প্রকাশিত: ৩১/০৭/২০১৭ ১০:৫৩ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৩:৫৬ পিএম

মির্জাও.রোমেল::
দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা,দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু/দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া,ঘর হতে দু’পা ফেলিয়া,একটি ধানের শীষের উপর একটি শিশির বিন্দু।কবি গুরু রবি ঠাকুরের কবিতার চরণ গুলো কতো যে সত্য তা আজ(৩০জুলাই) সাত সকালে আমাকে প্রমাণ করে দেখালো এক ঝাঁক স্বর্ণ তরুণ।পূর্ব দিগন্তে রক্তিম অরুণ উদয় হয়েছে।সকাল ৭টায় বাসায় হাজির তরুণ দল।খরুলিয়া একটি গ্রামের নাম।যেখানে আমি জন্মের পর থেকে বসবাস করি।

কিন্তুু অনেকদিন এমন মহানুভবতায় সকাল’টা শুরু হয়নি।যেমন’টা আজ শুরু হলো।ছাত্র রাজনীতির সুবাধে কক্সবাজার জেলার প্রতিটি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান,প্রতিটি উপজেলা-ইউনিয়নে কাজ করার সুযোগ হয়েছে।সু-দীর্ঘ সময়ে অনেক কিশোর-ছাত্র-যুবা’কে নিজের চিন্তা-চেতনার সাথে মৈত্রিময় বন্ধনে বেঁধেছি।গণ-মাধ্যমে কর্ম প্রয়াসকালীন সময়েও অনেক বন্ধু-সুজন আগামীর পথে এগিয়ে যেতে হাতে রেখেছে হাত।অগণন সেই যোদ্ধাদের দৃপ্ত সাহস আমাকে স্বপ্ন দেখায়-একটি বৈষম্য মুক্ত শোষণহীন সমাজের।উদ্বীপ্ত যৌবনের দ্বীপ্ত প্রত্যয়ে সমাজ বদলের অনেক সূর্য সেনা আমার বাড়ীর পাশেই আছে তা জানা ছিলো না।

এই না-জানার অপরাধ আমার।আমার দাদা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আলহাজ্ব এম.এম.গোলাম শরীফ বেঁচে থাকতে যখন নিজ মালিকাধীন ভুমিতে নিজ অর্থায়ন এবং শ্রমে একের পর এক শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করছিলেন তখন দাদি বলতেন তুমি জমিদার ভাল কথা এভাবে সব জমি ভূমিহীনদের ঘর বাঁধার জন্য,পাঠশালার জন্য দিয়ে দিলে থাকবে কি?দাদা বলতেন-এই তল্লাটের প্রায় সব মানুষ আমার জমিতে নাঙল চালিয়ে খায়।কেউ অভুক্ত থাকেনা।সবাই ক্ষুধামুক্ত। তাদের সন্তানদের জন্য শিক্ষার আলো না-দিলে সমাজ কখনো অন্ধকার মুক্ত হবেনা।আর আলোহীন সমাজে ভালো মানুষ কখনো বাস করতে পারেনা।দাদা ও তার সন্তানরা কথা রেখেছেন।

খরুলিয়ার সর্ব প্রথম এবং সর্বোচ্চ দু’টো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই প্রতিষ্টা করেছেন।আজ আমার এলাকার সন্তান দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ব-বিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার গৌরব অর্জন করছেন।শত ভাগ শিশু স্কুলে যায়।নারী শিক্ষার অগ্রগতি হয়েছে।অর্থনৈতিক সম্মৃদ্ধি এসেছে বিভিন্ন স্থরের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বৈদেশিক মুদ্রার কল্যাণে।রাস্তা-ঘাটের উন্নতি বেশ হয়েছে।আইনজীবি-চিকিৎসক-প্রকৌশলী-কলেজ-বিশ্ব-বিদ্যালয়ের শিক্ষক সহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন অনেকে।কিন্তুু তাদের কারো মাঝে মানবতাবোধ,মনুষ্যবোধ,নাগরিক দায়িত্ত্ববোধ,সামাজিক দায়বদ্ধতা সৃষ্টি হয়নি।সমাজের চতুর্থ শ্রেণীর উদ্বাস্তুুরা মৌসুমী জনদরদী হয়ে উঠে নির্বাচন আসলেই।অনৈতিক পন্থায় মেম্বার-চেয়ারম্যান হয়।তবে চিন্তার অপরিপক্বতা,সু-শিক্ষার অভাব এবং স্বার্থ আদায়ের জন্মগত স্বভাবের কারণে তারা কখনো গণ-মানুষের কন্ঠস্বর হয়ে সমাজ বদলের যোদ্ধা হতে পারেনি।

