প্রকাশিত: ২০/১১/২০১৭ ৮:০০ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১০:৫২ এএম

সরওয়ার আলম শাহীন, উখিয়া নিউজ ডটকম::

মিয়ানমার থেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ঝুপড়িতে জায়গা নেই,ঘর ভর্তি ত্রান,তাই এনজিও সহ বিভিন্ন সাহয্যকারী প্রতিষ্টিান থেকে পাওয়া ত্রান বিত্রিু করে দিচ্ছে রোহিঙ্গারা। প্রতিদিন রোহিঙ্গাদের ত্রান বিত্রিুর ফলে স্থানীয়রা কম দামে নিত্যপন্য পাওয়ার কারনে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ভিক্তিক ব্যবসা বেড়েছে মৌসুমী ব্যবসায়ীদের। অনেকে এসব ত্রান কম দামে কিনে বেমী দামে বিত্রিু করছে। রোহিঙ্গারাদের কেউ কেউ এসব ত্রান গ্রামে গ্রামে গিয়ে বিত্রিু করছে। এসব ত্রান বেপারীদের তৎপরতায় আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীরও ব্যস্ততা বেড়েছে। প্রতিদিন একাধিক ত্রান ব্যাপারী নারী পূরুষকে চেকপোষ্টে আটক করে ত্রান নিয়ে নিচ্ছে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবুও থেমে নেই ত্রান বিত্রিু। রোহিঙ্গাদের অজুহাত তাদের হাতে টাকা পয়সা নেই,তাই অতিরিক্ত ত্রান রেখে লাখ কি? তাই তারা ত্রান গুলো বিত্রিু করে দিচ্ছে।

উখিয়া উপজেলার কুতুপালং ও বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ১২টি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে প্রতিদিনই লাখ টাকার ত্রাণ ও অর্থ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি ক্যাম্পেই রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রাণ। এসব ক্যাম্পে ত্রাণের কারণে ঘুমানোর মতো জায়গাও নেই। তবে কিছু রোহিঙ্গার অভিযোগ,তারা বিত্রিু করার মতো ত্রাণ পায়নি। মাঝিরাই ত্রান গুলো বেশী নিচ্ছে,তাই তারা বিত্রিু করছে। এদিকে ত্রাণ বিতরণের কাজে যুক্ত কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রয়োজন অনুযায়ী অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ত্রাণসামগ্রী দেওয়া হচ্ছে। খাদ্যপণ্যের পাশাপাশি গৃহনির্মাণ সামগ্রী,কম্বল ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দেওয়া হচ্ছে।বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ২নং ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের আবুল কালাম জানান, বাংলাদেশে আসার পর থেকে বিপুল পরিমাণ ত্রাণ পেয়েছেন। মিয়ানমারে যে অভাব ছিল তা এখন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নেই। প্রতি সপ্তাহেই ত্রাণ পাচ্ছেন। তার ছোট ঘরে এত ত্রাণ রাখার জায়গা নেই। তাই ত্রাণ বিক্রি করে কিছু নগদ কিছু টাকা পেলে তবেই স্বস্তি।.

কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের লম্বাশিয়া বস্তিতে ঝুপড়িতে বসবাস করা আলম মিয়া ও মিনারা বেগমের ঘরে গিয়ে দেখা গেছে ত্রানের জন্য তাদের ঝুপড়িতে তিল ধারনের জায়গা নেই, এমন কি তারা দুই সন্তান নিয়ে রাতে ত্রানের উপরই ঘুমান। আলম মিয়া বলেন,আল্লার রহমতে খুব ভাল আছি,বাংলাদেশের মানুষ খুব ভালো। তিনি বলেন,আসার পর থেকে অনেক ত্রান পেয়েছি ,তাই এতো চাল, ডাল ও তেল নিয়ে কী করবো। এজন্য স্থানীয়দের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছেন। হাতে কিছু নগদ টাকা থাকলেও আর কোনও ভয় থাকে না। চার জনের পরিবার ১৫-২০ কেজির মতো চাল ত্রাণ হিসেবে প্রতিবার পান বলেও জানান তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,নগদ টাকার জন্য দেশি-বিদেশি সাহায্য সংস্থা, বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের দেওয়া বিভিন্ন ধরনের ত্রাণ সামগ্রী বিক্রি করে দিচ্ছে রোহিঙ্গারা। বাজার থাকা দামের চেয়ে অর্ধেক দামে এসব সামগ্রী বিক্রি করছে তারা। আর অল্পমূল্যে কেনা এসব ত্রাণ সামগ্রী কিনে বেশি দামে বিক্রি করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। ত্রাণ কিনতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক কয়েকটি সিন্ডিকেটও গড়ে উঠেছে এরই মধ্যে।কুতুপালং, বালুখালী.হাকিম পাড়া,তাজনিরমার ঘোনা,জামতলীসহ সব ক্যাম্পেই একই চিত্র। ত্রান বিত্রিুর হিড়িক।

রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে এক কেজি চালের দাম ৫০-৬০ টাকা। সেখানে রোহিঙ্গারা ত্রাণের চাল বিক্রি করছে মাত্র ২০ থেকে ২৫ টাকায় কেজি। ৬০ টাকা কেজি দরে চিনি কিনে রোহিঙ্গাদের দেওয়া হচ্ছে। আরা রোহিঙ্গারা সেই চিনি বিক্রি করছে মাত্র ৩০ টাকায়। বাজারে প্রতি কেজি ডালের দাম ১২০ টাকা। সেখানে রোহিঙ্গারা বিক্রি করছে ৬০ টাকায়। ১২০ টাকা লিটারের সয়াবিন তেল বিক্রি করছে মাত্র ৬০ টাকায়। এছাড়া ৫০০ গ্রাম ডানো দুধ বিক্রি করছে ৮০ টাকায়। চিড়া বাজারে ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর রোহিঙ্গারা বিক্রি করছে ১৫ টাকা কেজি।.

সংশিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৫-৭ জন সদস্যের একটি রোহিঙ্গা পরিবারকে সপ্তাহে দুই বার ত্রাণ দেওয়া হয়। এর মধ্যে ১০-১৫ কেজি চাল, ২-৩ কেজি ডাল ও ২-৩ লিটার তেল দেওয়া হয়। এ হিসাব অনুযায়ী, তারা সপ্তাহে ২০-৩০ কেজি চাল, ৪-৬ কেজি ডাল ও ৪-৬ লিটার তেল পান।

বালুখালী ক্যাম্পের গোলাম শরীফ বলেন, ‘আমার বাড়িতে অনেক ত্রাণ আছে। এখন টাকার প্রয়োজন তাই ত্রাণ বিক্রি করে দিচ্ছি।’কুতুপালং বাজারে চাল বিক্রি করতে আসা রোহিঙ্গা মরিয়ম বলেন, গত ২০ দিনে বাসায় পাঁচ বস্তা চাল জমা হয়েছে। এত চাল আমাদের লাগবে না।প্রতিদিন চাল পাচ্ছি। তাই টাকার প্রয়োজনে দুই বস্ত চাল ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে দিয়েছি।

রোহিঙ্গাদের ত্রান বিত্রিুর ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বালুখালী ক্যাম্প ইনচার্জ সোহেল রানা বলেন,চেকপোষ্টগুলোতে প্রতিদিন ত্রানসহ লোকজন আটকের ঘটনা ঘটছে। আমরা বিষয়গুলো নজরদারীর মধ্যে রেখেছি।

পাঠকের মতামত

দুই রোহিঙ্গা জাতীয় পরিচয়পত্র বানাতে ভৈরবে এসে আটক

জাতীয় পরিচয়পত্র বানাতে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে এসেছিলেন দুজন রোহিঙ্গা। ...

মিয়ানমারের আরেক গুরুত্বপূর্ণ শহর বিদ্রোহীদের দখলে

মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা দেশটির আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ শহরের দখল নিয়েছে। মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী তা’আং ...

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ও দূরপাল্লার ট্রেন পটিয়া স্টেশনে যাত্রা বিরতির দাবি

চট্টগ্রাম–কক্সবাজার ও দূরপাল্লার ট্রেন পটিয়া স্টেশনে যাত্রা বিরতিসহ বিভিন্ন দাবিতে রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিমকে স্মারকলিপি দিয়েছেন ...