প্রকাশিত: ০৮/০৮/২০১৭ ৭:৪১ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৩:৩১ পিএম

উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
কক্সবাজারে ভোটারদের বাড়িতে গিয়ে তথ্য সংগ্রহের বদলে বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে বসেই তথ্য সংগ্রহের কাজ করছেন কিছু তথ্য সংগ্রহকারী। ভোটার হতে ইচ্ছুক লোকজন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে দিনভর ভীড় জমাচ্ছেন সেখানে। এদের মধ্যে ভোটার হওয়ার উপযুক্ত অনেককে ফরম সংকটের কথা বলে তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বা পরে দেখা করতে বলা হচ্ছেÑএমন অভিযোগও পাওয়া গেছে।
গতকাল দুপুরে সরেজমিনে কক্সবাজার শহরের সেন্ট্রাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে গিয়ে দেখা যায়, লোকজন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে ভীড় করছেন। দোতলায় শিক্ষকদের কক্ষে বসে তথ্য সংগ্রহের বিশেষ ফরম পূরন করছেন বিদ্যালয়টির সহকারি শিক্ষক মর্জিয়া বেগম, মাহবুবা সুলতানা, অর্চনা ধর, ইসরাত জাহান ও ছালেহা বেগম। তাদের মধ্যে প্রথম চারজন কক্সবাজার পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটারদের তথ্য সংগ্রহের দায়িত্ব পেয়েছেন। পঞ্চমজন ছালেহা বেগম দায়িত্ব পেয়েছেন ৮ নম্বর ওয়ার্ডের তথ্য সংগ্রহের।ভোটারদের বাড়ি যাওয়ার বদলে অফিসে বসে তথ্য সংগ্রহের বিষয়ে জানতে চাইলে অর্চনা ধর বলেন, ‘আমরা ঘরে-ঘরে গিয়ে ভোটার করবো না। এখানেই করবো। আমাদের কাছে আর ফরম নেই। কারো বাড়িতে যাওয়ার দরকার নেই।’ এসময় মর্জিয়া বেগম নিজের চেয়ার থেকে উঠে কাজের কথা বলে কক্ষ ত্যাগ করেন। অন্যরা তড়িঘড়ি করে তথ্য সংগ্রহের কাগজপত্র গুছিয়ে নেন। ভোটার হতে আসা লোকজনকে বলা হয় হয় অফিস কক্ষের বাইরে চলে যেতে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেন্ট্রাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মর্জিয়া বেগম পৌরসভার ঘোনারপাড়া এলাকার, অর্চনা ধর ঘোনারপাড়ার গোলদীঘির দক্ষিণ পাড়ার, ইসরাত জাহান খাজা মঞ্জিল এলাকার, মাহবুবা সুলতানা আই.বি.পি মাঠ পূর্ব অংশ, গোলদীঘির পশ্চিম পাড়ার এবং ডিওয়ার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক জহির আলম মোহাজের পাড়া ও ঘোনারপাড়া এলাকার তথ্য সংগ্রহের দায়িত্ব পেয়েছেন। তাদের সুপারভাইজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সাহিত্যিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সেলিনা আক্তার।একই বিদ্যালয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ করা সহকারি শিক্ষিকা ছালেহা বেগম পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের জাদিরাম পাহাড় এলাকার তথ্য সংগ্রহের দায়িত্ব পেয়েছেন। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, তথ্য সংগ্রহকারীদের কেউই তথ্য সংগ্রহের জন্য ভোটারদের বাড়িতে যাননি। নিজেদের মর্জিমতো বিদ্যালয়ে বসে বা নির্দিষ্ট কোন বাড়িতে বসেই পুরো এলাকার তথ্য সংগ্রহ করেছেন। যদিও তাদের দাবী, তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে নিজেদের কাজ নিয়ম মেনেই করছেন তারা।
সম্প্রতি ভোটার তালিকা হালানাগাদ কার্যক্রম শুরুর আগে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) শাহদাত হোসেন চোধুরী গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, হালনাগাদের সময় তথ্য সংগ্রহকারীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের তথ্য সংগ্রহ না করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইনেই আছে তথ্য সংগ্রহকারীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করবেন। তাই কেউ এর ব্যতিক্রম করলে তা দ-নীয় অপরাধ।
গতকাল দুপুরে কক্সবাজার সেন্ট্রাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে কথা হয় ভোটার হতে ইচ্ছুক শহরের ঘোনারপাড়ার বাসিন্দা যুবক আব্দুর রহমানের সাথে। তিনি বলেন, কোন তথ্য সংগ্রহকারী আমাদের বাড়ি যায়নি। গত কয়েক দিন ধরে প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র নিয়ে এখানে-ওখানে ঘুরছি। আমার সকল কাগজপত্রই ঠিক আছে। তারপরও নানাভাবে আমাকে হয়ারানি করা হচ্ছে। একবার বলছে, ফরম নেই। আবার বলছে, কাউন্সিলরের টোকেন নিয়ে পরে দেখা করতে। কাউন্সিলর বলছেন, আর কিছু লাগবে না। আমি তো নাগরিক সনদে দস্তখত করে দিয়েছি। কি করবো বুঝতে পারছি না।’
