প্রকাশিত: ০৭/১০/২০২১ ৯:৫৮ এএম

ইউনিয়ন ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় সংলগ্ন গুলশান শাখার ভল্ট থেকে ১৯ কোটি টাকা উধাওয়ের ঘটনা ধরা পড়ার ১৬ দিন পরও কঠোর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকও নিশ্চুপ। ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক, সেকেন্ড অফিসারসহ দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। দায়সারাভাবে শুধু নিচের পর্যায়ের তিন কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। হাতেনাতে এত বড় জালিয়াতি ধরা পড়ার পরও কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং ইউনিয়ন ব্যাংকের এমন অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
গত ২০ সেপ্টেম্বর ইউনিয়ন ব্যাংকের গুলশান শাখায় বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি দল আকস্মিক পরিদর্শনে গিয়ে হিসাবের তুলনায় ভল্টে ১৯ কোটি টাকা কম পায়। ওইদিন শাখার হিসাবে ভল্টে ৩১ কোটি টাকা দেখানো হলেও পরিদর্শক দল গুনে পায় ১২ কোটি টাকা। বাকি ১৯ কোটি টাকার বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো জবাব দিতে পারেননি শাখার কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে গত ২৩ সেপ্টেম্বর সমকালসহ কয়েকটি গণমাধ্যমে রিপোর্ট প্রকাশের পর ব্যাংকের পক্ষ থেকে একটি ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। ওইদিন ব্যাংকের ডিএমডি হাসান ইকবাল সাংবাদিকদের জানান, লেনদেন সময়ের পর শাখার একজন গুরুত্বপূর্ণ গ্রাহক নগদ টাকা নেওয়ার জন্য উপস্থিত হন। গ্রাহকের গুরুত্ব এবং ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্ক বিবেচনায় তার কাছ থেকে চেক জমা রেখে নগদ টাকা দেওয়া হয়। নিয়মের ব্যত্যয় হওয়ায় ওইদিন শাখার তিনজনকে প্রত্যাহার এবং তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানানো হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ভল্ট হলো আস্থার জায়গা। সাধারণভাবে ভল্টের টাকা সরানোর ঘটনা ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সংশ্নিষ্টদের পুলিশে সোপর্দ করার কথা। এখানে ব্যাখ্যার জন্য বসে থাকার কোনো অবকাশ নেই। অথচ এ ঘটনায় এখনও পুলিশের কাছে সাধারণ ডায়েরিও করা হয়নি। উল্টো ঘটনা ধামাচাপা দিতে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, ব্যাংকের ব্যাখ্যা যদি ঠিকও হয়, তাহলেও রাতের অন্ধকারে কে এত টাকা বের করে কোথায় ব্যয় করল, অন্তত তা খুঁজে একটা গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল।
অভিজ্ঞ ব্যাংকারদের কয়েকজনের সঙ্গে সমকাল এ বিষয়ে কথা বলেছে। তারা বলেন, ইউনিয়ন ব্যাংকের দেওয়া ব্যাখ্যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা, সন্ধ্যার পর এত নগদ টাকার বৈধ ব্যবহারের সুযোগ নেই। আবার নগদে ১৯ কোটি টাকা বহন সহজও নয়। সাধারণভাবে ব্যাংকিং সময়েও কেউ শাখা থেকে নগদে এত টাকা তুলতে চাইলে মৌখিকভাবে হলেও আগাম নোটিশ করে। একসঙ্গে এত টাকা নিতে আলাদা গাড়ি, পুলিশ প্রোটেকশন লাগে। আবার এ পরিমাণ টাকা রাখার জন্য ভল্ট দরকার হবে। যে কারণে সাধারণভাবে সন্ধ্যার পর বিভিন্ন ব্যক্তি টাকা জমা দিলেও উত্তোলন করেন না। ফলে এক রাতে বৈধ উপায়ে এত অর্থ সরানোর বিষয়টি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আবার শাখা কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এ পরিমাণ টাকা সরালে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হতো। ফলে প্রভাবশালী কেউ যে এই অর্থ সরিয়েছেন, তা নিশ্চিতভাবে ধারণা করা যায়। যে কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম গত মঙ্গলবার সমকালকে বলেন, ব্যাংক প্রাথমিকভাবে একটি জবাব দিয়েছে। ব্যাংকের গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টের আলোকে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছে। অন্যদিকে, ইউনিয়ন ব্যাংকের এমডি এবিএম মোকাম্মেল হক চৌধুরীকে টেলিফোন করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
জানা গেছে, গত ২৩ সেপ্টেম্বর গণমাধ্যমে রিপোর্ট প্রকাশের দিন দেওয়া ব্যাখ্যার আদলে বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি জবাব পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়, গুলশান শাখার তিন কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। আর ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ের এসইভিপি গোলাম মোস্তফার নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি সুপারিশসহ রিপোর্ট দেবে। সে আলোকে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সুত্র: সমকাল

পাঠকের মতামত