উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৭/০২/২০২৩ ৮:১১ পিএম

বাংলাদেশে মাদক প্রবেশের বড় রুট হচ্ছে চট্টগ্রাম মহানগরী ও কক্সবাজার। এ কারণে সরকার এই চট্টগ্রাম মহানগর এবং কক্সবাজারকে মাদকপ্রবণ অঞ্চল ঘোষণা করতে যাচ্ছে। এ জন্য প্রয়োজনীয় রূপরেখা তৈরির কাজও শুরু হয়েছে।একই সঙ্গে মানবপাচার ও অবৈধ মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশিদের তালিকা তৈরি করছে সরকার। এ বিষয়ে একটি সমন্বিত তালিকা তৈরির কাজ চলমান রয়েছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে জানানো হয়েছে।

রোববার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। কমিটি এর আগের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা পর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকা এবং কক্সবাজার জেলাকে মাদকপ্রবণ এলাকা হিসেবে ঘোষণার সুপারিশ করে।

Advertisement

বৈঠকে ওই সুপারিশের অগ্রগতি তুলে ধরা হয়। এছাড়াও বৈঠকে মাদকপাচারকারী, অবৈধ মাদক ব্যবসায়ী, সব রোহিঙ্গা এবং মাদকের সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশিদের তালিকা তৈরির বিষয়ে অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সমন্বয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের একটি সমন্বিত তালিকা তৈরির কার্যক্রম চলমান বলেও জানানো হয়।

কমিটির সভাপতি বেনজীর আহমদ এতে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে তিনি জিরো পয়েন্টে আশ্রয়গ্রহণকারী রোহিঙ্গাদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের কথা উল্লেখ করে বলেন, মাদকপাচারের বড় রুট হিসেবে এ পয়েন্টটি চিহ্নিত হয়ে আছে।

বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সব বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সমন্বয় সভায় গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্যসূচি হিসেবে বিষয়টি নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়। সভায় সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে মতবিনিময় করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকা এবং কক্সবাজার জেলাকে মাদকপ্রবণ এলাকা ঘোষণা করার বিষয়ে একটি রূপরেখা তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। এ বিষয়ে পরবর্তী কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগ থেকে জানানো হয়।

বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণার কথা উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘মাদকপাচারের সঙ্গে, মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি যিনিই হোক না কেন, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। মাদক ব্যবসায়ী যত শক্তিশালীই হোক না কেন, প্রধানমন্ত্রীর থেকে তা শক্তিশালী নয়। ১৬ কোটি মানুষের স্বার্থের সঙ্গে কোনো আপস হতে পারে না। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে এখানে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে, এখানে বাস করতে হলে আমাদের দেশের আইন মানতে হবে। আমাদের রাষ্ট্রের ক্ষতি হয়— এমন কর্মকাণ্ড থেকে তাদের দূরে থাকতে হবে। এসব বন্ধ না করলে হয় তারা তাদের দেশে ফেরত যাবে, না হয় অবৈধ কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। তাদের ভাসানচরে পর্যায়ক্রমে স্থানান্তর করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘বিএসএফ কাঁটাতারের বেড়া কাটলেই গুলি চালায়। এখানে তারের বেড়া কাটলে আমাদেরও কঠোর হতে হবে।’

কক্সবাজার অঞ্চল মাদকপ্রবণ এলাকা বলেই এখানে সংসদীয় কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে বলেও মন্ত্রী জানান।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত কমিটির আগের বৈঠকে সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী প্রসঙ্গটি তোলেন। মাদক উৎপাদনকারী দেশ না হলেও উৎপাদনকারী দেশগুলোর কাছাকাছি অবস্থান, ভৌগোলিক কারণে বাংলাদেশ মাদকে আক্রান্ত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে ইয়াবা ও ক্রিস্টাল মেথ, ভারত থেকে হেরোইন, গাঁজা, ফেনসিডিল ও ইনজেক্টিক ড্রাগের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ ঘটে।’

পরে তিনি সীমান্তবর্তী এলাকায় মাদক চোরাচালান রোধকল্পে সীমান্ত নিশ্চিতকরণ, স্যাটেলাইট মনিটরিং প্রযুক্তি স্থাপন এবং চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন, চট্টগ্রাম জেলা ও কক্সবাজার এলাকাকে মাদকপ্রবণ অঞ্চল ঘোষণা করার প্রয়োজনীয়তার কথা জানান।

