প্রকাশিত: ০৬/১১/২০১৭ ৭:৪৯ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১১:৩২ এএম

সরওয়ার আলম শাহীন, উখিয়া নিউজ ডটকম:;
একদিকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী,পুলিশ ও রাখাইন সম্প্রদায়ের নির্যাতন অন্যদিকে সীমান্তবর্তী এলাকায় মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের নিয়ে দালালদের অপতৎপরতা। এরপর আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটতে থাকা রোহিঙ্গাদের নিয়ে চলে দালালদের দরদাম। ক্যাম্পগুলোতে প্রবেশ করে একটু মাথা গুজার টাই নিতে দালাল সিন্ডিকেটকে দিতে হয় মোটা অংকের টাকা। এভাবে যারা টাকা দিয়ে স্থানীয় দালাল সিন্ডিকেটকে ম্যানেজে করতে পারে তারাই ক্যাম্পে বনবিভাগের জায়গায় পায় এক খন্ড ঝুপড়ির দেখা। আর না হলে ঠাই হয় পথে পথে। উখিয়া উপজেলায় মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের নিয়ে গড়ে উঠেছে ৮ টি ক্যাম্প। এর মধ্যে রয়েছে কুতুপালং-১,কুতুপালং-২,বালুখালী-১,বালুখালী-২,হাকিমপাড়া,জামতলী,তাজনিমার ঘোনা ও ময়না ঘোনা ক্যাম্প। এসব ক্যাম্পে মিয়ানমার থেকে আসা বিপুল পরিমান রোহিঙ্গা অবস্থান নিয়েছে। আবার এই বিপুল পরিমান রোহিঙ্গাদের নিয়ে বানিজ্যে মেতে উঠেছে স্থানীয় দালাল সিন্ডিকেট। ক্যাম্প নিয়ন্ত্রিত দালালরা স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় ক্যাম্পে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে প্রথমে বনবিভাগের জমির জন্য ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা,পরবর্তিতে মাসিক ভাড়া হিসেবে রোহিঙ্গাদের গুনতে হচ্ছে ৩ থেকে ৫ শ টাকা। আবার কেউ কেউ সরকারী বনভুমির উপর গড়ে উঠা সামাজিক বনায়নের বাগান নিজের দাবী করে রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে এককালিন ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা।

বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে,মিয়ানমার সেনাবাহিনী পুলিশ ও রাখাইন সম্প্রদায়ের অমানবিক নির্যাতন ও বর্বরতায় শিকার রোহিঙ্গা মিয়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে গড়ে উঠা ক্যাম্পগুলোতে আশ্রয় নিচ্ছে। ক্যাম্পে প্রবেশ করা মাত্রই তারা পড়ছে দালাল সিন্ডিকেটের খপ্পরে। প্রথম দফায় দালালরা ঘর নির্মান ও জায়গা দেওয়ার কথা বলে রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় মোটা অংকের টাকা। কিন্ত টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর দালালদের আর দেখা মেলেনা। দ্বিতীয় দফায় ঝুপড়ি নির্মান করতে গিয়ে আবারো দাালালদের নিচ্ছে হয় জায়গার ভাড়া। এরপর দরদাম করে মাসিক ভাড়া। দালালদের দাবীকৃত টাকা পরিশোধে ব্যার্থ হলে রাতের বেলায় যুবতী মেয়েদের তুলে নেওয়া সহ হুমকিও সহ বিভিন্ন রকম হুমকি ধমকি দেয় দালাল সিন্ডিকেট। এসব দালাল সিন্ডিকেটকে নিয়ন্ত্রন করছে বেশকিছু গড়ফাদার। যাদের মধ্যে অনেকেই সরকার দলীয় নেতা। হাকিমপাড়া ক্যাম্পে আসা রোহিঙ্গা আবুল ফয়েজ (৩০) জানান, তার বাড়ি মায়ানমারের নাইশাপুরীতে। এখানে এসে তিনি এক স্বজনের ড্যারায় আশ্রয় নিলেও এখন ১০০০ টাকা দিয়ে এক চিলতে জমিতে পলিথিন,বেড়া ও কাঠ দিয়ে ঘর নির্মাণ করে পরিবার নিয়ে থাকছেন। এ জন্য ক্যাম্পের মাঝি আবুল হোসেনকে টাকাগুলো দিয়েছেন। এ ব্যাপারে মাঝি আবুল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,স্থানীয় মেম্বার কামাল উদ্দিন ক্যাম্পটি নিয়ন্ত্রন করেন। তার নির্দেশেই রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হচ্ছে। এ সময় পাশে ঝুপড়িতে অবস্থান নেওয়া অপর রোহিঙ্গা মো আসাদ জানান,তার ছোট ভাই মো. নূর (১৮) ও বোন রেহেনা (১৬) সেখানকার সেনাবাহিনীর ও পুলিশের গুলিতে নিহত হয়।তার বোনকে নির্যাতন করা হয়েছে।এরপর তিনি পরিবারের ৪ সদস্যকে নিয়ে এই ক্যাম্পে আসেন।পরে আবুল হোসেন মাঝিকে বুঝিয়ে ম্যানেজ করে ৫০০ টাকা দিয়ে একটি ঝুপড়ি ঘরে থাকছেন তারা। এমন অভিযোগ শত শত। প্রতিটি ক্যাম্পেই চলছে একই অবস্থা। এছাড়াও ক্যাম্পগুলোতে গড়ফাদারদের ইশারায় রোহিঙ্গাদের মধ্যে অনেকেই চুরি,ডাকাতি,ছিনতাই,ধর্ষণ,পতিতাবৃতি সহ বিভিন্ন অপরাধে জড়াচ্ছে। বিগত দিনে এসব করে ক্যাম্প মাঝিদের অনেকে নানা কায়দায় সম্পদের মালিক হয়েছেন। গড়ফাদাররা হয়েছে কোটিপতি। এ ব্যাপারে বালুখালী ক্যাম্প ইনচার্জ সোহেল রানার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,বিপুল পরিমান রোহিঙ্গা আসার ফলে ছোটখাটো অনেক কিছুই হচ্ছে,সুবিধাবাদী মহল বিভিন্ন কায়দায় ফায়দা লুটছে। এ রকম অভিযোগ আমাদের কাছেও এসেছে। বিপুল পরিমান রোহিঙ্গা কারনে এসব চাপা পড়ে যাচ্ছে। তবে সাধ্যমত চেষ্টা করা হচ্ছে।

পাঠকের মতামত

দুই রোহিঙ্গা জাতীয় পরিচয়পত্র বানাতে ভৈরবে এসে আটক

জাতীয় পরিচয়পত্র বানাতে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে এসেছিলেন দুজন রোহিঙ্গা। ...

মিয়ানমারের আরেক গুরুত্বপূর্ণ শহর বিদ্রোহীদের দখলে

মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা দেশটির আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ শহরের দখল নিয়েছে। মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী তা’আং ...

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ও দূরপাল্লার ট্রেন পটিয়া স্টেশনে যাত্রা বিরতির দাবি

চট্টগ্রাম–কক্সবাজার ও দূরপাল্লার ট্রেন পটিয়া স্টেশনে যাত্রা বিরতিসহ বিভিন্ন দাবিতে রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিমকে স্মারকলিপি দিয়েছেন ...