প্রকাশিত: ০৪/০৪/২০২১ ১:১৩ পিএম

ইমাম খাইর, কক্সবাজার
সব ধরনের জনসমাগম সীমিতকরণ ও উচ্চ সংক্রমণযুক্ত এলাকায় সব ধরনের জনসমাগম নিষিদ্ধ করার কথা থাকলেও মানা হচ্ছে না।

কক্সবাজার পৌরসভার ‘পশ্চিম নতুন বাহারছরা গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিমিটেড’ (যার নিবন্ধন নং-২১৩১) নামক একটি সমিতির নির্বাচন আয়োজন চলছে। আগামী ১০ এপ্রিল উপজেলা সমবায় কার্যালয়ের অধীনে এই নির্বাচন। সেই লক্ষে প্রচারণাসহ সব কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে আয়োজক ও প্রার্থীরা।

করোনা পরিস্থিতি দিনদিন ভয়াবহ হওয়ায় দেশের সব উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন স্থগিত করেছে কমিশন। সরকারের পক্ষ থেকে জারি করা হয়েছে ১৮ দফা নির্দেশনা। জেলার সব পর্যটন স্পট সাময়িক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সচেতনতামূলক প্রচারণার পাশাপাশি মোবাইলকোর্টের মাধ্যমে জরিমানাও করা হচ্ছে। এসবের মাঝেও পর্যটন এলাকার একটি সমিতির নির্বাচন আয়োজন করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত, ভাবিয়ে তুলেছে সাধারণ মানুষকে।

এলাকাবাসীর প্রশ্ন- জীবনের চেয়ে কি নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ?

শনিবার (৩ এপ্রিল) সরেজমিন দেখা গেছে, সরকারী নির্দেশনা অমান্য করে প্রার্থীরা চালাচ্ছে নির্বাচনী প্রচারণা। প্রার্থী এবং ভোটারদের স্বাস্থ্যবিধি মানার কোন মানসিকতাও যেন নেই। ভোট গ্রহণের প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছে সমবায় অফিস।

প্রতিদিন সন্ধ্যা হলে প্রার্থীদের জমজমাট প্রচারণা দেখা যায়। তাতে করে স্থানীয়দের মাঝে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

স্থানীয়রা বলছে- সভাপতি প্রার্থী মোরশেদুল আজাদ আবু, ফরিদুল আলম, সহসভাপতি প্রার্থী আবুল মাছন, ইসকান্দর মির্জা, সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী মো. শফি উল্লাহ শেখর, মো. বাবুল মিয়াসহ প্রার্থীরা প্রচারকার্য চালাচ্ছেন। ব্যানার, পোস্টারে ছেয়ে গেছে গ্রামের অলিগলি। জমেছে চায়ের দোকানে আড্ডা। অনেকে এই নির্বাচনকে উৎসব হিসেবে নিয়েছে। যে কারণে স্বাস্থ্যবিধি মানছে না ভোটার ও প্রার্থীরা।

পশ্চিম নতুন বাহারছরা গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতি লি. এর নির্বাচন কমিটির সভাপতি কক্সবাজার সদর উপজেলা সমবায় কার্যালয়ের সহকারী পরিদর্শক আজিজুল হক মঞ্জু। সদস্য হিসেবে রয়েছেন- উত্তম রায় চৌধুরী ও গিয়াস উদ্দিন।

গত ২৮ মার্চ প্রকাশিত চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় ১২টি পদের বিপরীতে ১৬ জনের নাম দেখা গেছে।

সভাপতি, সহসভাপতি, সাধারণ সম্পাদক পদে দুইজন করে প্রার্থী। কোষাধ্যক্ষ পদে একজন ও সদস্য পদে ৯ প্রার্থী রয়েছে। সমিতির মোট ভোটার সংখ্যা ২৭৯।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিটির সভাপতি ও কক্সবাজার সদর উপজেলা সমবায় কার্যালয়ের সহকারী পরিদর্শক আজিজুল হক মঞ্জু বলেন, আপাতত নির্বাচন হবে, জানি। না হওয়ার ব্যাপারে উপর থেকে কোন নির্দেশনা আমরা এখনো পাই নি।

