ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ০২/০৩/২০২৪ ১০:৪৯ এএম

হিন্দু না মুসলিম এই বিতর্কে ঢাকা মেডিকেলের মর্গে পড়ে ছিল রাজধানীর বেইলি রোডে আগুনে নিহত এক তরুণীর মরদেহ। অভিশ্রুতি শাস্ত্রী নামের ওই নারী আসলে বৃষ্টি খাতুন। এনআইডির ফিঙ্গারপ্রিন্টের মাধ্যমে এই বিতর্কের অবসান হয়। পরে পরিবারের হাতেই তুলে দেওয়া হয় বৃষ্টির মরদেহ।

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে দায়িত্বরত পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল জব্বার সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, শুক্রবার (১ মার্চ) রাতেই সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে তার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

এর আগে, মেয়ের মৃত্যুর খবরে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলা থেকে ছুটে ঢাকায় আসেন বৃষ্টি খাতুনের বাবা সবুজ শেখ। রাত থেকে অজ্ঞাত পরিচয়ে পড়ে থাকা মেয়ের মরদেহ দেখে তার পরিচয় শনাক্ত করেন। তবে এরপরই বাধে বিপত্তি।

মরদেহটি দেখে তার সহকর্মী ও পরিচিতরা দাবি করেন, নিহত তরুণীর নাম অভিশ্রুতি শাস্ত্রী। সনাতন ধর্মের অনুসারী তিনি। তবে তাদের এই দাবি কোনোভাবেই মানতে নারাজ বাবা পরিচয় দেওয়া মুসলিম ধর্মাবলম্বী সবুজ শেখ।

হিন্দু-মুসলিম বিতর্কে মর্গে পড়ে আছে অভিশ্রুতির লাশ
সবুজ শেখ ও স্বজনরা তার জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে তাকে বৃষ্টি খাতুন বলে দাবি করছিলেন, ঠিক তখন সনাতন ধর্মের কয়েকজন তার ফেসবুক আইডি ও সিভি দেখাচ্ছিলেন সাংবাদিকদের। তাদের চাওয়া, পূজার্চনা করা অভিশ্রুতি শাস্ত্রীর আসল বাবা- মাকে খুঁজে বের করে তাদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হোক।

পরে পরিচয় নিশ্চিত হতে শুক্রবার ওই সাংবাদিকের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে পরীক্ষা করা হয়। তাতে দেখা যায়, এনআইডি বা জাতীয় পরিচয়পত্রে তার নাম বৃষ্টি খাতুন। বাবার নাম সবুজ শেখ আর মায়ের নাম বিউটি বেগম।

এনআইডি অনুযায়ী, ওই সাংবাদিকের বাড়ি কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার বনগ্রাম গ্রামে। এনআইডির তথ্যানুযায়ী, পরিচয় শনাক্ত হওয়ায় সাংবাদিক অভিশ্রুতি ওরফে বৃষ্টির মরদেহ তার বাবা-মায়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে গ্রিন কজি কটেজ নামের সাততলা ওই ভবনের দ্বিতীয় তলায় কাচ্চিভাই রেস্টুরেন্টে আগুনের সূত্রপাত। আগুন লাগার কিছু সময় পরই একটি গ্যাস সিলেন্ডার বিস্ফোরিত হওয়ায় আগুন ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। ২ ঘণ্টার চেষ্টা চালিয়ে সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।

ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, রাত পৌনে ১০টার দিকে বেইলি রোডে অবস্থিত কাচ্চিভাই রেস্টুরেন্টের নিচতলায় আগুন লাগে। গ্যাস সিলিন্ডারের লিকেজজনিত ত্রুটির কারণে আগুন লেগে থাকতে পারে বলে রেস্টুরেন্টে কর্মরত কর্মচারীদের মাধ্যমে তথ্য পায় তারা। রাত ৯টা ৫৬ মিনিটের দিকে সর্বপ্রথম ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে। পরে একে একে যোগ দেয় আরও ১২টি ইউনিট। কিন্তু এর আগেই ভবনজুড়ে আগুনের ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে। তখন জীবন বাঁচাতে সবাই দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকেন। ভবনে আটকে থাকা লোকজনদের অনেকে ছাদে আশ্রয় নেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দ্বিতীয় তলায় আগুন লাগার পর তা ওপরের তলাগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্কিত লোকজন ওপরের দিকে উঠে যায়। এ সময় ভবন থেকে তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে কয়েকজন আহত হন। তাদের মধ্যে ১২ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

অগ্নিকাণ্ডে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৪৬ জন নিহত হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।

এর আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন ৪৪ জন নিহতের কথা জানান। এর মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩৩ জন, শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে ১০ জন এবং কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে ১ জন নিহত হয়। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা অনেক।

আহতদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুজন এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আটজন ভর্তি আছেন। বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি আটজনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

পাঠকের মতামত

অপহরণের পর মুক্তিপণের জন্য বাবাকে শোনানো হচ্ছে নির্যাতনের আর্তনাদ

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থেকে কক্সবাজার আসার পথে অপহৃত তরুণ রিয়াজুল হাসানকে (১৮) ধারাবাহিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে। ...

ফেসবুকে শাহজালাল বাবলুর স্ট্যাটাস নিয়ে , ডাঃ রুমির বক্তব্য ও তীব্র প্রতিবাদ

শাহজালাল বাবলুর স্ত্রী শারমিন হিমু কয়েক মাস ধরে স্বনামধন্য গাইনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আরিফা মেহের রুমির ...