মানুষ মানুষের জন্য,কারণ মানুষই সৃষ্টির সেরা জীব।সৃষ্টির সেরা জীব যদি সৃষ্টিশীল হয়ে উঠতে না পারে,তবে সে জীবন অর্থহীন।অর্থহীন জীবনকে অর্থবহ মানবতাবাদী করার দূর্জয় কাফেলা শুরু করেছে খরুলিয়ার মানবতাবাদী তরুণ জাহাঙ্গীর শামস,ফয়সাল,আবছার,ফাহিম,আজিজ,শরিয়ত,সুমনশর্মা,মিটন শর্মা সহ অনেক যোদ্ধা বন্ধু।রাজনৈতিক সর্কীণতা,আধিপত্যের নোংরা চিন্তা,স্বার্থবাজীর অসুস্থ প্রতিযোগীতায় অবতীর্ণ না হয়ে ‘অসহায় মানুষের পাশে’ এসে দাঁড়িয়ে তারা যে সত্য সুন্দরের চর্চা শুরু করেছে তা নি:সন্দেহে আর্ত মানবতার সেবায় এক অনন্য দৃষ্টান্ত। ইতোমধ্যে তারা এলাকার বিভিন্ন পাড়ায় কর্মক্ষম-অসুস্থ-দূর্ঘটনায় আহত-উপার্জন ক্ষমতা বিনষ্ট-কন্যাদায় গ্রস্থ পরিবার সহ মোট ৭টি অসহায় পরিবারকে ৮০হাজার নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করেছে।পাশাপাশি সমাজ হিতৈষী কাজে গণ-সচেতনতা সৃষ্টির তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে।
-প্রযুক্তির এই সময়কালে তারুণ্য যেখানে আশাহত হয়ে সন্ত্রাস ও মাদকের করাল গ্রাসে ডুবে যাচ্ছে সেখানে এই তরুণরা সৃষ্টিমূখর কর্মপ্রয়াসে পরিবর্তনের নয়া দিগন্তরেখার উদয় ঘটিয়েছে।যা স্বপ্ন পুরণের গন্তব্য যাত্রায় পথ দেখাবে বলে আমি মনে করি।

বিভিন্ন সমস্যা এবং নানা আয়োজনের নিমন্ত্রণ দিতে এলাকার লোকজন প্রতিনিয়ত আমার কাছে আসে।আমি সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের সহযোগীতা করলেও,পারত পক্ষে কোন নিমন্ত্রিত অনুষ্ঠানে আমি যায়না।কারণ ওইসব অনুষ্ঠানে সমাজের নিন্দিত ব্যক্তিরা প্রগতির মন্ত্র পাঠ করে,আর নন্দিতরা থাকে নিরব দর্শক।রঙ বদলের ওই মেলায় নিজেকে বেমানান মনে হয়।কিন্তুু জাহাঙ্গীরদের সত্য সুন্দর মহৎ আহবানে তাদের কাতারে শামিল হতে পেরে নিজেকে খুব বেশি পবিত্র মনে হয়েছে বহুদিন পর।হিংসার সমাজে পবিত্র থাকা অনেক বেশি কঠিন।এখানে পবিত্র থাকা যায়না,পবিত্র থাকতে দেয়না।

