সাঈদ মুহাম্মদ আনোয়ার, উখিয়া নিউজ ডটকম।
প্রকাশিত: ৩১/০৮/২০২৫ ৯:৪৮ এএম


শাহপরীর দ্বীপের নোনা বাতাসে ভেসে আসে এক নারীর কান্নার শব্দ। কয়েকদিন আগেও তাঁর স্বামী সমুদ্রে নৌকা নিয়ে গিয়েছিলেন মাছ ধরতে। কিন্তু আর ফিরে আসেননি। সশস্ত্র আরাকান আর্মির হাতে ধরা পড়ে অদৃশ্য হয়ে গেছেন। প্রতিদিন বিকেলে তিনি সমুদ্রপাড়ে দাঁড়িয়ে দূরে তাকিয়ে থাকেন, যদি হঠাৎ কোনো নৌকার ভেতর স্বামীর পরিচিত চেহারা চোখে পড়ে কিনা। কিন্তু সে আশা প্রতিদিন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়।

এ এক পরিবারের নয়, পুরো উপকূলজুড়ে এখন এমন অসংখ্য আর্তনাদ। গত ২২ দিনে ১৯টি ট্রলারসহ ৫৬ জন বাংলাদেশি জেলে নিখোঁজ হয়েছে। নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের জলসীমা, যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মাছ ধরে এসেছে উপকূলের মানুষ, আজ তা হয়ে উঠেছে মৃত্যুপুরী।

জেলে সংগঠনের নেতারা বলছেন, জেলেরা মাছ ধরতে গেলেই বন্দুকের মুখে তাদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমারের বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান আর্মি। মুক্তিপণের দাবিও আসে, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রিয়জনেরা আর ফিরে আসেন না।

ট্রলার মালিক শফিকুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “নৌকায় সমুদ্রে নামলেই বুকের ভেতর ভয় কাঁপতে থাকে। আমরা জানি, ফিরে আসতে নাও পারি। কিন্তু ঘরে পরিবার আছে, তাই জীবন বাজি রেখেই সমুদ্রে যেতে হয়।”

গ্রামের ভেতর গিয়ে দেখা যায়, নিখোঁজ জেলেদের বাড়িগুলোতে কান্না থামছেই না। শাহপরীর দ্বীপ ইউনিয়নের অন্তত ১২টি পরিবার স্বজন হারিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। কারো বাচ্চারা স্কুলে যেতে চাইছে না, কারো ঘরে হাঁড়ি চড়ছে না। মায়ের মুখে অশ্রু, শিশুর চোখে প্রশ্ন—বাবা ফিরবে তো?

সচেতন মহল মনে করেন, রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘাতের কারণে আরাকান আর্মি এখন সীমান্তবর্তী জলসীমাকে আয় উপার্জনের ক্ষেত্র বানিয়েছে। সহজ টার্গেট বাংলাদেশি জেলেরা। কারণ তাদের ধরে নিয়ে গেলে মুক্তিপণ আদায় করা যায়, আবার আন্তর্জাতিক চাপও এড়িয়ে যাওয়া সহজ।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) বলছে, তারা সীমান্তে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে এবং কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনাও চলছে। কিন্তু জেলেদের পরিবারগুলো বলছে, আশ্বাস নয়—তাদের দরকার জীবিত স্বজন ফেরত।

এদিকে প্রতিটি ট্রলার হারিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি হচ্ছে। অনেক পরিবার ঋণের বোঝায় জর্জরিত, অন্যদিকে জীবিকার পথ বন্ধ হয়ে পড়ছে।

টেকনাফ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সতর্ক করে বলেন, “আরাকান আর্মির বেপরোয়া তৎপরতা শুধু জেলেদের নয়, পুরো সীমান্তের নিরাপত্তার জন্যও বড় হুমকি।”

কিন্তু এসব পরিসংখ্যান আর বিশ্লেষণের বাইরেও রয়ে গেছে মানুষের চোখের জল। সমুদ্রপাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা এক শিশুর মুখে শোনা যায়, “আমার বাবা কি আবার আসবে?” এই প্রশ্নই আজ পুরো উপকূলের হৃদয়কে বিদীর্ণ করে তুলেছে।

পাঠকের মতামত

আসিয়ান পার্লামেন্টারিয়ান দলের বৈঠক ও রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন

কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাবেক ও বর্তমান সংসদ সদস্যদের সংগঠন আসিয়ান ...

টেকনাফের হোয়াইক্যং কম্বনিয়ায় প্রথম গভীর নলকূপে পানি, স্বস্তি স্থানীয়দের

জসিম উদ্দিন টিপু,টেকনাফ:: টেকনাফের দুর্গম পাহাড়ী জনপদ হোয়াইক্যংয়ের কম্বনিয়াপাড়া গ্রামে ১ম বারের মত গভীর নলকুপে ...

রেলপুলিশ নেই, চকরিয়ার ৩ রেল স্টেশনে নিরাপত্তাহীন যাত্রীরা

চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে ১০০ কিলোমিটার রেল সড়ক স্থাপনের মাধ্যমে কক্সবাজারবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। গুরুত্ব ...