প্রকাশিত: ১০/১০/২০১৭ ১০:২৩ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১২:২৮ পিএম

জসিম মাহমুদ,টেকনাফ::
সকাল সাড়ে সাতটা। শাহপরীর দ্বীপ জেটির সামনে নিথর দেহ নিয়ে কান্নাকাটি করছেন দুইজন শিশু মো. জোবাইর (১১) ও মো. আলী আকবর (১০)। কিছুতেই থামছে না তাদের কান্না। পাশে আরও কয়েকজন পুরুষ ও নারী কান্নাকাঠি করছেন। তার মধ্যে মো. জোবাইর পরিবারের সবাইকে হারিয়ে ফেলেছেন।
জোবাইর বলেন, মিয়ানমারের বুচিদংয়ের পোহামপাড়া তাদের বাড়ি ছিল। কোরবানির ঈদের দুদিন আগে সেনাবানিীর সদস্যরা গ্রামে এসে বড় ভাই আজম উল্লাহসহ ৩১জনকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর তিনি আর বাড়িতে ফিরে আসেনি। তারমধ্যে সেনাবাহিনী কোরবানির তিনদিন পর গ্রামে হামলা চালায়। এসময় গ্রামবাসীরা প্রাণরক্ষার্থে পালিয়ে ধান খেতে গিয়ে আশ্রয় নিলে সেনা সদস্যরা বাড়িঘরে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেন। এসময় পরিবারের ছয়জন সদস্য বাবা হাবিব উল্লাহ, মা মরিয়ম খাতুন, বোন মিনারা বেগম, দিলদার বেগম, হাবিবুর রহমান ও আমিসহ মংডুর সুধাপাড়ায় আশ্রয় নিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে গত শুক্রবার (৬অক্টোবর) বিকেলে ওই গ্রামের কয়েকটি বাড়িতে আগুন দেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এরপর প্রাণে বাঁচতে প্যারাবনের পাশ দিয়ে পায়ে হেঁটে নাক্ষনদিয়া এলাকা এসে দেখি এখানে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের জন্য অপেক্ষা করছে। রোববার সন্ধ্যা সাতটার দিকে একটি নৌকায় প্রায় ৬৫জনের মতো শিশু, নারী ও পুরুষকে উঠানো হয়। নৌকাটি শাহপরীর দ্বীপের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেওয়ার প্রায় আধাঘন্টা পরে প্রবল ঢেউয়ের কবলে পড়ে যায়। এসময় নৌকায় থাকা শিশু ও নারীরা কান্নাকাঠি করছিলেন। নাফনদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনা পার হওয়ার কিছুক্ষণ পরে আরেকটি ঢেউয়ের কবলে পড়ে নৌকাটি উল্টে যায়। ওই সময় আমি একটি ছোট জারিকেনের সহযোগিতায় ভাসমান থাকি। এরপর বিজিবির সদস্যরা আমাকে উদ্ধার করে জেটিতে নিয়ে আসে। তখনও পরিবারের কারো সঙ্গে দেখা মিলছে না। কিছুক্ষণ পরে জীবিত উদ্ধার আরও ছয়জনকে নিয়ে আসে। তাদেরও কারো স্বামী, ছেলে ও মেয়ে ; কারো বাবা-মা, ভাই-বোন ও আবার কারো ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রী হারিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমি তো নৌকা ডুবিতে সব কিছুই হারিয়ে ফেলেছি। এমনকি বাবা-মা, দুই বোন ও এক ভাইয়ের লাশও পায়নি। আমি কার কাছে যাব, কি করব। কিছুই বুঝতে পারছি না। আল্লাহ আমার কাছ থেকে সবকিছুই এভাবে কেড়ে নিল। আমি কি অপরাধ করেছি।
নৌকা ডুবিতে বেঁেচ গেলেন মো. আলী আকবর (১০)। তাদের বাড়ি ছিল মিয়ানমারে বুচি দংয়ের কুবাই গ্রামে। তাদেরও ইচ্ছে ছিল বড় হয়ে একদিন লেখাপড়া করবে। কিন্তু সেদেশের মগরা তা করতে দিচ্ছে না রোহিঙ্গাদের। চালানো হচ্ছে দমন-নিপীড়ন, জ্বালাও পোড়াও। তাই প্রাণ বাঁচাতে পরিবারের পাঁচ সদস্য নিয়ে পালাতে গিয়ে নৌকা ডুবিতে মা জাহিদা বেগম ও ভাই রিয়াজুল হাসান এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। ভাগ্যক্রমে বেঁেচ গেলাম আমি, বাবা নুর আলী ও বোন সফিনা বেগম।
মো. আলী আকবর বলেন, নৌকা ডুবিতে সবাই কেহ না কেহ, কারো না কারো আত্মীয়-স্বজন হারিয়েছেন।

পাঠকের মতামত

কক্সবাজার মহাসড়কে বেপরোয়া ঈগল বাসের ধাক্কায় প্রাণ গেল মোটরসাইকেল আরোহীর

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়ায় বাসের ধাক্কায় জায়েদ হাসান সাকিব নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। রবিবার ...

জাসদ কার্যালয়ের জায়গায় ‘শহীদ আবু সাঈদ জামে মসজিদ’ নির্মাণের ঘোষণা

বগুড়া শহরের জিরো পয়েন্ট সাতমাথা সংলগ্ন এলাকায় বৃহস্পতিবার রাতে ভেঙ্গে ফেলা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ-ইনু) ...

কোনো মাস্টার মাইন্ড জামায়াত বিশ্বাস করে না : কক্সবাজারে শফিকুর রহমান

জুলাই অভ্যুত্থানের কৃতিত্ব মহান আল্লাহর, নেতৃত্বে ছাত্র-জনতা বলে মন্তব্য করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. ...

বাড়ছে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ, আটক ৩৩

বান্দরবানের আলীকদম সীমান্তে বাড়ছে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সংখ্যা। আজও বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকালে শিশুসহ ৩৩ মিয়ানমারের নাগরিককে আটক ...