প্রকাশিত: ৩১/১০/২০১৬ ৭:২২ এএম , আপডেট: ৩১/১০/২০১৬ ৯:৫০ এএম

আহমদ গিয়াস, কক্সবাজার ::

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে এখনও বিরাজ করছে থমথমে অবস্থা। বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের অভ্যন্তরে স্বাধীনতাকামী আরাকান আর্মি ও আরাকান মুজাহিদিন গোষ্ঠীর সাথে সে দেশের সেনাবাহিনী ও পুলিশের অব্যাহত সংঘর্ষের প্রেক্ষিতে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী পুরো এলাকায় বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) পাশাপাশি টহল দিচ্ছে মিয়ানমার সেনাবাহিনীও। ইতোমধ্যে মিয়ানমার সরকার ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সীমান্তে আরো এক তৃতীয়াংশ বা ৩০টি সীমান্ত চৌকি বাড়াবে। বিজিবিও বিষয়টি পর্যবেক্ষণসহ সীমান্তে বাড়তি নিরাপত্তা ও অতিরিক্ত সতর্কাবস্থা জারি করেছে। গত ৯ অক্টোবর ভোররাতে বর্ডার গার্ড পুলিশের ৩টি সীমান্ত চৌকিতে হামলা চালায় সেখানকার অজ্ঞাত সশস্ত্র গোষ্ঠী। এতে বিজিপির ৯ সদস্য নিহত ও ৭ জন হামলাকারী মারা যান। এই ঘটনায় রোহিঙ্গা মুসলিমদের নেতৃত্বাধীন রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনকে (আরএসও) দায়ী করছে মিয়ানমার সরকার। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের দুর্গম এলাকায় অবস্থান করে আরএসও তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে বলে অভিযোগ করছে মিয়ানমার। এরই প্রেক্ষিতে রোহিঙ্গা মুসলিম অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে যৌথ অপারেশন চালাচ্ছে সেনাবাহিনী ও বিজিপি সদস্যরা। এ কারণে এসব গ্রামে এখন আতংক দেখা দিয়েছে। আতঙ্কে অন্তত ২০ হাজার মানুষ ঘরবাড়ি ছাড়া হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন বলে রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে। এছাড়া এই ঘটনায় ইতোমধ্যে শতাধিক সন্দেহভাজনকে আটকের পর হত্যা করা হয়েছে বলেও দাবি রোহিঙ্গা গণমাধ্যমের। তাছাড়া কয়েকশ’ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলেও জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থায় অভিযোগ করেন রোহিঙ্গা নেতারা। এ কারণে আতংকিত রোহিঙ্গারা গ্রাম ছেড়ে পালাচ্ছেন। অনেকেই সেনাবাহিনীর ভয়ে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে পালানোর সময় পানিতে ডুবে মারা গেছেন। পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের অধিকাংশই বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য এখন সীমান্তে অপেক্ষা করছেন। তবে বিজিবির কড়া নজরদারির কারণে তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পেরে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে পালানোর চেষ্টা করছে। বাংলাদেশ সীমান্তে অবস্থানকারীরা সুযোগ পেলেই দলে দলে বাংলাদেশে প্রবেশ করবে। ইতোমধ্যে অনেকেই সীমান্তরক্ষীদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে বলে সীমান্তের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।

সূত্রে জানা গেছে, গত ৩ মার্চ মিয়ানমারের বুচিদং-এ আরাকান আর্মির হামলায় মিয়ানমার সেনাবাহিনীর একজন মেজরসহ ৩০ সেনাসদস্য নিহত হন। এসময় তাদের দুটি সাজোয়া যানও ধ্বংস করে দেয়া হয়। এই হামলার ক্ষত না শুকাতেই আরাকান মুজাহেদিনদের হামলায় গত ৯ অক্টোবর মারা যান বিজিপির ৯ সদস্য। এ বছরের মে মাসে টেকনাফের একটি আনসার ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে একজনকে হত্যা এবং ১১টি আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি লুটের ঘটনায় আরাকান মুজাহিদিনদের গ্রুপ জড়িত ছিল বলে বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। এরপর থেকেই কার্যত সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করে বিজিবি। বর্তমানে মিয়ানমারের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী জনপদে নতুন করে অস্থিতিশীলতা দেখা দেওয়ায় বাংলাদেশেও সৃষ্টি হয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। এর ফলে সীমান্তে কড়া নজর রাখছে বিজিবি। পাশাপাশি মিয়ানমারও বাংলাদেশ সীমান্তে শক্তি বৃদ্ধি করে চলেছে। ইতোমধ্যে সেদেশের সরকার বাংলাদেশ সীমান্তে ৩০টি নতুন সীমান্ত চৌকি স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ সীমান্তে তাদের ৯৬টি সীমান্ত চৌকি রয়েছে।

পাঠকের মতামত

মিয়ানমারের আরেক গুরুত্বপূর্ণ শহর বিদ্রোহীদের দখলে

মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা দেশটির আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ শহরের দখল নিয়েছে। মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী তা’আং ...

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ও দূরপাল্লার ট্রেন পটিয়া স্টেশনে যাত্রা বিরতির দাবি

চট্টগ্রাম–কক্সবাজার ও দূরপাল্লার ট্রেন পটিয়া স্টেশনে যাত্রা বিরতিসহ বিভিন্ন দাবিতে রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিমকে স্মারকলিপি দিয়েছেন ...