বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর সক্ষমতা বাড়াতে পেকুয়ার মগনামায় দেশের প্রথম স্থাপিত হতে যাওয়া সাবমেরিন স্টেশনের জন্য অধিগ্রহণকৃত জায়গায় এবার লবণ চাষে মাঠে না নামতে চাষিদের প্রতি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। প্রতিবছরের মতো নভেম্বর মাসের শেষদিকে চাষিরা লবণ উৎপাদনের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই নিষেধাজ্ঞার পক্ষে গত কয়েকদিন ধরে এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। এদিকে সাবমেরিন স্টেশন স্থাপনের কাজ এখনো শুরু না হলেও অধিগ্রহণকৃত ৪৬৬ একর জমিতে লবণ চাষে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় মাথায় হাত উঠেছে চাষিদের।
অধিগ্রহণকৃত জমিতে লবণ চাষে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মারুফুর রশিদ খাঁন। তিনি বলেন, ‘সাবমেরিন স্টেশন স্থাপনের জন্য অধিগ্রহণকৃত জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। আগামী ৩ নভেম্বর জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণের চেক তুলে দেওয়া হবে। জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন উপস্থিত থেকে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে জমির মালিকদের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে এই চেক হস্তান্তর করা হবে। এর পর সাবমেরিন স্টেশন স্থাপনের কাজে নামবেন সংশ্লিষ্টরা। এজন্য আগে থেকেই অধিগ্রহণকৃত জায়গায় লবণ চাষে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।’
অভিযোগ উঠেছে, প্রায় একবছর আগে এই জমি অধিগ্রহণ করা হলেও জমির মালিকেরা প্রান্তিক চাষিদের কাছ থেকে আগাম টাকা নিয়ে আগামী মৌসুমে লবণ চাষের জন্য লাগিয়ত করেছেন। এতে প্রায় ৩০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন প্রান্তিক চাষিরা।
স্থানীয় লবণ চাষি শহীদুল ইসলাম, আজিম উদ্দিনসহ ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা বলেন, ‘ইতিমধ্যে লবণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বেশ উৎসাহ নিয়ে লবণ চাষের দিকে ঝুঁকছেন চাষিরা। তাই চড়ামূল্যে জমি লিজ নিয়ে লবণ চাষের জন্য পুরোদমে প্রস্তুতি চলছে চাষিদের মাঝে। কিন্তু অধিগ্রহণকৃত জমিতে লবণ চাষে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মাইকিং করার আমাদের মাথায় হাত উঠেছে। এমনকি বিষয়টি জানার পর লিজের টাকা ফেরত চেয়ে শরণাপন্ন হলেও টাকা ফেরত দিচ্ছেনা জমির মালিকেরা।’
তবে জমির মালিকদের দাবি, সাবমেরিন স্টেশন স্থাপনের জন্য সরকার মগনামা ইউনিয়নের কয়েকটি মৌজার ৪৬৬ একর লবণ চাষের জমি অধিগ্রহণ করে। ওই জমি ইতিমধ্যে নৌ-বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এখনো ক্ষতিপূরণ পায়নি জমির মালিকেরা। তাই চলতি মৌসুমে লবণ চাষের জন্য প্রান্তিক চাষিদের এই জমি লিজ দেন। কিন্তু লবণ চাষে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় চাষিদের কাছ থেকে নেওয়া লিজের টাকা ফেরত দেওয়ার মত অবস্থা তাদের নেই। কেননা লিজের বিপরীতে দুইমাস আগে নেওয়া টাকা ইতিমধ্যে তাদের খরচ হয়ে গেছে। তবে জমির ক্ষতিপূরণ বাবদ সরকারের কাছ থেকে টাকা পাওয়ার পর লিজ গ্রহীতা প্রান্তিক চাষিদের টাকাও ফেরত দেওয়া হবে।
মগনামা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. শরাফত উল্লাহ ওয়াসিম দৈনিক কক্সবাজারকে বলেন, ‘এখনো যেহেতু অধিগ্রহণকৃত জমিতে সাবমেরিন ঘাটি স্থাপনের কাজ শুরু হয়নি, সেহেতু মানবিক দিক বিবেচনায় নিয়ে মোটা অংকের টাকায় ওই জমি লিজ নেওয়া প্রান্তিক চাষিদের আগামী মৌসুমেও লবণ চাষের সুযোগ করে দেওয়া উচিত। তা না হলে প্রান্তিক চাষিরা বিনিয়োগকৃত টাকা ফেরত না পেয়ে দেউলিয়া হবেন।’
দৈনিক কক্সবাজার:
পাঠকের মতামত