প্রকাশিত: ২২/১১/২০১৬ ৭:৩২ এএম

গত ছয় সপ্তাহে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের পাঁচটি গ্রামের এক হাজার ২০০-এর বেশি ঘরবাড়ি ধ্বংস করা হয়েছে। উঁচু মাত্রার দৃশ্যশক্তিসম্পন্ন (হাই ডেফিনিশন) স্যাটেলাইট ছবি বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডাব্লিউ)। ছবিগুলোকে ভয়ংকর বলে বর্ণনা করেছে সংস্থাটি।ag

রোহিঙ্গা মুসলিম অধ্যুষিত রাজ্যটিতে বর্তমানে ‘জঙ্গিবাদ’ দমনের নামে অভিযান চালাচ্ছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী, যেখানে সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে রাখা হয়েছে। ফলে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো নির্যাতনের প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাচ্ছে না।

সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের ওপর এই নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় মিয়ানমারের অং সান সু চির সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে। পাশাপাশি সু চিকে দেওয়া নোবেল শান্তি পুরস্কার ফিরিয়ে নেওয়ার দাবিও উঠেছে বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে। অনলাইনে চলছে সু চি ও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর তীব্র সমালোচনা।

গতকাল সোমবার হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এক বিবৃতিতে সেখানকার পরিস্থিতির নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য জাতিসংঘকে দায়িত্ব দেওয়ার জন্যমিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। একই সঙ্গে সংস্থাটি রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যাতে বেশ কিছু হাই ডেফিনিশন স্যাটেলাইট ছবি প্রকাশ করা হয়। তাতে দেখা যায়, শুধু ১০ থেকে ১৮ নভেম্বরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ৮২০টি বাড়ি ধ্বংস করা হয়। প্রায় দেড় মাসের সেনা অভিযানে সব মিলিয়ে এক হাজার ২৫০টির বেশি বাড়ি ধ্বংস করা হয়েছে। তবে মিয়ানমার সরকার এ কথা অস্বীকার করেছে।

বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গত অক্টোবর থেকে দেশটির সেনাবাহিনী অভিযান চালাচ্ছে। এই অভিযানে রাখাইনে বসবাসরত রোহিঙ্গা মুসলমানদের নির্বিচারে হত্যা, মহিলা ও কিশোরীদের ধর্ষণ, তাদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ব্যাপক অভিযোগও আছে। এসব অভিযোগ নিরপেক্ষভাবে যাচাই করার সুযোগ পাচ্ছে না সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীরা।

ইতিমধ্যে জাতিসংঘ জানিয়েছে, সহিংসতার ঘটনায় এ পর্যন্ত সেখানকার ৩০ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। গত ৯ অক্টোবর রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের সীমান্তচৌকিতে একটি হামলার জের ধরে অভিযান শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেছে, রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র গ্রুপ ওই হামলা চালিয়েছে।

সেনাবাহিনীর অভিযানে ৭০ জন নিহত হয়েছ এবং ৪০০-এর বেশি নাগরিককে তারা আটক করেছে বলে রাষ্ট্রীয় মাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে। তবে মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, নিহতের সংখ্যা শতাধিক।

এইচআরডাব্লিউয়ের এশিয়াবিষয়ক পরিচারক ব্র্যাড অ্যাডমস বলেন, ‘এসব ভয়ংকর স্যাটেলাইট ছবিগুলো নিশ্চিত করে যে রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলোতে চালানো ধ্বংসযজ্ঞ ধারণার চেয়ে অনেক বেশি এবং সরকার যা বলছে, তার চেয়ে অনেক বেশি স্থানে এ সহিংসতা সংঘটিত হয়েছে।’

এর আগে গত সপ্তাহে যখন প্রাথমিকভাবে কিছু স্যাটেলাইট ইমেজ প্রকাশ করেছিল এইচআরডাব্লিউ, তখন মিয়ানমারের প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র অভিযোগ করেছিলেন যে ছবিগুলো অতিরঞ্জিত। তিনি দাবি করেছিলেন, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো রাখাইন বিষয় ভুল প্রতিবেদন দিচ্ছে। তবে সেখানে চালানো অভিযানে স্থলবাহিনীকে সহায়তা দেওয়ার সময় হেলিকপ্টার গানশিপ ব্যবহারের কথা স্বীকার করেছে মিয়ানমার সরকার।

সু চির নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রত্যাহারের দাবি : মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর (কার্যত সরকারপ্রধান) নেত্রী অং সান সু চির নোবেল শান্তি পুরস্কার ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য অনলাইন আবেদনে স্বাক্ষর করেছে বহু মানুষ। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হওয়ায় এই আবেদন জানানো হয়। নরওয়ের নোবেল শান্তি কমিটি বরাবর আবেদন করা হয়।

ইন্দোনেশিয়া থেকে ‘চেঞ্জ ডট অর্গ’-এর মাধ্যমে এই আবেদন করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আবেদনে বলা হয় ‘আন্তর্জাতিক শান্তি এবং ভ্রাতৃত্ববোধ রক্ষায় যাঁরা কাজ করেন, তাঁদেরই নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়। সু চির মতো যাঁরা এই পুরস্কার পান, তাঁরা শেষ দিন পর্যন্ত এই মূল্যবোধ রক্ষা করবেন, এটাই আশা করা হয়। যখন একজন নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী শান্তি রক্ষায় ব্যর্থ হন, তখন শান্তির স্বার্থেই নোবেল শান্তি পুরস্কার কমিটির উচিত এই পুরস্কার হয় জব্দ করা, নয়তো ফিরিয়ে নেওয়া।’

আবেদনটিতে বিবিসির সাংবাদিক মিশাল হোসেন সম্পর্কে সুচির করা মন্তব্যও উল্লেখ করা হয়েছে। মিশাল হোসেনকে একটি সাক্ষাত্কার দিয়েছিলেন অং সান সু চি। সাক্ষাত্কারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের সঙ্গে মিয়ানমারের আচরণ নিয়ে অনেক অপ্রিয় ও কঠিন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছিল সু চিকে। পরে সু চি বলেছিলেন, ‘সে (মিশাল হোসেন) যে একজন মুসলিম, কেউ তো আগে আমাকে জানায়নি।’

আবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী এবং নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী সু চির মুখ থেকে যখন এ রকম কথা শোনা যায়, তা তখন অনেককেই অবাক করেছিল। সূত্র : বিবিসি, আল-জাজিরা।

পাঠকের মতামত

স্বাভাবিক পথে সেন্টমার্টিনে যাচ্ছে খাদ্যপণ্য, টেকনাফে ফিরছে যাত্রী

অবশেষে স্বাভাবিক হচ্ছে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে নৌযান চলাচল। দীর্ঘ ৩৩ দিন পর টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে যাতায়াত করছে ...