
হুমায়ুন কবির জুশান, উখিয়া ::
দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে রোহিঙ্গারা। বসে বসে খেতে পেয়ে অতীত ভুলতে বসেছে। চরম নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে কিছু কিছু রোহিঙ্গা অন্য রকম স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। সরকারের মানবিক আচরণকে পুঁজি করে তারা নিজেদের রাজত্ব কায়েম করে। ক্যাম্পগুলো দিনের আলোতে থাকে এক রকম। কিন্তু সন্ধ্যার পর বদলে যেতে থাকে দৃশ্যপট। রাতের আঁধার নামার সঙ্গে সঙ্গে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সশস্ত্র পদচারণা শুরু হয়। রোহিঙ্গা শিবিরের ভেতরে বড় কয়েকটি রাস্তা তৈরি করা হয়েছে যেগুলো আর্মি রোর্ড হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এসব রাস্তার মাধ্যমে সব জায়গায় পৌঁছানো যায় না।এমন অনেক জায়গা আছে যেখানে পৌঁছাতে পাহাড়ি উঁচু-নিচু রাস্তায় অনেক্ষণ হাঁটতে হয়। ফলে যেকোনো অপরাধ করে দ্রুত সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়া সম্ভব। রাতের বেলায় এসব জায়গায় যেতে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও নিরাপদ বোধ করেন না। ফলে সেখানে রোহিঙ্গাদের রাজত্ব কায়েম হয়। এই ব্যাপারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির নেতা সাবেক উখিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক চৌধুরী বলেন, নারী পাচার, নারী ধর্ষণ, খুন, ছিনতাই, অপহরণ, চুরি ডাকাতি, ইয়াবা ব্যবসাসহ হেন কোনো অপরাধ নেই যেখানে রোহিঙ্গারা জড়াচ্ছে না। রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে ইতিমধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে একাধিক গ্রুপ তৈরি হয়েছে। নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্যে গ্রুপগুলো অস্ত্র সংগ্রহ করছে। তারা রোহিঙ্গা যুবকদের টার্গেট করে প্রশিক্ষণ দিয়ে নিজেদের মতন করে তৈরি করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুতুপালং এলাকার স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি বলেন, রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে তেরোটি গ্রুপ রয়েছে। যাদের হাত থেকে নিরহ রোহিঙ্গাসহ স্থানীয়রাও রেহাই পাচ্ছে না।
তারা এখন সমাবেশ ডেকে নানা দাবি করছে, ঘোষণা দিচ্ছে তারা ফিরে যাবে না।
সমাবেশে রোহিঙ্গা নেতারা এ জাতীয় বক্তব্য দিলেও বাংলাদেশের মানুষের উদারতার কথা একবারও উল্লেখ করেনি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বদান্যতার কথাও তারা বলেনি। তারা নিজেদের দাবিদাওয়া নিয়েই আছে। এই রোহিঙ্গাদের ওপর কড়া নজরদারির জন্য সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি আছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। যারা রোহিঙ্গা বিষয়ে আগাম খবর সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানানোর কথা। কিন্তু রোহিঙ্গাদের এত হাঁকডাক ও এতবড় সমাবেশ হলেও গোয়েন্দারা ছিল নিস্ক্রিয়। গত ২৬ আগস্ট পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানে অবলীলায় বলেছেন, রোহিঙ্গা সমাবেশ সম্পর্কে আমাদের আগে থেকে জানানো হয়নি। ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নেবে। ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয় মোহাম্মদ ইউনুছ বলেন, আমরা আমাদের দাবি আদায়ে তিনশ জনের একটি সমাবেশ করতে পারি না, সেখানে পাঁচ লাখ রোহিঙ্গার মহাসমাবেশ কীভাবে হয়? টেকনাফ জাদিমুরা শাল বাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের গুলিতে যুবলীগ নেতা ওমর ফারুক হত্যার ঘটনায় এখনো থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। স্থানীয় ও রোহিঙ্গাদের মাঝে চরম অসন্তুষ এবং উত্তেজনা বিরাজমান থাকায় ওই ক্যাম্পে নিরাপত্তাজনিত কারণে দেশি-বিদেশি সংস্থাগুলোর কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে। এমনই এক পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে সরকার ও স্থানীয় সুশীল সমাজ।
।
পাঠকের মতামত