শহরের ঘোনারপাড়ার তরুণ সমাজসেবক জাহেদুল গণি বলেন, ‘তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে গত ২৫ জুলাই থেকে। কিন্তু এই এলাকায় এখনো পর্যন্ত কোন তথ্য সংগ্রহকারীর পা পড়েনি। তারা নিজেদের ইচ্ছেমতো তথ্য সংগ্রহের কাজ করছেন বিদ্যালয়ে বসে। ভোটার হওয়ার উপযুক্ত অনেকে তাদের কাছে বারবার ধর্না দিয়েও ভোটার ফরম পূরণ করাতে পারছে না। অপরদিকে স্থানীয় একটি চক্র অনৈতিক সুবিধা নিয়ে রোহিঙ্গাদের ভোটার করতে মাঠে নেমেছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সহযোগীতায় তারা পৌরসভা থেকে ভুয়া জন্ম নিবন্ধন সনদ পর্যন্ত সংগ্রহ করছে। ইতোপূর্বে এভাবে অনেক রোহিঙ্গাই ভোটার হয়ে গেছে। কিন্তু ভোটার হওয়ার উপযুক্ত লোকজন ভোটার হতে পারছে না।’ প্রায় একই কথা জানান স্থানীয় জামাল সওদাগর, মনসুর আলমসহ অনেকেই।
মোহাজের পাড়ার তরুণ সমাজসেবক ও সাবেক ছাত্রনেতা আবু ওবায়েদ বলেন, ‘তথ্য সংগ্রহকারীদের দায়িত্ব হলো ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা। ভোটার হওয়ার উপযুক্ত কারা আছে তা খুঁজে বের করা। কিন্তু সেই নিয়ম মানা হচ্ছেনা মোটেও। কোন নির্দিষ্ট স্থানে বসেই তথ্য সংগ্রহকারীরা তাদের দায়িত্ব সেরে নিচ্ছেন। নির্বাচন অফিসও এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘অনেকক্ষেত্রে স্থানীয় প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধিরা প্রভাব খাটিয়ে তথ্য সংগ্রহকারীদের ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহে বাধা দিচ্ছেন। তাদের নির্দিষ্ট কোন স্থানে বসিয়ে রাখা হচ্ছে। সেখানে পছন্দের লোকজন এমনকি রোহিঙ্গাদের জন্যও ফরম পূরন করা হচ্ছে। অথচ প্রকৃত ভোটার হওয়ার উপযুক্ত অনেকে বাদ পড়ে যাচ্ছে।’
জেলা যুবলীগের নেতা ও শহরের বড় কবরস্থানপাড়া সমাজ কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, ‘তথ্য সংগ্রহকারীরা ভোটারদের বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে না এটা শতভাগ সত্য। আমার এলাকার প্রচুর লোকজন বিষয়টি আমাকে জানিয়েছে। এই ধরনের দায়িত্বে অবহেলা কোনভাবেই কাম্য নয়। সংশ্লিষ্ঠদের প্রতি আমার আহ্বান থাকবে, বাকি সময়টাতে হলেও যেন তথ্য সংগ্রহকারীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের তথ্য সংগ্রহ করে।’
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভুক্তভোগীরা আমার কাছে লিখিতভাবে তাদের অভিযোগের কথা জানাতে পারেন। আমি অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো।’
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যমান ভোটারের সাড়ে ৩ শতাংশ নতুন ভোটার অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্য নিয়ে কক্সবাজারে গত ২৫ জুলাই থেকে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আজ এবং আগামীকাল ৯ আগস্ট পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে। ২১৯ জন সুপারভাইজারের তত্ত্বাবধানে এক হাজার ৪৬ জন তথ্য সংগ্রহকারী গোটা জেলায় তথ্য সংগ্রহের কাজ করছে। জেলায় বর্তমানে বিদ্যমান ভোটারের সংখ্যা ১৩ লাখ ১৭ হাজার ৬৩২ জন। সেই হিসেবে এবারের হালনাগাদ ভোটার তালিকায় ৪৬ হাজার ১১৭ জন নতুন ভোটার অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। সুত্র: দৈনিক কক্সবাজার

পাঠকের মতামত

টানা ১০ দিন ঝরবে বৃষ্টি

মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে আগামী ১০ দিন চট্টগ্রামসহ দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকার ...

ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গা নিয়ে বেকায়দায় নির্বাচন কমিশন

মিয়ানমারে অত্যাচার-নির্যাতন ও উচ্ছেদের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার ও নোয়াখালীর কয়েকটি ক্যাম্পে ...

নির্বাচনে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে সেনাবাহিনী: প্রেস সচিব

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার ...