
উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
‘রক্ষক যখন ভক্ষক’, ‘শর্ষের মধ্যে ভূত’Ñ এসব প্রবাদ বাক্য মিয়ানমারের ভয়ানক মাদক ইয়াবার চোরাচালান বন্ধের পদক্ষেপের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হচ্ছে। ইয়াবা চোরাচালানি সিন্ডিকেট চক্রের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একশ্রেণীর অসাধু সদস্যদের নেপথ্য যোগাযোগের বিষয়টি বহু আগে থেকেই প্রচার হয়ে আসছে। মঙ্গলবার চট্টগ্রামে এক কোস্টগার্ড সদস্য ইয়াবাসহ ধরা পড়ার ঘটনাটি তা নতুন করে প্রমাণ করেছে। লাট মিয়া ওরফে ইমন নামের এক কোস্টগার্ড সদস্য ৩ হাজার পিস ইয়াবাসহ ধরা পড়েছে নগরীর গোসাইডাঙ্গা এলাকায় পুলিশের হাতে। বিষয়টি বিস্ময়কর হলেও সত্য। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অসাধু বহু সদস্য ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক এবং চোরাচালান পণ্যের সিন্ডিকেট সদস্যদের সঙ্গে জড়িয়ে থেকে নিজেদের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করে চলেছে।
মরণনেশা ইয়াবার চোরাচালান এখনও অপ্রতিরোধ্য। নাফ নদীতে রাতের বেলা জেলেদের মাছ শিকার বন্ধের পরও তা বিভিন্ন পথে বাংলাদেশে ঢুকছে। কক্সবাজার অঞ্চল হয়ে তা পরে চট্টগ্রাম এবং আরও পরে দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে যাচ্ছে। কক্সবাজার বিজিবি সূত্রে জানানো হয়েছে, বর্তমানে মিয়ানমারের তমব্রু, মংডু ও সিটওয়ে (সাবেক আকিয়াব) থেকেই চোরাচালান সিন্ডিকেট সদস্যরা ইয়াবা আনার ক্ষেত্রে নানা কৌশল অবলম্বন করে চলেছে। গত সোমবার চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় একটি ট্রাকে র্যাবের তল্লাশিতে আটক হয়েছে ৫০ হাজার পিস ইয়াবা। ট্রাকটি টিস্যু পেপারের কাঁচামাল নিয়ে বন্দর থেকে ঢাকার ডেমরার উদ্দেশে রওনা হয়েছিল। এভাবে সড়ক পথে বিভিন্ন যানবাহনযোগে এবং সমুদ্র ও নদীপথে নৌযানযোগে ইয়াবা পাচার হচ্ছে। নাফ নদী দিয়ে ইয়াবা পাচার হয়ে আসার পথটি কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণে রাখায় এখন এর অধিকাংশ আসছে সমুদ্রপথে। তবে নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে টেকনাফ পর্যন্ত যে সীমান্ত এলাকা রয়েছে এর কয়েকটি স্থান দিয়েও ইয়াবার চালান ঢুকছে।
সরকার ইয়াবার চোরাচালান বন্ধে মাদক সংক্রান্তে যে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে তাতে ২শ গ্রামের অধিক ইয়াবা পাওয়া গেলে মৃত্যুদ-ের বিধান করার খসড়া আইন প্রস্তুত করেছে।
যা আইনে পরিণত হতে কয়েক মাস সময় নিতে পারে বলে আগেই জানানো হয়েছে। কিন্তু এদিকে ইয়াবার অপ্রতিরোধ্য গতি কোনভাবেই থামানো যাচ্ছে না। আর এ মাদক চোরাচালান প্রক্রিয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন সংস্থা একশ্রেণীর অসৎ সদস্যরা জড়িয়ে থাকার বিষয়টিও এখন একেবারেই পরিষ্কার। যে কোস্টগার্ড সমুদ্রপথ পাহারা দেয় চোরাচালানসহ বেআইনী কার্যক্রম বন্ধে সেই সংস্থার সদস্য লাট মিয়া ওরফে ইমন ৩ হাজার পিস ইয়াবা নিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ার বিষয়টি নতুন করে সকল মহলের কাছে নতুন করে জানান দিল যে, শর্ষের মধ্যেই ভূত রয়েছে। এছাড়া রক্ষক হিসাবে থাকা অনেকেই ভক্ষক হিসাবেই যে লিপ্ত তাও এখন আর সন্দেহের উর্ধে নেই।
ইয়াবা চোরাচালানের গডফাদাররা মূলত কক্সবাজার অঞ্চলকেন্দ্রিক। আর এর ক্যারিয়াররাও সে অঞ্চলের এবং বিশেষ করে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে কক্সবাজার অঞ্চলে আশ্রিত ও শরণার্থী হয়ে থাকা রোহিঙ্গা সদস্যদের এ কাজে জড়ানো হচ্ছে। কিন্তু গডফাদাররা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ যে ২৬ গডফাদারের একটি তালিকা হয়েছে এদের কেউ এখনও আইনের আওতায় আসেনি।
এদের অনেকেই ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে বসেই ইয়াবার এ অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা করছে। গত জুলাই মাস থেকে মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) পর্যন্ত বিজিবি, কোস্টগার্ড, পুলিশ ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরিচালিত অভিযানে কক্সবাজারে ২৫ লাখ পিস ইয়াবা আটক হয়েছে। এছাড়া কক্সবাজার সদর ৩৪ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধীনে গত দেড় মাসে দেড় লাখেরও বেশি ইয়াবা জব্দ হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে ৩০ ক্যারিয়ার, মামলা হয়েছে ৩২টি।
৩৪ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মঞ্জুর হাসান মঙ্গলবার জনকণ্ঠকে জানান, ইয়াবা পাচার রোধে সকল ভিওপি ও মরিচ্যা যৌথ চেকপোস্টের সর্বত্র জোরালো টহল চলছে। গত সোমবার সকালে কক্সবাজারে ২ হাজার পিস ইয়াবাসহ মোঃ ইউনূস নামের এক পাচারকারী গ্রেফতার হয়েছে। অপরদিকে কোস্টগার্ড সমুদ্রপথে অভিযান চালিয়ে গত দেড় মাসে ৪ লাখ ২ হাজার পিস ইয়াবা আটক করেছে। কোস্টগার্ড পূর্ব জোনের অপারেশন অফিসার লে. কমান্ডার শেখ ফখর উদ্দিন মঙ্গলবার জনকণ্ঠকে জানান, এত বিশাল উপকূলে কোস্টগার্ডের অভিযান পরিপূর্ণভাবে পরিচালনা করা সম্পূর্ণভাবে সম্পন্ন করা যাচ্ছে না। আবার নির্দিষ্ট এলাকার বাইরেও কোস্টগার্ড সদস্যদের যাওয়ার বিধান নেই। ফলে একদিকে কম লোকবল, অপরদিকে উচ্চ অশ্বশক্তির নৌযানের কমতির কারণে ইয়াবা চোরাচালান সম্পূর্ণভাবে রোধ করা যাচ্ছে না।
– rDU2.dpuf
পাঠকের মতামত