প্রকাশিত: ১২/০১/২০১৭ ৯:০৯ এএম

উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
ভূরাজনৈতিক কারণে সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ ‘আপাতত’ সম্ভব না হলেও মহেশখালীর মাতারবাড়ির কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য নির্মিত জেটিই সেই অভাবের বেশ খানিকটা পুষিয়ে দিতে পারবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলেন, মাতারবাড়িতে নির্মাণাধীন জেটিতে ১৮ মিটার ড্রাফট ও কমপক্ষে ২২০ মিটার দৈর্ঘ্যের কমপক্ষে ৮০ হাজার মেট্রিকটনের বেশি ওজনের জাহাজ ভিড়তে পারবে। বলা যায়, মহেশখালীর মাতারবাড়িতে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রয়োজনে নির্মাণ হতে যাওয়া বন্দরে এই সুবিধা পেতে যাচ্ছে দেশ। এদিকে থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বরেই গভীর সমুদ্রবন্দরের স্বাদ পাওয়া যাবে।

জানা গেছে, ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে উপকূল থেকে সাগরের দুই কিলোমিটার দূর থেকে ৫৪ ফুট (১৮মিটার) গভীর ও প্রাথমিকভাবে ৩০০ ফুট চওড়া হলেও পরবর্তীতে ৭৫০ ফুট চওড়া চ্যানেলের মাধ্যমে সহজেই জাহাজ একেবারে চরের ভেতরে প্রবেশ করতে পারবে।

বর্তমানে মাতারবাড়ির সাইবার ডাইল গ্রামের উত্তর দিকের বিশাল চরে ১৮ মিটার ড্রাফটের চ্যানেল তৈরি করতে ড্রেজিংয়ের কাজ করছে বিশ্বের শক্তিশালী ৫টি ড্রেজারের একটি ক্যাসিওপিয়া ভি। কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পটি হবে দক্ষিণ দিকে। কিন্তু উত্তরের এতো বিশাল জায়গা কি কাজে ব্যবহৃত হবে জানতে চাইলে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (সিপিজিপিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিচালক আবুল কাসেম বলেন, ‘আমাদের ব্যবহারের পর বাকি জায়গা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ টার্মিনালের কাজে ব্যবহার করতে পারবে। এতে দেশ গভীর সমুদ্রবন্দরের সুবিধা পাবে। কারণ এই জেটিতে প্যানামেক্স (৮০ হাজার টনের বেশি ওজন ও ২২০ মিটার দৈর্ঘ্যের বেশি এবং ১২ মিটার ড্রাফটের বেশি জাহাজ) সাইজের ভিড়তে পারবে। এতে দেশের আমদানি-রপ্তানি সুবিধা বাড়বে। এছাড়া এই প্রকল্পের আওতায় কিছু রোড নেটওয়ার্কও করা হবে যাতে কনটেইনার পরিবহন সুবিধাও গড়ে উঠবে।’

গভীর সমুদ্রবন্দর হিসেবে তা ব্যবহার করতে পারার বিষয়ে কোনো আপত্তি চট্টগ্রাম বন্দরের রয়েছে কি-না জানতে চাইলে আবুল কাসেম বলেন, ‘কোনো আপত্তি নেই। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে একটি সমঝোতা চুক্তিও রয়েছে। তাই চাইলেই বন্দর কর্তৃপক্ষ তা ব্যবহার করতে পারবে।’

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের ড্রেজিংয়ের কার্যক্রম দেখার জন্য সম্প্রতি বন্দর কর্তৃপক্ষের দুজন কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। বিদেশ থেকে কোনো জাহাজ এলে কোনো না কোনো বন্দরের আওতায় আসতে হয়। সেই হিসেবে মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ৮০ হাজার টনের বাল্ক জাহাজগুলোকে চট্টগ্রাম বন্দরের নামে দেশে প্রবেশ করতে হবে এবং ভিড়তে হবে মাতারবাড়িতে। এ জন্য জেটির নিয়ন্ত্রণ থাকবে চট্টগ্রাম বন্দরের আওতাধীন। আর কয়লা উঠানো ও নামানোর পর ৫০০ মিটার দৈর্ঘ্যের জেটিতে কনটেইনারবাহী জাহাজও বন্দর কর্তৃপক্ষ চাইলে ভেড়াতে পারবে। আর সেখান থেকে মালামাল লাইটার জাহাজে করে বা সড়কপথে চট্টগ্রামে নিয়ে আসা যাবে।

