প্রকাশিত: ১৫/০৪/২০২০ ৫:৩১ পিএম , আপডেট: ১৫/০৪/২০২০ ৫:৩৮ পিএম

মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিন, বাঁশখালী::
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে ঝুঁকির মধ্যে থেকেও কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ার জনসাধারণের মাঝে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন কুতুবদিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ রেজাউল হাসান। ইতোমধ্যে নিজ উদ্যোগে পিপিই মাস্ক,গ্লাভস সরবরাহ করেছেন নিজ এলাকার মানুষের চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রাখার জন্য। দিন-রাত সাধারণ রোগীদের স্বাস্থ্য সেবা দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন রোগের গুরুত্বপূর্ণ ঔষধ বিনামূল্যে সরবরাহ করেছেন। ফলে ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছে না সাধারণ রোগীরা। বর্তমানে সারা দেশে কোভিড-১৯ নামে করোনা আতঙ্কের মাঝে রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদানে ব্যস্ত বহু ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্য কর্মীদের পাশাপাশি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে মানবতার পরিচয় অক্ষুন্ন রাখতে অনড় ও বদ্ধপরিকর ভূমিকা পালন করছেন এই বরেণ্য চিকিৎসক।

স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার ব্যতীত প্রতিদিন সকাল ৯টা হতে বের হয়ে হাসপাতালের রোগী দেখার পর রাত ১১টা পর্যন্ত এলাকার রোগীদেরও চিকিৎসা সেবায় অক্লান্ত পরিশ্রম করেন এই দুই চিকিৎসক। নিজ সন্তান ও স্ত্রীকে চট্টগ্রাম শহরের বাসায় রেখে এসে তিনি অনবরত চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, শত ব্যস্ততার মাঝেও ইতিমধ্যে নিজ এলাকা উত্তর ধূরুং ইউনিয়নের অসহায়, দিন-মজুর, খেঁটে খাওয়া ১২০ পরিবারের মাঝে গোপনে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছেন প্রতিনিধি পাঠিয়ে। আগামীতে বৃহত্তর পরিসরে এলাকার মানুষকে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করবে বলে জানা যায়।

বর্তমানে কুতুবদিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ রেজাউল হাসান একজন সুপ্রতিষ্ঠিত ও স্বাবলম্বী হওয়ার পরও সন্তানদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দিনরাত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার কারণ কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি ডাক্তারি পেশাকে অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে গ্রহণ করিনি। আমার বাবা জনগণের সেবার উদ্দেশ্যেই তিনি আমাকে ডাক্তারি পড়ার পরামর্শ দেন এবং আমিও তাঁর আদর্শে অনুপ্রেরিত হয়ে মানবিক দৃষ্টিতে ও জনসেবার উদ্দেশ্যে ডাক্তারি নিয়ে পড়ালেখা করেছি এবং ডাক্তার হয়েছি। তাই ডাক্তারিকে আমার পেশা হলেও মূলত মানবসেবার দারুণ মাধ্যম বলে মনে করি। মানব সেবার উদ্দেশ্যে ডাক্তারি পেশায় যোগ দিয়েছি। এখন দেশের এমন চরম সংকটাপন্ন মুহূর্তে আমরা যদি ঘরে বসে থাকি, নিজেদের স্বার্থ সুবিধা বিবেচনা করি। তাহলে দেশের সাধারণ মানুষ কাদের কাছে যাবে? আর আমাদের চিকিৎসকদের মানব সেবার ধর্মের মর্যাদাটাও কিভাবে ঠিক থাকবে।”

করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “ঝুঁকি তো আছেই। তবে তাই বলে জনসাধারণের প্রয়োজনকে তো অদেখা করা যাবেনা। আর আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যাপারে সরকার ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তো যথাসম্ভব সহযোগিতা করছেনই। এছাড়া দেশের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত কর্মকর্তাদের সুবিধার্থে সরকার, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, প্রশাসন সহ বিভিন্ন সমাজসেবী সংগঠনের প্রতি তিনি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেন, দেশের এমন চরম সংকটাপন্ন মুহূর্তে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান যদি চিকিৎসকদের প্রতি আন্তরিক মনোভাব পোষণ না করতেন৷ তাহলে চিকিৎসকদের একক চেষ্টা ও মনোবলে চিকিৎসা ব্যবস্থায় বিরাট ব্যাঘাত ঘটতো। তবে আশার বিষয় হলো আমাদের ঐকান্তিক ইচ্ছা মনোবল ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সমন্বয়ে আমরা রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে পারছি।”

