প্রকাশিত: ০৬/১০/২০২১ ৮:২১ এএম

নতুন করে জন্ম নিবন্ধন সনদ নিতে কিংবা নামের বানান সংশোধন করতে নাগরিকদের পদে পদে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। যদিও রেজিস্ট্রার জেনারেল দপ্তর থেকে বলা হচ্ছে, অনলাইনে যথাযথ তথ্য দিয়ে নতুন নিবন্ধন কিংবা সংশোধন করা যায় সহজেই। বাস্তবে তৃণমূলে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ও কর্মকর্তাদের সমন্বয়হীনতায় সেবাগ্রহীতাদের ভোগান্তির অন্ত নেই। অথচ নাগরিকের ১৮টি সেবা পেতে জন্ম নিবন্ধন আর চারটি সেবা পেতে প্রয়োজন মৃত্যু নিবন্ধন। এই পরিস্থিতির মধ্যেই আজ বুধবার পালিত হবে জাতীয় জন্ম নিবন্ধন দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘সবার জন্য প্রয়োজন, জন্ম-মৃত্যুর পরপরই নিবন্ধন’।

গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কয়েকটি জোন অফিস ঘুরে দেখা গেছে, একই কাজে একাধিকবার জোন অফিসে আসতে হচ্ছে নাগরিকদের। নতুন করে কারো জন্ম নিবন্ধন, আবার কারো নামের সংশোধনী। এর মধ্যে সংশোধনীর জন্য ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সেবাগ্রহীতাদের। ভুক্তভোগীরা এর জন্য দায়ী করেছে সনদ পেতে জুড়ে দেওয়া বেশ কিছু শর্তকে।
যাদের জন্ম ২০০১ সালের পর, তাদের জন্ম নিবন্ধনের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে মা-বাবার জন্ম সনদ। এ কারণে সন্তানের জন্ম নিবন্ধন করাতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন অনেক মা-বাবা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগে মা-বাবার জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর দিয়েই সন্তানের জন্ম নিবন্ধন করা যেত। চলতি বছর ১ জানুয়ারি থেকে নতুন নিয়ম কার্যকর হওয়ায় সন্তানের জন্ম নিবন্ধন করাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন মা-বাবা। কারণ নতুন নিয়ম অনুযায়ী সন্তানের জন্ম নিবন্ধনের আগে মা-বাবাকে জন্ম নিবন্ধন করতে হয়। আর ২০০১ সালের আগে জন্ম নেওয়াদের জন্ম নিবন্ধনে মা-বাবার জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর হলেই চলে।

ডিএসসিসির তিন নম্বর জোন অফিসে সন্তানের জন্ম নিবন্ধন করাতে এসেছেন ব্যবসায়ী মোতালেব হোসেন। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘ছেলের জন্ম নিবন্ধন করতে এক মাস ধরে ঘুরছি। শুরুতে কাউন্সিলরের অফিসে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে বলা হলো জোন অফিসে যেতে। এরপর এখানে আসলাম। এখন বলছে আগে মা-বাবার জন্ম নিবন্ধন করতে হবে। কিন্তু আমাদের তো ভোটার আইডি আছে।’
জানা যায়, ২০০৭ সালে ভোটার তালিকা তৈরির কার্যক্রম শুরু হলেও ২০০১-২০০৬ সালে ২৮টি জেলায় ও চারটি সিটি করপোরেশনে জন্ম নিবন্ধনের কাজ শুরু হয়। শুরুর দিকে ভোটার তালিকায় নাম লেখাতে জন্ম নিবন্ধন বাধ্যতামূলক না করায় বর্তমানে সমস্যা তৈরি হচ্ছে। তখন যাঁরা জন্ম নিবন্ধন করেননি, ভোটার আইডি নম্বর দিয়েই তাঁরা বেশির ভাগ নাগরিক সেবা পাচ্ছেন। কিন্তু সন্তানের জন্ম নিবন্ধন করতে গেলে এখন চাওয়া হচ্ছে মা-বাবার জন্ম নিবন্ধন সনদ।

জন্ম নিবন্ধন রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ের রেজিস্ট্রার জেনারেল মোস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জন্ম নিবন্ধন কেন প্রয়োজন সেটা আমরা বারবার বলে আসছি। নাগরিকের ১৮টি সেবা পেতে জন্ম নিবন্ধন লাগবে। চারটি সেবা পেতে লাগবে মৃত্যু নিবন্ধন। মনে রাখতে হবে জন্ম নিবন্ধন হলো প্রথম নাগরিকত্বের প্রমাণ। তাই এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ।’

ভোগান্তির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জন্ম নেওয়ার পর একজন ব্যক্তিকে আমরা নাগরিক স্বীকৃতির প্রথম কাজটি করছি। কিছু বাধাবিপত্তি আছে। সেগুলো উতরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আর অনলাইনে ফরম পূরণ করার পর কাজটি হয়ে যাওয়ার কথা। সমস্যাগুলো খতিয়ে দেখা হবে।’

সূত্র জানায়, রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয় তাদের তথ্য ব্যবহারের জন্য চুক্তি করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ব্যানবেইস, পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়সহ ১০টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো সহজে জন্ম নিবন্ধনের তথ্য পেয়ে যাবে।

রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয় সূত্র জানায়, সর্বশেষ গত ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে সর্বমোট জন্ম নিবন্ধন করা হয়েছে ১৮ কোটি ৪৯ লাখ ৩৯ হাজার ২২৬ জনের আর মৃত্যু নিবন্ধন করা হয়েছে ১৮ লাখ ৮৫ হাজার ৪৭৩ জনের।

পাঠকের মতামত