ভূরাজনৈতিক কারণে সোনাদিয়ায় আমরা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করতে না পারলেও মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরের মাধ্যমে ‘মন্দের ভালো’ পাচ্ছি জানিয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মঈনুল ইসলাম বলেন, যেহেতু রাজনৈতিক কারণে সোনাদিয়ায় এখন গভীর সমুদ্র পাচ্ছি না, সেহেতু মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎকে ঘিরে তৈরি হতে যাওয়া বন্দরটিতে আমরা গভীর সমুদ্রবন্দরের সুবিধা পেতে পারি। এতে হয়তো আমরা আমাদের দেশের প্রয়োজনে তা ব্যবহার করতে পারবো। তবে সাগর থেকে ৩৫ কিলোমিটার ভেতরে ‘পায়রা’ কখনো গভীর সমুদ্রবন্দর হতে পারে না।

জাইকার অর্থায়নে আমরা একটি রেডিমেড গভীর সমুদ্রবন্দর পেলে আমাদের অর্থনীতির জন্য সহায়ক হবে জানিয়ে চিটাগাং জুনিয়র চেম্বারের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের যেহেতু ধারণক্ষমতার বাইরে গিয়ে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম করছে। সেহেতু এ ধরনের একটি গভীর সমুদ্রবন্দরের সুবিধা পেলে অবশ্যই আমাদের অর্থনীতির জন্য সহায়ক হবে।

শিপিং প্রতিষ্ঠান ওওসিএল এর মহাব্যবস্থাপক ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে সর্বোচ্চ ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৯ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারে। কিন্তু গভীর সমুদ্রবন্দরে ১২ মিটার ড্রাফটের বেশি ও প্রায় ২০০ মিটারের বেশি দৈর্ঘ্যের জাহাজ ভিড়তে পারে। মাতারবাড়িতে এই সুবিধার জাহাজ ভিড়তে পারবে। আর সেসব জাহাজে ৮ থেকে ১০ হাজার একক কনটেইনার নিয়ে জাহাজ ভিড়তে পারবে। কিন্তু আমাদের তো এতো বেশি কনটেইনারবাহী জাহাজের প্রয়োজন নেই। চট্টগ্রাম বন্দরে সাধারণত সাড়ে চার হাজার একক কনটেইনারের জাহাজ ভিড়ে থাকে। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ যদি চায় তাহলে বেশি কনটেইনারবাহী জাহাজ ভেড়াতে পারবে।

উল্লেখ্য, প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকার কয়লা বিদ্যুৎ নির্মাণ প্রকল্পে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) দিচ্ছে ২৯ হাজার কোটি টাকা ও বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে সাত হাজার কোটি টাকা। এই অর্থায়নের আওতায় গভীর সমুদ্রবন্দরের জন্য জেটি নির্মাণ করা হচ্ছে। আর রাজনৈতিক কারণে সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করা যাচ্ছে না বলে মাতারবাড়ি দিয়েই হয়তো গভীরসমুদ্র বন্দরের সুবিধা পাবে দেশ। সুত্র :বিবার্তা

পাঠকের মতামত

মিয়ানমারের আরেক গুরুত্বপূর্ণ শহর বিদ্রোহীদের দখলে

মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা দেশটির আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ শহরের দখল নিয়েছে। মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী তা’আং ...

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ও দূরপাল্লার ট্রেন পটিয়া স্টেশনে যাত্রা বিরতির দাবি

চট্টগ্রাম–কক্সবাজার ও দূরপাল্লার ট্রেন পটিয়া স্টেশনে যাত্রা বিরতিসহ বিভিন্ন দাবিতে রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিমকে স্মারকলিপি দিয়েছেন ...