উল্লেখ্য, ডাঃ রেজাউল হাসান সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান। তিনি কুতুবদিয়া উপজেলার উত্তর ধূরুং ইউনিয়নের আজিম উদ্দিন সিকদার পাড়ার আবদুল মাবুদ সিকদার এর সুযোগ্য সন্তান।

বলা বাহুল্য, ডাঃ রেজাউল হাসান পেশাদার ডাক্তার হলেও সকলের নিকট গরীবের ডাক্তার হিসেবে প্রিয় ও সুপরিচিত। ডাঃ রেজাউল হাসান দুই ছেলের জনক। সাথে তাঁর স্ত্রী ডাক্তার কাশেফা খানমও একই উদার মন মানসিকতার মানুষ। কাশেফা খানম জেসমিন চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা। জাতিকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে তিনিও অসামান্য অবদান রেখে চলেছেন।

করোনা আতঙ্কে দেশে লুকিয়ে থাকা বেশকিছু দায়িত্ব অসচেতন ডাক্তারদের সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি কারো বিরুদ্ধে কিছুই বলতে রাজি হননি। তিনি বলেন,” যার যার স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে ভাবার অধিকার সকলের রয়েছে। কেউ যদি রোগীদের সংস্পর্শে থাকার দরুন নিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাবোধ করেন। তাহলে তা তাঁর ব্যক্তি স্বাধীনতার ব্যাপার। এ ব্যাপারে আমরা কাউকে ফাঁকিবাজ বা দায়িত্বহীন বলতে পারিনা। তাঁদের ব্যাপারে যা বলার তা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন। তিনি দেশের সর্বোচ্চ অভিভাবক ও অভিজ্ঞ রাষ্ট্রপ্রধান। কাকে কি বলবেন ও কার ব্যাপারে কি করবেন তা তিনি আমাদের চেয়ে নিশ্চয় ভালো জানেন। এ ব্যাপারে কারো সমালোচনা করার ইখতিয়ার আমাদের নেই।”

ডা. রেজাউল হাসান ছাড়াও কুতুবদিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আরো ৯জন চিকিৎসক সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তারা হলেন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, ডা. জয়নাল আবেদীন প্রমুখ।

এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন,”করোনা ভাইরাস সারা বিশ্বে মহামারী আকার ধারণ করেছে। এ ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণে আনতে সচেতনতাই একমাত্র অবলম্বন। এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ মারা যাচ্ছে। বাংলাদেশেও এ ভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মারাত্নক আকার ধারণ করবে খুব শিঘ্রই। এ সময়ে সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে চলে জনসাধারণকে বাড়িতে অবস্থান করার জন্য অনুরোধ করছি। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাহিরে না যাওয়াই ভাল। বাহিরে গিয়ে নিজে এবং নিজের পরিবারকে ঝুঁকির মুখে ফেলবেন না। কুতুবদিয়াবাসির কথা চিন্তা করে চরম ঝুঁকিতে থেকেও আমরা ১০ জন চিকিৎসক চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি। ১২টি কমিউনিটি ক্লিনিক সকাল ৮ টা – ১২ টা পর্যন্ত খোলা রাখা হচ্ছে। এছাড়াও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের হট লাইনে যোগাযোগ করলে মিলছে স্বাস্থ্য সেবা।”
এ সময় জনসাধারণ কে সামাজিক দূরুত্ব বজায় রাখতে সচেতন হওয়ার জন্য ও অনুরোধ করেন এ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।

পাঠকের মতামত

কক্সবাজারে টমটমের অবৈধ লাইসেন্স প্রদান নিয়ে কঠোর হুঁশিয়ারি

কক্সবাজার পৌরসভার টমটমের অবৈধ লাইসেন্স প্রদান নিয় কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন ...

উখিয়া নিউজ  পরিবারের শোক এনজিও ব্যক্তিত্ব ও SHED-এর নির্বাহী পরিচালক মোঃ উমরার ইন্তেকাল

এনজিও ব্যক্তিত্ব ও সোসাইটি ফর হেলথ এক্সটেনশন এন্ড ডেভেলপমেন্ট (SHED) এর নির্বাহী পরিচালক মোঃ উমরা ...