
বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে ঘুমধুমে বিএনপি, জামায়াত সহ অনেক নিরীহ পরিবারকে মামলা দিয়ে হয়রানির অহরহ অভিযোগ রয়েছে।
সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ এপ্রিল ২০১৯ সালে জায়গাজমি সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে সামান্য কথা কাটাকাটির জেরে মৃত. ভবতোষ এর ছেলে ইমন বড়ুয়া (৩৫) মধ্যপ অবস্থায় পাকা রাস্তায় পড়ে গিয়ে আহত অবস্থায় হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করে।
এরই সূত্র ধরে ২৫ এপ্রিল উখিয়া উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক পুতুল রানী বড়ুয়া’র মেয়ে ও কক্সবাজার পৌর যুবলীগ সভাপতি ডালিম বড়ুয়ার স্ত্রী তান্নি বড়ুয়া বাদী হয়ে ৭জনের বিরুদ্ধে নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় জি/আর: নাইক্ষ্যংছড়ি থানা ১৩০/২০১৯, দায়রা জজকোর্ট মামলা নং: ৭৭/২০২১ ধারায় একটি হত্যা দায়ের করে। মামলায় যাদেরকে আসামি করা হয়েছে তাদের অনেকে সেই দিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলনা। মামলার ১নং আসামী ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বাবু দীপক বড়ুয়া’র ঘটনার দিন কক্সবাজারস্থ নিজ বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। আগে কিংবা পরেও ঘটনাস্থলে তিনি যাননি।
এই বিষয়ে মামলার আসামি দীপক বড়ুয়া বলেন, আমি ইমন হত্যাকান্ডে কোনভাবেই জড়িত ছিলামনা, আমি বিএনপির রাজনৈতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম এবং দেশনেত্রী ম্যাডাম খালেদা জিয়ার সাথে আমার বেশকিছু ছবি ছিল বিধায় আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য মামলায় জড়ানো হয়। আমার ব্যবহৃত মুঠোফোনের ২টি সীমের নাম্বার ট্র্যাকিং করলে এটা প্রতীয়মান হবে যে আমি ঘটনার দিন আমি কোথায় অবস্থান করছিলাম?
উপরন্তু ডালিম বড়ুয়া, সৈরাচার শেখ হাসিনার আস্থাভাজন ও একান্ত সহকারী সচিব ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার যোগসাজশে আওয়ামী সরকারের আমলে ক্ষমতার অপব্যবহার করে কক্সবাজার ও ঘুমধুমে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছিল। ডালিম বড়ুয়ার ইন্দনে মুলত আমি সহ আমার অপরাপর ভাইদের হত্যা মামলার আসামি করা হয়।
মামলার ৮নং আসামি প্রদীপ বড়ুয়া’র কান্ত ১৬৪ জবানবন্দিতে বলেন, ঘটনার দিন দীপক বড়ুয়া এখানে আসেনি, হত্যাকান্ডে ওনার কোন সংশ্লিষ্টতা ছিলনা। ওনাকে কেন আসামি করা হয়েছে সেটা জানিনা।
নিহত ইমন বড়ুয়া’র পিতা ভবতোষ বড়ুয়া ১৯৯১ সালে মদ্যম অবস্থায় ভালুকিয়া বাজারে মারামারিতে প্রতিপক্ষের চুরিকাঘাতে মৃত্যুবরণ করেন। সে মৃত্যুর ঘটনায়ও নিরীহ অনেককে আসামি করা হয়।
তাছাড়া ডালিম বড়ুয়ার বিরুদ্ধে কক্সবাজারে অস্ত্রের মুখে জায়গাজমি দখল, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ সহ একাধিক মামলা রয়েছে কক্সবাজার সদর মডেল থানায়। এবং ৫ আগস্টের পূর্বে ডালিম বড়ুয়ার নেতৃত্বে বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদলের মিছিলে গুলিবর্ষণ সহ বিএনপি’র জেলা কার্যালয় হামলা ও ভাংচুর করা হয়।
একাধিক সূত্র দাবি করেছে ৫ আগস্ট সৈরাচার আওয়ামী সরকারের পতনের পর ডালিম বড়ুয়া পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। ডালিম বড়ুয়া’র স্ত্রী তান্নি বড়ুয়া ও তান্নি বড়ুয়া’র মা উখিয়া উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক পুতুল রানী বড়ুয়া এবং তার আরেক বোন আনজুমানা মুন্নি (ধর্মান্তরিত) ও মুন্নির স্বামী আবেদ এখনো বহাল তবিয়তেই থেকে ও হুমকিধামকি দিয়ে মিথ্যা মামলা দায়েরের পায়তারা চালাচ্ছে।
