দিনে ১জন সেনা সদস্যসহ ৩০জন নিরহ রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে বলে বিবিসি, এএফপি সহ বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে।

মাসাধিকাল ধরে চলা যৌথবাহিনীর ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’ অভিযানে অন্তত পাঁচ শতাধিক ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, মহিলাদের জোর পূর্বক ধর্ষণ করা হচ্ছে, ঘরবাড়ি থেকে স্বর্ণালংকার সহ মূল্যবান মালামাল লুট করা হচ্ছে, অগনিত মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে, অসংখ্য মানুষ গুরুতর আহত হলেও তাদের কোন চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই, অসংখ্য গ্রামে খাদ্য সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে, হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে, কার্যতঃ মানবাধিকার সহ যাবতীয় অধিকার সেখানে লংঘিত হলেও সে দেশের সরকার এ ব্যাপারে এক প্রকার নির্লিপ্ত বলে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, জাতিসংঘ, ইউনিসেফ সহ বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক অধিকার গ্রুপ দাবি করে আসছে। তাদের মতে সেনা নিয়ন্ত্রিত এসব মানবিক সংকটাপন্ন এলাকায় কোন এইড গ্রুপ, মিডিয়া কর্মীদের যেতে দেওয়া হচ্ছে না বিধায় সেখানে প্রকৃত কী ঘটছে সে ব্যাপারে আসল তথ্য জানা যাচ্ছে না বলে তাদের দাবি।

উখিয়া ও টেকনাফে বসবাসরত রোহিঙ্গা শরণার্থী সূত্রে জানা গেছে, গত এক মাসের বেশি সময় ধরে আরকানে সামরিক জান্তা মংডু, বুচি ডং জেলার বিভিন্ন রোহিঙ্গা মুসলিম অধ্যুষিত পাড়া গ্রামে গণগ্রেপ্তার, মহিলা শিশু সহ সকল স্তরের লোক জনদের উপর অমানবিক অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে। সামরিক জান্তার ভয়ে রোহিঙ্গা পাড়া গ্রাম গুলো কার্যত পুরুষ শূণ্য হয়ে পড়ে। পুরুষরা ঘর বাড়ি ছেড়ে বন জঙ্গলে, ধান ক্ষেতে, নদীর কিনারে লুকিয়ে লুকিয়ে দিনাতিপাত করছে। যৌথ বাহিনী পাড়া গ্রাম ঘেরাও করে শিশু, নারী ও বৃদ্ধদের ঘর থেকে বের করে দিয়ে ঘরের মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে ঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিচ্ছে।

অন্যদিকে বাংলাদেশ সীমান্তের উপারে চলা সামরিক উত্তেজনার প্রেক্ষিতে উভয় দেশের সীমানা নাফ নদী ও দক্ষিণ পূর্ব বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশি জেলেদের মাঝে চরম আতঙ্ক ও দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। মিয়ানমারের বঙ্গোপসাগরের সেন্টমার্টিন উপকূলের কাছাকাছি ও নাফ নদীতে টহল জোরদার করেছে। গত দুই নভেম্বর নাফ নদী থেকে ৩জন, ১১ নভেম্বর সেন্টমার্টিন উপকূল থেকে ৬জন ও একই দিন নাফ নদীর ২নং ুইচ গেইট এলাকা থেকে ৩জন সহ ১২জন বাংলাদেশি জেলেকে মাছ ধরা নৌকাসহ অপহরণ করে নিয়ে গেছে। এ ব্যাপারে বিজিবির পক্ষ থেকে মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষী বিজিপির সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও যোগাযোগ রক্ষা করা যাচ্ছে বলে টেকনাফ-২ বিজিবি অধিনায়ক লেঃকর্ণেল আবু জার আল জাহিদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। তিনি নাফ নদীসহ সীমান্ত এলকায় বাংলাদেশিদের সর্তক ভাবে চলাফেরার পরামর্শ দিয়েছেন। কক্সবাজার-১৭ বিজিবি অধিনায়ক লেঃকর্ণেল ইমরান উল্লাহ সরকার বলেন, স্বভাবতই মিয়ানমারের বাংলাদেশ সীমান্তের ওপারে চলমান সহিংস ঘটনায় এপারে বিজিবির টহল ও অবস্থান জোরাদার করা হয়েছে। নাফ নদী থেকে বাংলাদেশি জেলে ধরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে মিয়ানমারের বিজিপিকে তাদের ফেরত দেওয়ার জন্য অব্যাহত চাপ দেওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মিয়ানমার সরকারের সাথে যোগাযোগ চলছে। আগামী ২৩ নভেম্বর ঘুমধুমে উভয় দেশের সীমান্ত রক্ষীদের মাঝে পতাকা বৈঠকের কথা রয়েছে এবং সেখানে তারা আসলে বিষয়টি উত্থাপন করা হবে বলে তিনি জানান।

এদিকে আরাকান প্রদেশে পুলিশ ও বিজিপিতে কয়েক শত স্থানীয় রাখাইনদের নতুন ভাবে অস্থায়ী ভাবে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে এবং তাদের স্বল্প সময়ের প্রশিক্ষণ দিয়ে এ অপারেশনে নিয়োজিত করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। গতকাল মঙ্গলবার মিয়ানমার সেনা প্রধানের অফিস থেকে দাবি করা হয়েছে মাসাধিকাল চলা অভিযানে বিজিপির একজন কমাডিং অফিসার, একজন সেনা সদস্য ও ১০জন পুলিশ সহ ৬৯জন নিহত হয়েছে এবং ২৩৪জনকে ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে রাখাইন এলাকাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে যেসব সংবাদ ও ছবি ছাপানো হচ্ছে তা সঠিক নয় এবং অতিরঞ্জিত বলে দাবি করে মিয়ানমারের অনলাইন ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম ‘মিজিমা.কম’ গতকাল সংবাদ প্রকাশ করেছে।

পাঠকের মতামত

কক্সবাজারে বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র চালু, দৈনিক উৎপাদন ৩০ মেগাওয়াট

কক্সবাজার সদর উপজেলার বাঁকখালী নদীর খুরুশকুল উপকূলে বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়েছেছবি: প্রথম আলো কক্সবাজার সদর উপজেলার ...

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে টার্গেট কিলিং!

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে চলছে ‘টার্গেট কিলিং’। ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড ...

জান্নাতুলকে খুনের কথা আদালতে স্বীকার করলেন কক্সবাজারের রেজা

রাজধানীর পান্থপথে আবাসিক হোটেলে চিকিৎসক জান্নাতুল নাঈম সিদ্দিকা হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন ...

খাদ্য সংকটে সেন্টমার্টিন

হেলাল উদ্দিন সাগর :: বৈরী আবহাওয়ার কারণে গত এক সপ্তাহ ধরে দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন ...