ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ০৮/০৪/২০২৪ ১০:৩৩ এএম

বান্দরবানের থানচি-রুমা থেকে রাঙামাটির মিজোরাম সীমান্তবর্তী সাজেক পর্যন্ত পাহাড়ি অঞ্চলকে নিজেদের পূর্বপুরুষের আদি ভূমি মনে করে বম জনগোষ্ঠী তথা কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। এ ভূমি রক্ষায় সশস্ত্র যুদ্ধে নেমেছে কেএনএফ। পাহাড়ের ১২টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মধ্যে শুধু বম ছাড়া আর কোনো সম্প্রদায়কে কথিত এই ‘কুকি স্টেটে’ থাকতে দিতে নারাজ তারা।

তাই এ যুদ্ধে নেমে বান্দরবান ও রাঙামাটি জেলার ত্রিপুরা এবং মারমা জনগোষ্ঠীর ওপর বিরামহীন অত্যাচার চালাচ্ছে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা। বম জনগোষ্ঠীর নেতৃত্বে পরিচালিত কেএনএফ খাবারের জন্য হামলে পড়ছে মারমা ও ত্রিপুরা পাড়ায়। জোর করে উচ্ছেদ করে দিয়েছে তাদের। কেএনএফ সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না পাহাড়ের অন্য সম্প্রদায়ের মানুষও।

বৃহস্পতিবার রুমা যাওয়ার পথে কথা হয় নিয়াংইয়াং পাড়ার মোহন ত্রিপুরার সঙ্গে। তিনি বলেন, কুকি চিন আসার আগে রুমা উপজেলায় মারমা, ত্রিপুরা, বমসহ সব সম্প্রদায়ের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছিল। ‘বম পার্টি’ এখন ত্রিপুরা, মারমাসহ অন্য সম্প্রদায়ের পাড়ায় চাল ও খাবারের জন্য হামলা চালায়। না দিতে চাইলে মারধর করে। তারা গুলি করে অনেককে হত্যাও করেছে। তাদের ভয়ে এখন ত্রিপুরা ও মারমা পাড়ায় আতংক বিরাজ করছে।

এখানকার মংশৈপ্রু পাড়ার সাহু মারমা বলেন, কুকি-চিনের অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছি। তারা ইদানীং চাঁদাবাজিও শুরু করেছে।

সর্বশেষ চলতি বছরের গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ভোরে রুমা সদর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের রিজুক কোলাদী পাড়ার বাসিন্দা ক্যসিংমং মারমাকে গুলি করে হত্যা করে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা। স্থানীয়দের অভিযোগ, এ সময় পাড়ার মধ্যে প্রায় ২০০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে এবং ৩০টি পরিবারের ওপর তাণ্ডব চালায় বম পার্টি।

একইভাবে বিলাইছড়িতে নিরীহ ত্রিপুরাদের হত্যা ও পাড়া উচ্ছেদ করে কেএনএফ। ২০২২ সালের ২১ জুন সাইজাম পাড়ায় ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের গ্রামবাসীর ওপর কেএনএফ সন্ত্রাসীদের একটি সশস্ত্র দল এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে। এতে ঘটনাস্থলে বিচাই চন্দ্র ত্রিপুরা, সুভাষ চন্দ্র ত্রিপুরা, বীর কুমার ত্রিপুরা এবং ধনরাম ত্রিপুরা নিহত হন। হামলার পর কুকি-চিন সন্ত্রাসীরা বিলাইছড়ি ও রোয়াংছড়িতে তঞ্চঙ্গ্যা ও ত্রিপুরাদের উচ্ছেদ করে।