চলতি বছরের শুরুতে বৃহত্তর খরুলিয়ায় ১০টি ইসলাম ধর্মানুসারীদের মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।যতটুকু জানি ওই মাহফিল গুলো সম্পন্ন করতে খরচ হয়েছে সর্বনিন্ম ৫০হাজার,সর্বোচ্চ দেড় লক্ষ টাকা।সে হিসাবে প্রতিটি মাহফিলের গড় ব্যয় যদি ৮০হাজার টাকা ধরা হয়,তাহলে ১০টির মোট ব্যয় ৮লক্ষ টাকা।এতো বিপুল টাকা খরচ করে মাহফিল গুলো আমাদের মন-মননে,চিন্তা-চেতনায়,সমাজে কতটুকু পরিবর্তন এনেছে তা পরদিন ফজরের নামাজে গিয়ে দেখেছি- মসজিদে মুসল্লীর কাতার প্রতিদিনের সেই একটাই।বাকী নয় কাতারে কোথাও কেউ নেই।যদি এই বিপুল অর্থ মানুষ ও সমাজ কল্যাণে ব্যয় করা হতো তাহলে দ্বিগুণ সওয়াব আয়োজকরা লাভ করতো বলে আমার বিশ্বাস।

অথচ এই পবিত্র মসজিদ কমিটি’র অধিপতি হতে কতো দাঙ্গা-হাঙ্গামা।হাঁট বাজারে নাম লিখাতে কতো সংঘাত-রক্তপাত,থানা-আদালত।মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে সূরা আল-ফুরকানের ২০নং আয়াতে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেছেন-“পূর্বে যত রসুল প্রেরণ করেছি,তারা সবাই খাদ্য গ্রহণ করত এবং হাট-বাজারে চলাফেরা করত।আমি তোমাদের এক’কে অপরের জন্য পরিক্ষাসরূপ করেছি।দেখি তোমরা সবর কর কিনা।আপনার পালনকর্তা সবকিছু দেখেন”

এই নির্দেশিত শিক্ষা প্রমাণ করে একজন মানুষকে আরেক জন মানুষের সহায়ক হিসেবে সৃষ্টি করা হয়েছে।একজন সত্যিকারের ভালো মানুষ হওয়ার জন্য প্রয়োজন মানবতাবোধ।যার মানবতাবোধ নাই তার মনের কাবা’য় আল্লাহ ও নাই। মনবতার সেবার মধ্য দিয়ে সন্ত্রাস-মাদক, হিংসা-বিদ্বেষ,সকল শোষন-বৈষম্য রোধ করে খরুলিয়া একদিন পরিণত হবে মডেল গ্রামে।এই তারুণ্যের কর্মপ্রয়াসের পরিসর হয়তো এখনো ক্ষুদ্র।কিন্তুু চীনা দার্শনিক কনফুসিয়াসের ভাষায়-হাজার মাইল পাড়ি দেয়ার সূচনা হয় প্রথম কদমে।জাহাঙ্গীরদের বিন্দু যাত্রা একদিন সিন্ধুতে উপনীত হবে।মানবতার আলোয় নির্বাপিত হবে সকল অন্ধকার।বরি ঠাকুর দিয়ে শুরু’র শেষ’টি যদি বিদ্রোহী নজরুল দিয়ে করি-তাহলে তারুণ্যের দৃপ্ত উচ্চারণে বলতে পারি-“ঊষার দুয়ারে হানিয়া আঘাত/আমরা আনিব রাঙা প্রভাত”।

(লেখক-মির্জা ওবাইদ রোমেল,প্রবন্ধকার,
সাংবাদিক,সাবেক ছাত্রনেতা,কক্সবাজার)

পাঠকের মতামত

দৈনিক যুগান্তরের প্রতিবেদন লাশ গুনে গুনে ক্রসফায়ার বাণিজ্যের ভাগ নিতেন কামাল-বেনজীর

ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতির মাধ্যমে হাজার কোটি টাকার সম্পদের তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক ...