প্রকাশিত: ২৭/১০/২০১৬ ৭:৩৯ এএম

ভালোবেসে প্রেমের বিয়ে। বছরও ঘুরল না, সেই ভালোবাসা যৌতুকের ছকে বাঁধা পড়ল। নির্যাতন আর অত্যাচার সইতে না পেরে দফায় দফায় যৌতুকের টাকা তুলে দিতে হলো স্বামীর হাতে। তাতেও মন ভরে না যৌতুকলোভী স্বামীর। একসময় ওই দম্পতির ঘর আলো করে আসে সন্তান। মনে হচ্ছিল, এবার বুঝি সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু তার আরও যৌতুক চাই, টাকা চাই। টাকা না পেয়ে স্ত্রী-সন্তানকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছেন সেই স্বামী। এবার দিয়েছেন মেরে ফেলার হুমকি।

ঘটনাটি কুড়িগ্রামের রৌমারীর। যৌতুকলোভী স্বামীর নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধূর নাম রুবিনা মোস্তারী রুম্পা। শ্বশুরবাড়ি থেকে যৌতুকের দুই লাখ টাকা না পেয়ে নির্যাতনের পর অবুঝ সন্তানসহ এক বছর আগে রুম্পাকে বাড়িছাড়া করে স্বামী সুলতান মাহমুদ। এ অবস্থায় এক বছর ধরে বাবার বাড়িতেই অমানবিক জীবনযাপন করছেন ওই বধূ। এ ব্যাপারে আদালতে মামলা করায় যৌতুকলোভী স্বামী সুলতান স্ত্রী-সন্তানকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন বলে বুধবার সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেছেন নির্যাতিত রুবিনা।

রুবিনার পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন, চার বছর আগে রৌমারীর যাদুরচর তেলিপাড়া গ্রামের আব্দুস সামাদের ছেলে সুলতান মাহমুদ বিয়ে করে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের চেংটিমারী গ্রামের রাশেদুল ইসলামের মেয়ে রুবিনা মোস্তারী রুম্পাকে। বিয়ের এক বছর না যেতেই দফায় দফায় যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে নির্যাতন শুরু করে সুলতান। এ অবস্থায় মেয়ের সুখের কথা ভেবে অসহায় মা-বাবা জমি বিক্রি করে কয়েক দফায় চার লাখ টাকা জামাইয়ের হাতে তুলে দেন। এর কিছুদিন পর নতুন করে আরও দুই লাখ টাকা দাবি করে সুলতান। কিন্তু ওই টাকা দিতে না পারায় এক বছরের শিশুসহ স্ত্রীকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। কোনো উপায় না পেয়ে রুবিনা মোস্তারী রুম্পা জামালপুর আদালতে সুলতান মাহমুদের বিরুদ্ধে যৌতুক ও নির্যাতন মামলা করেন। এতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে তার স্বামী।

রুবিনা মোস্তারী রুম্পা অভিযোগ করেন, ‘বড় বিশ্বাস নিয়ে সম্পর্ক করে ওকে (স্বামী) বিয়ে করি। বিয়ের এক বছরের মাথায় যৌতুকের টাকার জন্য ভয়ংকর হয়ে ওঠে সে। তখন বুঝতে পারি ও মানুষরূপী এক শয়তান। কারণে-অকারণে, উঠতে-বসতে আমার ওপর নির্যাতন শুরু করে। এমন ঘটনাও ঘটেছে, আমাকে খাবার না দিয়ে কষ্ট দিয়েছে। আমার সুখের কথা ভেবে মা-বাবা তাদের জমি বিক্রি করে ওকে ব্যবসা করার জন্য চার লাখ টাকা দেয়। এতেও মন ভরেনি ওর। আরো টাকা চাই তার। সর্বশেষ আরো দুই লাখ টাকা দাবি করে সুলতান। এই টাকা না পেয়ে আমাকে মেরে রাতের অন্ধকারে ঘর থেকে বের করে দেয়। আমার একটা সন্তান রয়েছে। তার বয়স দেড় বছর। বাচ্চাটাকে দেখে ওর ভেতরে কোনো মায়া জন্মেনি। মামলা করছি দেইখা ও (স্বামী) মোবাইল ফোনে হুমকি দিয়ে কয়, মামলা না তুললে তোকে আর সন্তানকে খুন করে সীমান্তের ওপারে ফেলে দিয়ে আসব।’

নির্যাতিত রুম্পার মা মিনা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘এখন বাড়ির ভিটা ছাড়া আমগোর কিছুই নেই। যেটুকু জমি ছিল তা বিক্রি করে মেয়ের জামাইকে দিয়েছি। এখন আরো টাকা দরকার তার। এই টাকা দিতে না পারায় আমার মেয়েরে সন্তানসহ রাতের অন্ধকারে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে। আমরা সবচেয়ে কষ্ট পেয়েছি জামাই যখন আমগোরে নামে মিথ্যা চুরির মামলা করল।’

রুম্পার বাবা রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার মেয়ের ভবিষ্যৎ এখন অন্ধকার। তার কোলে ছোট একটা ছেলে। সংসার তো ভেঙেছেই। এখন তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। এই অন্যায়-অবিচারের বিচার চাওয়াও আমগোর অপরাধ। আমগোর নামে মিথ্যা চুরির মামলা করছে, মোবাইল ফোনে হুমকি দিচ্ছে।’

প্রিয়

পাঠকের মতামত

রামুর ফতেখাঁরকুলে উপ-নির্বাচনে প্রতীক পেয়ে প্রচারনায় ৩ চেয়ারম্যান প্রার্থী

রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদের উপ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধি ৩ প্রার্থীকে প্রতীক বরাদ্ধ দেয়া ...

টেকনাফের পৌর কাউন্সিলর মনিরুজ্জামানের সম্পদ জব্দ দুদকের মামলা

টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর মো. মনিরুজ্জামানের সম্পদ জব্দ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কক্সবাজার জ্যেষ্ঠ স্পেশাল ...