প্রকাশিত: ০৮/০১/২০১৭ ৭:৫৫ এএম

নিউজ ডেস্ক::
কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের রামুর রশিদ নগরীর পানিরছরা গ্যারেজ এলাকায় চলন্ত বাস উল্টে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে গত ১১ ডিসেম্বর। গাড়ির ভেতর চাপা পড়েন অর্ধশত যাত্রী। তাদের উদ্ধারে স্থানীয়দের পাশাপাশি সেনা-বিজিবি-পুলিশসহ প্রশাসনের অনেকেই শ্রম দিয়েছেন। আহতদের মধ্যে নারীসহ চারজন মারা যান।

কিন্তু দুর্ঘটনার এই ভয়াবহতাকে ছাড়িয়ে যায় আহত এক শিশু কন্যাকে নিয়ে কান্নারত দৌড়ানো শের আলী নামের স্থানীয় অধিবাসী পুলিশ সদস্যের ছবি, যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।

দুর্ঘটনা কবলিত বাসের ভেতর থেকে শিশুটিকে অনেক কষ্টে জীবিত উদ্ধার করে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে শের আলীর দৌড়ানোর কাহিনী নিয়ে মানবতার জয়গান গেয়ে গণমাধ্যমগুলো ভিন্ন ভিন্ন প্রতিবেদন করেছে। এরই সূত্র ধরে, সারা দেশের অসংখ্য মানুষের সাধুবাদ পান শের আলী।

এছাড়া নিজ বিভাগ বাংলাদেশ পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দলের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পক্ষ থেকে ৫ জানুয়ারি বাঁধানো একটি বাঘের প্রতিকৃতি পুরস্কার পান শের আলী পান।

এ পর্যন্ত সব কিছুই ঠিকই ছিল। কিন্তু ৬ জানুয়ারি তার নিজ গ্রাম পানিরছরা নাদেরুজ্জমান উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত মুক্তিযুদ্ধের বিজয় উৎসব অনুষ্ঠানে শের আলীকে নিয়ে এতো দিনের সব গল্পই ওলটপালট করে দেয়া হয়েছে। দুর্ঘটনা কবলিত বাসের বডি কেটে ভেতরে ঢুকে আহত ওই মেয়েটিসহ আরো অনেককেই জীবিত বের করে আনা স্থানীয় ফারুক মিস্ত্রি নামের এক যুবককে পুরস্কৃত করেছে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় উৎসব আয়োজক কমিটি।

বক্তব্যে সেদিনের ঘটনায় সাহসী ভূমিকার জন্য পানিরছরা লামারপাড়ার আহমদ রশিদের ছেলে ফারুক আহমদ মিস্ত্রির ভূয়সী প্রশংসা করেন তারা।

শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত রশিদনগর নাদেরুজ্জামান উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি বজল আহমদ বাবুলের সভাপতিত্বে ও মুক্তিযুদ্ধের বিজয় উৎসব আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক মাস্টার সরওয়ার কামালের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, সিনিয়র সহ-সভাপতি রেজাউল করিম, জেলা পরিষদ সদস্য ও রামু উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শামশুল আলম মণ্ডল, বেসরকারি সংস্থা অগ্রযাত্রার চেয়ারম্যান নীলিমা আকতার চৌধুরী লাকি প্রমুখ।

বিজয় উৎসবের আহ্বায়ক সরওয়ার কামাল তার বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধে যুবকদের ভূমিকা সম্পর্কে বলতে গিয়ে ১১ ডিসেম্বরের বাস দুর্ঘটনায় স্থানীয় যুবকদের এগিয়ে আসার উদাহরণ দেন।

এসময় তিনি বলেন, কেউ কাউকে ডাকেনি। সৌদিয়া পরিবহনের লিং রোড কাউন্টার ম্যানেজার স্থানীয় রুহুল আমিন, আওয়ামী লীগ নেতা সায়েম, যুবলীগ নেতা হেলাল, মুবিনুল, ফিলিং স্টেশন মালিক নাছির, ফার্মেসি মালিক তাওহীদ, স্বাস্থ্যকর্মী এনাম, ফারুক মিস্ত্রি, ওয়ার্কসপ মালিক সুজিত, গ্যারেজ মালিক জাফর, সিএনজি চালক রাসেল, ইজিবাইক চালক ছোটনসহ আরো বেশ কয়েকজন যুবক নিজ উদ্যোগে ঘটনাস্থলে এসে যানজট নিরসন, আহতদের উদ্ধার ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। তাদের মাঝে সবচেয়ে বেশি জীবনের ঝুঁকি নেয়া ফারুক মিস্ত্রিকে পুরস্কৃত করে যুবসমাজকে ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টার কথা বলেন তিনি। এ সময় উৎসবে হাজির শের আলীকে অতিথিদের জন্য আনা একটি ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়।

ওই বক্তব্য শুনে কৌতূহল জাগে দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় কয়েকজনকে ওই দিনের আসল ঘটনা সম্পর্কে বলতে বলেন এই প্রতিবেদক।