সন্ত্রাসীরা রেইংখ্যং ভ্যালির বড়থলি ইউনিয়ন ও রোয়াংছড়ির বিভিন্ন তঞ্চঙ্গ্যা পাড়াগুলোতে সশস্ত্র অবস্থায় গিয়ে তঞ্চঙ্গ্যাদের গ্রাম ত্যাগ করার নির্দেশ দিয়ে আতংক সৃষ্টি করে। তাদের হুমকির ফলে ওই বছরের ২৯ জুন বড়থলি ইউনিয়নের বিলপাড়ার ২২টি তঞ্চঙ্গ্যা পরিবার পাড়া ত্যাগ করে। ওই দিনই কুকি-চিনের সাতজন সশস্ত্র সন্ত্রাসী রোয়াংছড়ির প্রতাতচন্দ্র কার্বারী পাড়ায় (থাংপুরী পাড়া) গিয়ে তঞ্চঙ্গ্যাদের গ্রাম ত্যাগ করার নির্দেশ দেয়। তঞ্চঙ্গ্যাদের পাঁচটি পরিবার পাড়া ছেড়ে রোয়াংছড়ি সদরে এবং বাকি একটি পরিবার আলেক্ষ্যং ইউনিয়নের শঙ্খমণি পাড়াতে চলে যায়।

কুকি-চিনের হুমকির কারণে ওই মাসের বড়থলি ইউনিয়নের মিটিঙ্গ্যাছড়ির সাতটি ত্রিপুরা পরিবার এবং হেইঙ্গ্যোছড়ার আটটি তঞ্চঙ্গ্যা পরিবার পাড়া ত্যাগ করে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়।

বান্দরবানের একজন মারমা জনপ্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করে বলেন, কুকি-চিন সন্ত্রাসীরা দীর্ঘদিন ধরে হুমকি দিয়ে আসছে যে, বান্দরবান ও রাঙামাটি জেলার ৯টি উপজেলাকে নিয়ে কুকি-চিন স্টেট গঠন করা হবে। সেখান থেকে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ও তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠীর লোকজনকে উচ্ছেদ করবে তারা। এখানে বম সম্প্রদায় ছাড়া আর কেউ থাকতে পারবে না।

বিলাইছড়ি উপজেলার বড়থলি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতুমং মারমা জানান, বড়থলি থেকে কেএনএফর হুমকির মুখে ৮৮টি পরিবার তাদের শত বছরের পাড়া থেকে পালিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। তার মধ্যে বরইক্যাছড়া পাড়ার ৩৬টি তঞ্চঙ্গ্যা পরিবার, সাইজামপাড়ার বম, খিয়াং, তঞ্চঙ্গ্যা ও ত্রিপুরা ২২টি পরিবার, বিলপাড়ার ১৯টি তঞ্চঙ্গ্যা পরিবার ও কাইংগছড়াপাড়ার ১১টি তঞ্চঙ্গ্যা পরিবার রয়েছে।

বান্দরবানে ২০২৩ সালে খুন হয় ২৬ জন। তার মধ্যে সেনা সদস্য খুন হয়েছেন পাঁচজন। র‍্যাবের অভিযানে ৫৫ জঙ্গি এবং কেএনএফের ১৭ সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার হয়েছে। সুত্র : সমকাল

পাঠকের মতামত

হ্নীলায় শিশু আফসি হত্যা: হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে টেকনাফে মানববন্ধন

টেকনাফের হ্নীলায় শিশু হুজাইফা নুসরাত আফসির হত্যাকারীদের দ্রুত বিচার কার্যকর ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবীতে এক ...

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রাত মানেই সন্ত্রাস—‘ইয়ংস্টার’ গ্রুপের অঘোষিত রাজত্ব

কক্সবাজারের উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে স্বশস্ত্র ইয়াবা সন্ত্রাসীদের হামলায় স্কুল শিক্ষক ও তার আত্মীয় ...

কর্ণফুলীতে ইয়াবাসহ রোহিঙ্গা যুবক গ্রেফতার

চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে ইয়াবাসহ এক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে গ্রেফতার করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) বিকেলে ...

চাঞ্চল্যকর ইয়াবা লুট কাণ্ডে উত্তপ্ত নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত, প্রশাসনের তদন্ত শুরু

মাদক চোরাচালানে এক সময়ের আলোচিত এলাকা টেকনাফকে পেছনে ফেলে এখন শীর্ষস্থানে উঠে এসেছে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ...