প্রকাশিত: ০৭/০৭/২০১৭ ৭:৫৯ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৫:১০ পিএম

উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
অব্যাহত ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে ভাসছে কক্সবাজারের জনপদ। দিনে দিনে বাড়ছে প্লাবিত এলাকার সংখ্যা। পানিবন্দি দিন কাটাচ্ছে কয়েক লাখ মানুষ। দুর্গত জনপদের মানুষের মাঝে খাবার ও পানীয় জলের চরম সঙ্কট দেখা দিয়েছে। পানিতে ডুবে ও পাহাড়ের মাটিচাপায় সহোদরসহ মারা গেছেন ছয়জন।

কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান ছৈয়দ আলম, জালালাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান ইমরুল রাশেদ, পোকখালী ইউপি চেয়ারম্যান রফিক আহমদ, চৌফলদন্ডী ইউপি চেয়ারম্যান ওয়াজ করিম বাবুল, ইসলামাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান নুর ছিদ্দিক জানান, টানা এক সপ্তাহের বর্ষণ বৃহত্তর ঈদগাঁওর কয়েক লাখ মানুষকে চরম দুর্গতিতে ফেলেছে। ডুবে রয়েছে বাড়ি-ঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, নলকূপও ডুবে রয়েছে। ফলে পানীয় জলে সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সঙ্কট রয়েছে খাবারেরও।

একই অবস্থার কথা জানালেন চকরিযা উপজেলার চিরিঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন, সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম, বরইতলী ইউপি চেয়ারম্যান জালাল আহমদ সিকদার, ডুলাহাজারার চেয়ারম্যান নুরুল আমিন, কৈয়ারবিল ইউপি চেয়ারম্যান মক্কি ইকবাল হোসেন, লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তাফা কাইছার ও হারবাং ইউপি চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলামও।

তারা জানান, মাতামুহুরী নদীতে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে এখনো উপজেলার অন্তত ৩ লক্ষাধিক মানুষ পানিতে ভাসছে। দুর্গত জনপদের মানুষের ঘর-বাড়ি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় অনেকে সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিলেও বেশির ভাগ পরিবার চরম কষ্টের মাধ্যমে দিনযাপন করছে। সরকারিভাবে দুর্গত মানুষের জন্য এখনো পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণ সহায়তা দেয়া হয়নি।

তারা আরও বলেন, বসতঘরের টিউবওয়েল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় দুর্গত মানুষের মাঝে নিরাপদ পানীয় জলের তীব্র সঙ্কট চলছে।

কোনাখালী ইউপি চেয়ারম্যান দিদারুল হক সিকদার, বিএমচর ইউপি চেয়ারম্যান এসএম জাহাংগীর আলম, ঢেমুশিয়া ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আলম জিকু, পশ্চিমবড় ভেওলা ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বাবলা ও বদরখালী ইউপি চেয়ারম্যান খাইরুল বশর বলেন, ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকলেও মঙ্গলবার পর্যন্ত তাদের এলাকার লোকজন দুর্ভোগমুক্ত ছিল। তবে গতকাল বুধবার ভোরে বর্ষণের কারণে মাতামুহুরী নদীর পানি প্রচণ্ড বেগে বেড়িবাঁধ ও স্লুইচ গেট টপকে লোকালয়ে প্রবেশ করে। এতে করে উপকূলের বেশির ভাগ ইউনিয়নের নিচু এলাকা পানির সঙ্গে একাকার হয়ে গেছে।

তারা বলেন, বানের পানিতে উপকূলের মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছে। দুর্গত এসব মানুষ পলিথিনের টাবু টাঙিয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে আঞ্চলিক মহাসড়ক ও চিরিঙ্গা বদরখালী সড়কে। বর্তমানে দুর্গত মানুষের মাঝে শুকনা খাবার ও পানীয় জলের হাহাকার চলছে।

সাহারবিল ইউপি চেয়ারম্যান মহসিন বাবুল জানিয়েছেন, ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সাহারবিল ইউনিয়নের নিচু এলাকা গত চারদিন ধরে তলিয়ে গেছে। ইউনিয়নের অন্তত ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী জানিয়েছেন, বুধবার সকালে ভারি বর্ষণের ফলে আবারও পৌর এলাকার জনসাধারণ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। আগের দিন মাতামুহুরী নদীর পানির প্রবল স্রোতে পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ক্ষেত্রপাল মন্দির এলাকায় ৬টি বসতঘর মাতামুহুরীর নদীর গর্ভে তলিয়ে গেছে। পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের চরপাড়া গ্রামে কয়েকটি পাকা বসতঘর নদীতে তলিয়ে গেছে। এখনো পৌরসভার ভাঙারমুখ, নামার চিরিঙ্গা, হালকাকারা, কাজিরপাড়াসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের অন্তত শতাধিক বসতঘর পানিতে ডুবে রয়েছে।

এদিকে, ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে প্রশাসনিক কার্যক্রমে এবং স্বাভাবিক জীবন-যাপনে পুলিশ সদস্যরা চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলার বিভিন্ন থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। অপরদিকে অফিস ও বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ার কারণে প্লাবিত এলাকার অফিসে প্রশাসনিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেনও ছয়জনের মৃত্যুর কথা স্বীকার করে বলেন, জেলার বন্যাকবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করা হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঠেকানো অসম্ভব। তবে মোকাবেলা করার প্রস্তুতি ও চেষ্টার কমতি নেই। বেশ কিছু এলাকায় নলকূপ তলিয়ে যাওয়ায় খাবার পানির সঙ্ক থাকতে পারে।

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, সঙ্কট উত্তরণে চকরিযায় দেড় লাখ টাকা এক হাজার শুকনা খাবারের প্যাকেট, রামু, সদর ও উখিয়ায় এক লাখ নগদ টাকা ও রামু এবং সদরে ৩০০ প্যাকেট শুকনা খাবার, উখিয়ায় ৪০০ প্যাকেট শুকনা খাবার দেয়া হয়েছে। মারা যাওয়া পরিবারগুলোতে ২০ হাজার টাকা করে বিতরণ করা হয় বলেও উল্লেখ করেন জেলা প্রশাসক।

পাঠকের মতামত

রামু সহিংসতার ১২ বছর আজ

মামলায় আসামী করা হয় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের, প্রত্যাহারের দাবি রামু সহিংসতার ১২ বছর আজ। ঘটনার পর ...

ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে মিয়ানমারের ১২০ সেনা ও সীমান্তরক্ষী সদস্যকে

দুই দেশের দূতাবাসের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের নাগরিকদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া অব্যাহত ...