জেলা সমবায় অফিসার মো. জহির আব্বাস এ বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছেন বলে জানান।

করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করেছে জেলা প্রশাসন। জনসচেতনতা তৈরীতে মাস্ক বিতরণ ও নিয়মিত প্রচারণা চালানো হচ্ছে। অদেশ অমান্যকারীদের মোবাইলকোর্টের মাধ্যমে জরিমানাও করছেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটবৃন্দ।

এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, করোনাকালে সনসমাগম হয় এমন কোন কাজ করা যাবে না। স্বস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। এ বিষয়ে ১৮টি নিদের্শনা জারি করা হয়েছে। যারা আদেশ অমান্য করবে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সরকার নিম্নরূপ সিদ্ধান্তসমূহ গ্রহণ করেছে:
১. সব ধরনের জনসমাগম (সামাজিক/ রাজনৈতিক/ ধর্মীয়/ অন্যান্য) সীমিত করতে হবে। উচ্চ সংক্রমণযুক্ত এলাকায় সব ধরনের জনসমাগম নিষিদ্ধ করা হলো। বিয়ে/ জন্মদিনসহ যেকোনও সামাজিক অনুষ্ঠান উপলক্ষে জনসমাগম নিরুৎসাহিত করতে হবে।

২. মসজিদসহ সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে।

৩. পর্যটন/বিনোদন কেন্দ্র সিনেমা হল/থিয়েটার হলে জনসমাগম সীমিত করতে হবে এবং সব ধরনের মেলা আয়োজন নিরুৎসাহিত করতে হবে।

৪. গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং ধারণ ক্ষমতার ৫০ ভাগের অধিক যাত্রী পরিবহন করা যাবে না।

৫. সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাতে আন্তঃজেলা যান চলাচল সীমিত করতে হবে। প্রয়োজনে বন্ধ রাখতে হবে।

৬. বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের ১৪ দিন পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক (হোটেলে নিজ খরচে) কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে।

৭. নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী খোলা/ উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনপূর্বক ক্রয়-কিক্রয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। ওষুধের দোকানে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে।

৮. স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানসমূহে মাস্ক পরিধানসহ যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে।

৯. শপিং মলে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েরই যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে।

১০. সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাদ্রাসা, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়) ও কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে।

১১. অপ্রয়োজনীয় ঘোরাফেরা/ আড্ডা বন্ধ করতে হবে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাত ১০ টার পর বাইরে বের হওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

১২. প্রয়োজনে বাইরে গেলে মাস্ক পরিধানসহ সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে। মাস্ক না পরলে কিংবা স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

১৩. করোনায় আক্রান্ত/ করোনার লক্ষণ দেখা দিলে ব্যক্তির আইসোলেশন নিশ্চিত করতে হবে। করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির। ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসা অন্যান্যদেরও কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে।

১৪. জরুরি সেবায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান ছাড়া সব সরকারি-বেসরকারি অফিস প্রতিষ্ঠান/ শিল্প কারখানাসমূহ ৫০ ভাগ জনবল দ্বারা পরিচালনা করতে হবে। গর্ভবতী/ অসুস্থ/ বয়স ৫৫-ঊর্ধ্বো কর্মকর্তা/ কর্মচারীর বাড়িতে অবস্থান করে কাজ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

১৫. সভা, সেমিনার, প্রশিক্ষণ, কর্মশালা যথাসম্ভব অনলাইনে আয়োজনের ব্যবস্থা করতে হবে।

১৬. সশরীরে উপস্থিত হতে হয় এমন যেকোনও ধরনের গণপরীক্ষার ক্ষেত্রে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে।

১৭. হোটেল-রেঁস্তোরাসমূহে ধারণ ক্ষমতার ৫০ ভাগের বেশি মানুষের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

১৮. কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ এবং অবস্থানকালীন সর্বদা বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরিধানসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে।

পাঠকের মতামত