উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯/০৬/২০২৪ ৯:৫৩ এএম

‘আমি কিছুদূর ওপরে ওঠার সাথে সাথে নিচে পড়তে থাকি। বুঝতে পারছিলাম না কী হচ্ছে। হঠাৎ দেখলাম আমি সমুদ্রের মধ্যে পড়ে গেছি।’ বলছিলেন ঢাকার নিউ ইস্কাটন থেকে কক্সবাজার পর্যটন স্পটে আসা আফসান জ্যাবিন অদিতি। তিনি রোমাঞ্চকর প্যারাসেইলিংয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে দুর্ঘটনায় পড়েন। তিনি বলেন, দড়ি ছিঁড়ে পড়ে যাওয়ার পর দুই থেকে তিনবার সমুদ্রের পানিতে ডুবে হাবুডুবু খেয়েছি। লবণপানি খেয়ে বমি হয়েছে কয়েকবার। বাম হাত ও দুই পায়ে ব্যথা পেয়েছি। তাছাড়া মেরুদণ্ডে প্রচণ্ড ব্যথা পেয়েছি।

অদিতিই প্রথম না। এর আগেও বিভিন্ন সময় ‘ফ্লাই এয়ার সি স্পোর্টস প্যারাসেইলিং’ নামের এই প্রতিষ্ঠানে এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের একজন বিচকর্মী। তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অদিতির আগে গত ১৯ মে একই প্রতিষ্ঠানে প্যারাসেইলিং করতে গিয়ে ১ জন পর্যটক দড়ি ছিঁড়ে নিচে পড়ে যান। সমুদ্রে ডুবে যান সেই পর্যটক। পরে স্পিডবোট নিয়ে বিচকর্মীরা তাকে উদ্ধার করেন। সেই পর্যটক গুরুত্বর আহত হয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। পর্যটকদের অভিযোগ, কোনো প্রকার সেফটি সিকিউরিটি মেইনটেইন না করে প্যারাসেইলিং পরিচালনা করছে কর্তৃপক্ষ। এক্ষেত্রে প্যারাসেইলিংয়ে ব্যবহৃত স্পিডবোট এবং ব্যবহৃত রশিসহ অন্য উপকরণসমূহ উপযোগী না বলে অভিযোগ উঠেছে।

অদিতি বলেন, ২৪ মে বিকালে দরিয়ানগর পয়েন্টে গিয়ে ‘ফ্লাই এয়ার সি স্পোর্টস প্যারাসেইলিং’ নামের এই প্রতিষ্ঠানে ২ হাজার টাকায় টিকিট কেটে প্যারাসেইলিং শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যেই দড়ি ছিঁড়ে সাগরে পড়ে যান তিনি। তার কথায়, ‘আমি সাঁতার-না জানা মানুষ। আর একটু দূরে গিয়ে এমন ঘটনা ঘটলে জীবন বাঁচাতে পারতাম কি না সন্দেহ। অথচ কর্তৃপক্ষের কোনো সেফটি মেজারমেন্ট নেই। আমাকে উদ্ধার করার জন্য কোনো বোট ছিল না।’ অদিতি জানান, বিষয়টি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ছবি-ভিডিও প্রকাশ করার পর কক্সবাজার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে যোগাযোগ করলে তাকে অনলাইনে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। আফসান জ্যাবিন অদিতি দুর্ঘটনার এক ভিডিও প্রতিদিনের বাংলাদেশকে পাঠিয়েছেন। সেখানে দেখা গেছে, প্যারাসেইলিং শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যে ঘটে এমন দুর্ঘটনা। অনেক দূর থেকে দুই যুবক তাকে উদ্ধারের জন্য দৌড়ে যান।

ফ্লাই এয়ার সি স্পোর্টস প্যারাসেইলিংয়ের মালিক মোহাম্মদ ফরিদ নিজেও পরিষ্কার নন তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে। দুর্ঘটনার পর তিনি বলেছেন, ১৯ মের ঘটনাটা অসাবধানতাবশত ঘটেছে। তবে ২৪ মের ঘটনাটিকে পুঁজি করে একটি পক্ষ তার ব্যবসা বন্ধ করার চেষ্টা করছে। এই পক্ষটি কেÑ এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সৈকতের যে পয়েন্টটি আমি ব্যবহার করি, ওখানে অন্য কেউ ব্যবসা করতে চায়। তারাই দুর্ঘটনাটি নিয়ে অপতৎপর হয়েছে।

বিষয়টি সম্পর্কে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ রানা বলেন, ১৪টি শর্তসাপেক্ষে প্যারাসেইলিং পরিচালনার অনুমতি প্রদান করেছে জেলা প্রশাসন। যদি এই ১৪টি শর্ত অমান্য করা হয় তাহলে অনুমতি বাতিল করা হবে। এ ব্যাপারে কোনো অভিযোগ থাকলে জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত জানানোর আহ্বান জানান তিনি। ১৪ শর্তের মধ্যে আছে, দক্ষতাসম্পন্ন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চালককে দিয়ে প্যারাসেইলিং পরিচালনা করতে হবে। প্রতিকূল আবহাওয়ায় প্যারাসেইলিং পরিচালনা করা যাবে না। যাত্রী ও চালকের জন্য লাইফ জ্যাকেট বাধ্যতামূলক। দুর্ঘটনা ঘটলে মালিকপক্ষ দায়ী থাকবে এবং তাৎক্ষণিক চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

আফসান জ্যাবিন অদিতি কক্সবাজার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট আদালতের কর্মকর্তা। কক্সবাজার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পেশকার শাহজাহান নূরি বলেছেন, আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে একটি আদেশ প্রদান করবেন বলে জানিয়েছেন।

পাঠকের মতামত

দৈনিক জনকণ্ঠের রিপোর্ট রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় প্রাইভেট হাসপাতালগুলোর সরকারি লাইসেন্স নেই, তদন্ত টিমের পরিদর্শন

রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা উখিয়ায় ১৫টি ক্লিনিক হাসপাতাল ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার চলছে অনুমতি বিহীন। সরকারিভাবে কোন ...

উখিয়ায় র‌্যাব পরিচয়ে অপহরণ, ইউনিফর্ম, অস্ত্র-গুলি ও হাতকড়াসহ আটক ১

কক্সবাজারের উখিয়ায় র‌্যাব পরিচয়ে রোহিঙ্গা যুবককে অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা এবং প্রতারণার অভিযোগে একটি সংঘবদ্ধ ...