বিশেষ প্রতিবেদক::
টানা পাঁচদিন ধরে বৃষ্টিপাত, পাহাড়ী ঢল ও পূর্ণিমার তিথির জোয়ারের পানিতে বাড়ি-ঘর ডুবে যাওয়ায় শত শত পরিবার টাবু টাঙ্গিয়ে গাদাগাদি বসবাস করছে প্রধান সড়কের পাশে। কক্সবাজারে শনিবারই ঝলমলে রোদের দেখা মিলেছে। জেলার বির্স্তীণ জনপদের প্রত্যন্ত এলাকার লোকালয় থেকে বন্যার পানি কমে যাওয়ায় তলিয়ে যাওয়া বাড়ি-ঘর মেরামতের উদ্যোগ নিচ্ছে বসতিরা।
বৃহত্তর ঈদগাহ, চকরিয়া পশ্চিমাঞ্চালের বিএমচর, কোনাখালী, পুর্ববড় ভেওলা, ঢেমুশিয়া, পশ্চিম বড়ভেওলা ও বদরখালীর দুর্গত শত শত পরিবার চকরিয়া-টৈইটং-বাঁশখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং চিরিঙ্গা বদরখালী সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে তাঁবুতে রয়ে গেছে। পলিথিনের তাঁবু টাঙ্গিয়ে সড়কে আশ্রয় নেয়া বেশির ভাগ পরিবার দরিদ্র শ্রেণীর।
বর্তমানে তাবুই তাদের ভরসা। বন্যার পানিতে তলিয়ে ও ভেসে যাওয়ায় ওসব তাবুতে বৃদ্ধ, মেয়ে-শিশুরা আপাতত বসবাস করছে। চারদিন ধরে সড়কে পলিথিনের তাঁবুতে আশ্রয় নেয়ায় পরিবারের উপার্জনক্ষম কেউ দিনমজুরি কাজে যেতে পারছেনা। দুর্গত ওই পরিবার গুলোতে খাবার ও পানীয় জলের সঙ্কট ছাড়াও বেশির ভাগ পরিবার অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে বলে জানা গেছে।
চকরিয়ার ইউএনও মোহাম্মদ সাহেদুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টিপাত বন্ধ থাকায় শুক্রবার থেকে সুরাজপুর-মানিকপুর, কাকারা, লক্ষ্যারচর, বরইতলী, হারবাং, ডুলাহাজারা, ফাঁসিয়াখালী, চিরিংগা, খুটাখালী ও পৌরসভার লোকালয় থেকে বানের পানি অনেকাংশে নেমে গেছে। কিন্তু উপকুলীয় সাহারবিল ছাড়া বিএমচর, কোনাখালী, পুর্ববড় ভেওলা, ঢেমুশিয়া, পশ্চিম বড়ভেওলা ও বদরখালী ইউনিয়নের জনসাধারণ এখনও পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।
তিনি বলেন, ভারী বৃষ্টিপাত না হলে আজ-কালের মধ্যে প্রত্যেক এলাকা থেকে বন্যার পানি নেমে যাবে।
এদিকে বৃহত্তর ঈদগাঁও সহ বন্যায় প্লাবিত এলাকাগুলো থেকে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ভেসে উঠেছে রাস্তা-ঘাটের ক্ষত চিহ্ন। বন্যার প্রবল স্রোতে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে অধিকাংশ ঘরবাড়ী, অভ্যন্তরীন সড়ক ও উপ-সড়কগুলো। চলাচল অযোগ্য হয়েছে পড়েছে বন্যা কবলিত এলাকার মেঠোপথ। ক্ষতিগ্রস্ত জালালাবাদ ইউনিয়নে ১২’শ পরিবারের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে চেয়ারম্যান ইমরুল হাসান রাশেদের চাল বিতরণ করেছেন।
মাছুয়াপাড়া, গোলপাড়া, মোহনভিলা পালাকাটার ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ড ছাতিপাড়া, পূর্বলরাবাক, দক্ষিণ লরাবাক ও চরপাড়া এলাকার গরীব ও দু:স্থদের মধ্যে এসব ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়। অপরদিকে ঈদগাঁওয়ে’র সঙ্গে ফরাজীপাড়া ও পোকখালীর এবং ঈদগড়ের সড়ক যোগাযোগ অদ্যাবধি বিচ্ছিন্ন থাকায় জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।
এছাড়াও জালালাবাদের জনগণ নিজেদের উদ্যোগে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। চেয়ারম্যান ইমরুল হাসান রাশেদ আশা প্রকাশ করে বলেছেন, সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে ভাঙ্গা বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও ফরাজী পাড়া সড়ককে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করতে পারবেন। তিনি ত্রাণের চেয়ে ভাঙ্গা বাঁধ-সড়ক মেরামত অতীব জরুরী বলে মনে করছেন।
জানা গেছে, বন্যার পানি নেমে গেলেও কাঁচা ঘর-বাড়ি পানিতে তলিয়ে গিয়ে বসবাস অনুপযোগী হওয়ায় কেউ কেউ খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। বন্যার পানি ওসব বাড়ির গুছালো জিনিসপত্র তছনচ করে দিয়েছে।
ঈদগাঁহওর দরগাহ পাড়ার প্রধান যাতায়াত সড়কটি ভেঙ্গে যাওয়ায় দশ হাজারের বেশী মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। জেলার প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জ থেকে ঢলের পানি কমে যাওয়ায় কর্দমাক্ত সহ নানা কারনে দুর্ভোগে পড়েছে পাড়া মহল্লার লোকজন।
অপরদিকে বন্যার পানি সরে যাওয়ার পর দেখা গেছে বন্যা দুর্গত এলাকার রাস্তা-ঘাটের শোচনীয় অবস্থা। ভেঙ্গে ও খানাখন্দকে পরিণত হওয়ায় চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে রামু গর্জনিয়া-বাইশারী সড়কে নির্মিত ১৬১ মিটারের দৈর্ঘ ব্রিজের এপ্রোচ সড়ক ব্রিজ থেকে পৃথক হয়ে পড়েছে।
গর্জনিয়া ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম জানান, বন্যায় ১৬১মিটারের গর্জনিয়া সেতুর এপ্রোচ সড়কের চিহ্নও নেই। এ ব্রিজে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকলে জনচলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টিসহ গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়া, ঈদগড়, বাইশারী ও দু’ছড়ি পাঁচটি ইউনিয়নে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা প্রশাসনের পক্ষে কঠিন সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
গর্জনিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগ নেতা হাফিজুল ইসলাম বলেন, এ ব্রিজ দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে থাকে। এপ্রোচ সড়কটি ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেলেও এলজিইডি এবং পানি উন্নয়নবোর্ডের কর্মকর্তাদের কোন মাথা ব্যথা নেই।
তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট দপ্তরের এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার কারণে পাঁচ ইউপিবাসির দু:খ লেগেই রয়েছে। জনস্বার্থে সেনা বাহিনীকে এ ব্রিজের উন্নয়ন কাজটি পদার্পন করতে তিনি প্রধানমন্ত্রীর নিকট দাবী জানান।
পাঠকের মতামত