ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ১৮/০৫/২০২৫ ১১:৩৯ এএম

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় এসএসসি পাশের জাল সনদ ব্যবহার করে নিজের জন্ম তারিখ পরিবর্তন করে শ্রমিক লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভূক্ত হওয়ার ঘটনা এলাকায় জানাজানি হলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম আবদুল ওদুদ। তিনি পেকুয়া উপজেলার টইটং ইউনিয়নের দক্ষিণ হিরাবনিয়া পাড়া গ্রামের মৃত বাচা মিয়ার ছেলে। এ নিয়ে গত ১৫ মার্চ  মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়, নির্বাচন কমিশন এবং দুদকসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ  করেছেন স্থানীয়রা। অভিযোগের পর বিষয়টি নিয়ে এলাকায় জানাজানি হলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায়, অভিযুক্ত আবদুল অদুদ জনতা ব্যাংক এর ক্যাশিয়ার পদে চাকরিরত অবস্থায় ২০২০ ইংরেজীতে অবসর গ্রহণ করেন। এছাড়া তিনি শ্রমিকলীগের কক্সবাজার জেলা শাখার সিনিয়র সহ-সভাপতি পদেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বিগত ২৫/০৪/২০২২ইংরেজী তারিখে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত ৬৯৪ নং গেজেটমূলে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবেও স্বীকৃতি পান। এরপর তিনি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রতি মাসে ভাতাও পাচ্ছেন। মুক্তিযোদ্ধা কোটায় এক ছেলে রেলওয়েতে খালাসী পদে চাকুরীও পেয়েছেন।  
জানা যায়, বিগত ২০০৮ ইংরেজীর নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয়পত্রে আবদুল ওদুদের বয়স উল্লেখ আছে ২০/০৮/১৯৫৮ইংরেজী। ওই জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে তিনি জনতা ব্যাংকে চাকরি করে অবসরও গ্রহণ করেছেন। তবে, বর্তমান ভোটার তালিকা এবং জাতীয় পরিচয়পত্রে আবদুল ওদুদের বয়স উল্লেখ রয়েছে ২০/০৮/১৯৫৭ইংরেজী। তার জন্ম তারিখ ১৯৫৮ হলে ১৯৭১ সালে বয়স ১৩ বছরের কম হওয়ায় এসএসসির ভূঁয়া সনদ তৈরী করে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে পেকুয়া উপজেলা নির্বাচন অফিসের মাধ্যমে ২০১৬ইংরেজীতে বয়স সংশোধন করে ১৯৫৭ করেন। এরপর সংশোধিত জাতীয় পরিচয় পত্র দিয়েই তিনি বিভিন্ন কাগজপত্র তৈরী করে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেভূক্ত হন।  
পেকুয়া উপজেলা কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা জানান, আবদুল ওদুদ নামের ওই ব্যক্তি ১৯৯১ সালে মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশ নেয়নি। তিনি কিভাবে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভূক্ত হলেন তারা জানেন না।  
তথ্যসুত্রে জানা গেছে, পেকুয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের মাধ্যমে বয়স সংশোধনের আবেদনে বাঁশখালী উপজেলার ছনুয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগ থেকে ১৯৭৪ সনের এসএসসি পাশের সনদপত্র দাখিল করলেও উক্ত বিদ্যালয়ের রেজিষ্টারে ১৯৭৪ সনে আবদুল ওদুদের এসএসসি পাশের কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
পেকুয় উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো: রেজাউল করিম বলেন, আমি ২০১৬ ইংরেজীতে পেকুয়া উপজেলায় কর্মরত ছিলোম না। আবদুল ওদুদ নামের ওই ব্যক্তি এসএসসি’র সনদ জালিয়াতি করে কিভাবে  জাতীয়  পরিচয়পত্রের জন্ম তারিখ সংশোধন করেছে বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে  বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে দেখবো।  
এসএসসির সনদ জালিয়াতি করে জাতীয় পরিচয় পত্রের বয়স সংশোধনের বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে অভিযুক্ত আবদুল ওদুদ বলেন, তিনি কোন প্রকার জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নেননি। তার বিরুদ্ধে রিপোর্ট না করার জন্য প্রতিবেদককে অনুরোধ জানিয়ে এ বিষয়ে কথা বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেছেন।  
স্থানীয় বাসিন্দা এডভোকেট ইমরান সাইফুল অভিযোগ করেন, আবদুল ওদুদ বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শ্রমিক লীগের পদবীধারী নেতা হিসেবে প্রভাব বিস্তার ও অর্থের বিনিময়ে বয়স সংশোধনপূর্বক মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভূক্ত হওয়ায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। যাহা প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধাদের মানহানির শামিল। আবদুল ওদুদের বিরুদ্ধে সরেজমিনে তদন্ত করলে প্রকৃত সত্য উদঘাটন হবে। তিনি আরো জানান, জালিয়াতির মাধ্যমে বয়স সংশোধন করে মুক্তিযোদ্ধা বনে যাওয়া আবদুল ওদুদের সনদ ব্যবহার করে ছেলে আশহাদুল ইসলাম মনিরকে রেলওয়েতে খালাসি পদে এবং মেয়ে এনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক পদে চাকুরিও হাতিয়ে নিয়েছেন।  উিক্ত সনদ ব্যবহার করে সোনালী ব্যাংক চকরিয়া শাখা থেকে ৮লক্ষ টাকা লোনও নেন।

পাঠকের মতামত

চট্টগ্রামে গ্রেপ্তার ‘ভুয়া সাংবাদিক’ সেই যুবদল নেতা, গেস্ট হাউসে চাঁদাবাজির ঘটনায় মামলা

চট্টগ্রামে এক প্রতারক সাংবাদিকের ছদ্মবেশে গেস্ট হাউসে ঢুকে তল্লাশি চালিয়ে চাঁদা দাবি করেছিলেন, তবে শেষ ...