তারা প্রথমে বলতে না চাইলেও পরে পরিচয় গোপন রাখা শর্তে বলেন, উল্টে যাওয়া বাসের কাছে এসে যে যার মতো চেষ্টা করছিল কি করে যাত্রীদের বের করা যায়। সে সময় নিজ বুদ্ধিমত্তা ও কবির মেডিকোর মালিক তওহীদের সহযোগিতায় উল্টে যাওয়া গাড়ির বডি কেটে ভেতরে ঢুকেন ফারুক মিস্ত্রি। তিনি একে একে অনেককে উদ্ধার করে কাটা অংশ দিয়ে বাইরে বের করে দেন। এসময় আহতদের রক্ত ও পোড়া মবিলে ভিজে যায় ফারুকের শরীর ও জামা-কাপড়।

সবাইকে বের করার পর এক মেয়ে শিশুকে ফারুক অক্ষত অবস্থায় গাড়ির কাটা অংশ দিয়ে বাইরে বের করে দিতে চাচ্ছিলেন। দুইজন এক সঙ্গে বের হতে না পেরে মেয়েটিকে ধরতে বাইরে দাঁড়ানো লোকজনের সহযোগিতার জন্য ডাক দেন ফারুক। এসময় এগিয়ে এসে শের আলী মেয়েটিকে নিয়ে দৌড় দেন এবং কান্না করেন। দৃশ্যটি অনেকে ক্যামেরাবন্দি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেয়। পরে অনেক গল্প হয়েছে। সেখানে শের আলী গাড়ির ভেতর থেকে মেয়েটিকে বের করেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

তারা আরো বলেন, গণমাধ্যমে ছাপানো শিশু কোলে দৌড়ানো শের আলীর ছবিটি ভালো মতো পরখ করলেই এর আসল সত্য বেরিয়ে আসবে। যারা গাড়ির ভেতর ঢুকেছে তাদের গায়ে রক্ত ও গাড়ির মবিল লেগে জামা এবং শরীর দুটোই নষ্ট হয়েছে। কিন্তু শের আলীর জামা পরিপাটি ছিল। তার প্যান্টের ডান পকেটে সানগ্লাস, চাবির রিং ও ব্যবহার্য আধুনিক সরঞ্জাম ছবিতে পরিপাটি দেখা যায়।

শের আলীর কান্না সবাইকে নাড়া দিয়েছিল বলে কেউ এসব খেয়াল করেনি। কিন্তু অন্যের কষ্টকে তুলে না ধরে নিজেকে হিরো হিসেবে তুলে ধরায় সবাই শের আলীর ওপর ক্ষুব্ধ। তবে তিনি পুলিশের সদস্য হওয়ায় হয়রানির ভয়ে কেউ মুখ খোলেননি বলে দাবি তাদের।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া শের আলীর ছবিটি পরখ করে দেখে তাদের বক্তব্য সঠিক বলে মনে হয়েছে। প্রচার রয়েছে, শুক্রবারের বিজয় উৎসবে তাকে আমন্ত্রণ করা হয়নি। এরপরও আয়োজন স্থলে আসায় শুধু পুলিশ সদস্য হিসেবে চক্ষু লজ্জায় তাকে ফুল দেয়া হয়।

বিজয় উৎসবে সেদিনের ঘটনার নেপথ্য নায়ককে পুরস্কৃত করা ও আসল বিষয় সম্পর্কে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে আলোচিত পুলিশ সদস্য শের আলী বলেন, সেদিন সবাই কষ্ট করেছে। ফারুকই গাড়ির বডি কেটে আহতদের বের করার সুযোগ করে দেয়।

কেউ সেদিন পুরস্কারের আশায় কাজ করেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ফারুকের এ পুরস্কার প্রাপ্য ছিল। তবে তিনিই মেয়েটিকে গাড়ির ভেতর থেকে বের করে আনেন বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, আমাকে ফুল দিলো না কাটা দিলো তা দেখার বিষয় নয়।

তার পরিপাটি জামা ও অন্যান্য বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, আমার চশমাটা ভেঙে গেছে। পুরস্কারের আশায় তিনি কাঁদেননি উল্লেখ করে বলেন, এসব নিয়ে এখন টানাটানি করার দরকার কী? জাগোনিউজ

পাঠকের মতামত

রামুর ফতেখাঁরকুলে উপ-নির্বাচনে প্রতীক পেয়ে প্রচারনায় ৩ চেয়ারম্যান প্রার্থী

রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদের উপ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধি ৩ প্রার্থীকে প্রতীক বরাদ্ধ দেয়া ...

টেকনাফের পৌর কাউন্সিলর মনিরুজ্জামানের সম্পদ জব্দ দুদকের মামলা

টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর মো. মনিরুজ্জামানের সম্পদ জব্দ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কক্সবাজার জ্যেষ্ঠ স্পেশাল ...