ওই বৈঠকে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল আশরাফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘গত ৩ বছরে মিয়ানমার সীমান্তে বিভিন্ন অভিযানের মাধ্যমে যে পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ, মাদক আটক করা হয়েছে, তার মূল্য ১ হাজার ৯শ কোটি টাকার বেশি।’

বৈঠকে ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল ফখরুল আহসান বলেন, ‘রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যা করছে, তা দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে করছে। এরা রাতে ওপারে যায় এবং তাদের সহযোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে মাদকপাচার করছে। যে মাদক উদ্ধারের কথা জানা যায়, তা মূলত ২ বা ৩ শতাংশ মাত্র। এতে সহজেই অনুমান করা যায়— কী বিশাল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সেখানে সম্পৃক্ত। এ এলাকাটি মাদকের অভয়ারণ্য। এটিকে কঠোরভাবে দমন না করলে তা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যাবে। সেখানে মসজিদের ইমামও মাদকপাচারের সঙ্গে জড়িত। এই এলাকায় দিনের বেলায় এক চিত্র, রাতে তা সম্পূর্ণ পাল্টে যায়। এ অবৈধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে স্থানীয় লোকও সম্পৃক্ত হয়ে যাচ্ছে।’

কোনাপাড়া ক্যাম্প ও নো-ম্যান্স ল্যান্ডে অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের চলাচল এবং যোগাযোগ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গারা আলাদা জনগোষ্ঠী, তাদের সংস্কৃতি আলাদা। এরা এ দেশে আশ্রয়গ্রহণকারী। তাদের অপরাধের বিচার দেশের প্রচলিত আইনে না করে, তাদের জন্য আলাদা আইনি ব্যবস্থা রাখা দরকার, যাতে অপরাধ সংঘটিত করে বের হয়ে যেতে না পারে। মাদকের বিচারকাজে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করে একটা উদাহরণ সৃষ্টি করা দরকার, যাতে অন্যরা ভয় পায়। বুঝতে পারে যে বেআইনি কাজ করলে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা বিদ্যমান আছে।’

বর্তমানে রোহিঙ্গা সমস্যা জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি বড় হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান।

তিনি বলেন, ‘২০১৭ সালে রোহিঙ্গা ডাটাবেজ তৈরি করা হয়। রোহিঙ্গা ডাটাবেজটি এনটিএমসিকে প্রদান করা হলেও ২০১৮ সালের পরবর্তী সময়ে তা হালনাগাদ করা হয়নি। ফলে বর্তমানের ডাটাবেজ না থাকায় আইন প্রয়োগকারী, গোয়েন্দা ও তদন্ত সংস্থাগুলো বিভিন্ন তদন্তের স্বার্থে রোহিঙ্গাদের হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ করতে পারছে না। এতে তদন্ত কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।’

কমিটির সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, ‘মাদকপাচারের বিভিন্ন রুটের মধ্যে কক্সবাজার রুটেই বেশিরভাগ মাদক প্রবেশের কথা জানা যায়।’

বর্তমানে মাদকপাচার কমে যাওয়ার পরিবর্তে এখন প্রায় তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে পীর ফজলুর বলেন, ‘২০২০ সালে একশর বেশি তালিকাভুক্ত মাদকপাচারকারী আত্মসমর্পণ করেছিল। যারা আত্মসমর্পণ করেছে, তারা আবারো এই পাচার কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়ে যাচ্ছে।’

কক্সবাজার এলাকায় মাদকপাচার রোধে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারীদের বিশেষ ভাতার আওতায় আনার কথাও বলেন এই সদস্য।

পাঠকের মতামত

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মানবিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে ইউনাইটেড নেশন টিম

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন ইউনাইটেড নেশন ফোরাম বাংলাদেশ স্টাডি প্রোগ্রাম (BSP) এর ...

কক্সবাজারে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে ধর্ম ও প্রশাসনের সমন্বিত উদ্যোগ

কক্সবাজারে বাল্যবিবাহ শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত হলো “বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে করণীয়” শীর্ষক আন্তঃধর্মীয় নেতৃবৃন্দের ...