তাছাড়া ইমন হত্যাকান্ডের মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। আদালতের নিরপেক্ষ কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে আওয়ামীলীগ নেত্রী পুতুল রানী বড়ুয়া, তার মেয়ে তান্নি বড়ুয়া, পলাতক যুবলীগ নেতা ডালিম বড়ুয়া মামলার অসহায় বিবাদীগণের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার ও নিয়মিত হুমকিধামকি প্রদর্শন করে আসছে! যা আদালতের নির্দেশ অবমাননা’র শামিল।
গত ১৮ এপ্রিল বালুখালী ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মাননীয় ধর্ম উপদেষ্টা মহোদয়ের আগমনকে বানচাল করার জন্য আওয়ামী ফ্যাসিস্ট পুতুল রানী বড়ুয়া, তান্নি বড়ুয়া, ডালিম বড়ুয়া সহ অপরাপর সহযোগীরা হুমকিধামকি প্রদর্শন করেছিল। ধর্মপ্রাণ মানুষের আপ্রাণ চেষ্টায় তাদের ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছিল আয়োজক কমিটি। এতে প্রায় ১০ হাজারের মত ধর্মপ্রাণ ভক্তবৃন্দ উপস্থিত হয়েছিল।
তান্নি বড়ুয়া’র ফেসবুকে পোস্ট করা তার স্টাটাসে যা লিখেন তা হুবহু তুলে ধরা হল, “বিগত ১৭ বছর আওয়ামী লীগের মধু খাওয়া ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর ঠান্ডা মাথার খুনি দীপক বড়ুয়া গং খোলস পাল্টিয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপি, বান্দরবান জেলা বিএনপি ও কক্সবাজার জেলা বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতার নাম ভাঙ্গিয়ে একটি পরিকল্পিত হত্যা মামলা থেকে রেহাই পেতে বিশাল অংকের টাকা নিয়ে মাঠে নেমেছে। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ধর্মীয় প্রোগ্রাম বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় ধর্ম উপদেষ্টা মহোদয় ভালুকিয়া উপস্থিত হওয়ার ছবিকে ব্যক্তিগত ভাবে ব্যবহার করে হত্যা মামলা থেকে রেহাই পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
আমি এই পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার পেতে সরকারের প্রতিটি দপ্তর ও জাতির বিবেক সকল সাংবাদিক ভাইদের সহযোগিতা কামনা করছি” দীপক বড়ুয়া তান্নি বড়ুয়ার অপপ্রচারের জবাবে বলেন, আমি ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগের কোন কমিটি’তে ছিলামনা বরং পুতুল রানী বড়ুয়া উখিয়া উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক, ডালিম বড়ুয়া পৌর যুবলীগের সভাপতি, তান্নি বড়ুয়া যুব মহিলালীগের নাম ভাঙিয়ে নানা দূর্নিতী, ইয়াবা ব্যবসা সহ নানা অপকর্ম করে লাখ লাখ টাকার মালিক বনে গেছে, আমি নই আওয়ামীলীগের মধু তারাই খেয়েছে। আমি কোন সময় আওয়ামীলীগের পোস্ট কিংবা সদস্য পদেও ছিলামনা, সেটা আমি চ্যালেন্জ করে বলেতে পারি। আর আমার নতুন করে বিএনপি নেতা সাজার কোন ইচ্ছে নেই, আমি ছাত্র জীবন থেকে ছাত্রদল, যুবদল পরবর্তী বিএনপির রাজনীতি’র সাথে সম্পৃক্ত ও বিএনপি খালেদা জিয়ার সাথে ছবি ছিল বিধায় তারা ষড়যন্ত্রভাবে আমাকে মিথ্যে মামলায় জড়িয়েছে।
সুষ্টু তদন্ত পূর্বক তান্নি বড়ুয়া’র দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার সহ আওয়ামী গডফাদার ডালিম বড়ুয়া ও তার শাশুড়ী উখিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগ নেত্রী পুতুল রানী বড়ুয়া ও তার অপকর্মের সহযোগীদের আইনের আওতায় আনতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন মামলার ভুক্তভোগী বিবাদীগণ ও ঘুমধুমের সর্বস্থরের জনসাধারণ। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের অপপ্রচারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনকে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবার।
পাঠকের মতামত