ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ১৪/০৩/২০২৪ ১১:০৪ এএম

অতিমাত্রায় ভূ-গর্ভের পানি উত্তোলনের কারণে কক্সবাজারে দিন দিন পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। বাড়ছে ভূ-গর্ভস্থলে লবণাক্ততা। ফলে এ অঞ্চলে সুপেয় পানির সংকট তীব্র হচ্ছে। এতে প্রাকৃতিক পরিবেশে ও ইকোসিস্টেমের ওপর প্রভাব পড়তে পারে চরমভাবে।

এ অবস্থা চলতে থাকলে পানিতে ই-কোলাই ভাইরাস বৃদ্ধি পেয়ে পানিবাহিত রোগ বাড়তে পারে। ধস নামতে পারে পর্যটনশিল্পেও। ব্যাহত হতে পারে স্থানীয়দের স্বাভাবিক জীবনযাপন। শুস্ক মৌসুমে এ পরিস্থিতি হতে পারে আরও ভয়াবহ। এ অবস্থায় বৃষ্টির পানি হার্ভেস্টিং কিংবা সাগরের লবণ পানি পরিশোধন করে সুপেয় পানি সংকট সমাধানের পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।

Pause

Unmute
Remaining Time -10:07

Close PlayerUnibots.com
সুপেয় পানির সংকট উদ্বেগজনক জানিয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বলছে, কক্সবাজারে সুপেয় পানি সংকট মোকাবিলায় কাজ করছে তারা।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালে উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জরুরি ভিত্তিতে পানি সরবরাহ করতে বিভিন্ন ক্যাম্পে ৩ হাজার অগভীর, ৮০টি গভীর এবং এনজিও সংস্থা আরও ২০০টি গভীর নলকূপ স্থাপন করে। প্রতিদিন রোহিঙ্গা এবং স্থানীয়দের জন্য ৩০ লাখ লিটার পানি উত্তোলন করা হচ্ছে শুধু দুই উপজেলায়। অতিমাত্রায় পানি উত্তোলনের কারণে এরইমধ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসানো অগভীর নলকূপের অর্ধেকের বেশি অকার্যকর হয়ে গেছে। এ শুস্ক মৌসুমে সুপেয় পানির ভয়াবহ সংকট দেখা দিতে পারে।

তথ্য মতে, টেকনাফের হ্নীলা, টেকনাফ সদর, বাহারছড়া, হোয়াইক্যং ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। একইসঙ্গে যোগ হয়েছে লবণাক্ততা। উখিয়াতে তীব্রতা দেখা না দিলেও দিন দিন পানির স্তর নিচে নামছে। কক্সবাজার শহরের নুরপাড়া, মাঝিরঘাট, টেকপাড়া, নতুন বাহারছড়া, বদরমোকামসহ বিভিন্ন এলাকায় সুপেয় পানির অভাব দেখা দিয়েছে। অনেক স্থানের পানি খাওয়া তো দূরের কথা, গৃহস্থালির কাজে ব্যবহারও করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় সার্ফেস ওয়াটারের দিকে জোর দেওয়ার পরামর্শ সচেতন মহলের।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)র সাবেক সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, প্রতিদিন যে পরিমাণ পানি ভূ-গর্ভ থেকে উত্তোলন করা হচ্ছে অদূর ভবিষ্যতে মাটির নিচে সুপেয় পানি পাওয়া যাবে না। এখান থেকে রক্ষা পেতে হলে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। একইসঙ্গে নদীর লবণাক্ত পানি পরিশোধন করা যায় কি না সেটিও পরিকল্পনায় নিতে হবে সংশ্লিষ্টদের।

কক্সবাজার সিভিল সার্জন (ভারপ্রাপ্ত) ডা. নোবেল কুমার বড়ুয়া বলেন, ই-কোলাই ভাইরাস বায়বীয় ও অবায়বীয় দুই অবস্থাতেই থাকতে পারে। এ ভাইরাসের কারণে মূত্রনালিতে সংক্রমণ, রক্তে বিষক্রিয়া, মেনিনজাইটিস টাইফয়েড, ডায়রিয়া, বমি এবং রক্তযুক্ত মল, মূত্রত্যাগের সময় ব্যথা, প্রস্রাবে দুর্গন্ধ এবং প্রচণ্ড জ্বর হতে পারে।

ভবিষ্যতে সুপেয় পানি সংকট দূর করতে রেইন ওয়েটার হার্ভেস্টিং প্রকল্প চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। বিশেষ করে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত উখিয়া টেকনাফকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এরইমধ্যে উখিয়ার পালংখালীতে ৬০০ একর জমি লিজ নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান।

তিনি বলেন, টেকনাফ-উখিয়া এবং কক্সবাজার শহর ও উপকূলীয় এলাকায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিতে পারে এমন আশঙ্কায় ওয়াটার-এনার্জি-লাইভলিহোড (ওয়েল) নামে একটি প্রকল্প প্রস্তাব করেছি। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা গেলে সুপেয় পানি সরবরাহের পাশাপাশি উৎপাদিত অতিরিক্ত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা যাবে। কর্মসংস্থান হবে সহস্রাধিক বেকার যুবকের।

তিনি বলেন, প্রস্তাবিত জমি পাওয়া গেলে ৬ লাখ মানুষ বছরের ৮ মাস বিশুদ্ধ পানি পাবে। বৃষ্টির পানি ছাড়াও নাফ নদের লবণাক্ত পানি পরিশোধিত করে সুপেয় পানি সরবরাহ করা যায় কি না তা নিয়েও কাজ করা হবে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. সারওয়ার হোসেন বলেন, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পর থেকে ভূ-গর্ভস্থলে পানির সংকট উপলব্ধি করে প্রায় ১০০ একর জমিতে জলাশয় করেছি। সেখান থেকে পরিশোধন করে রোহিঙ্গা এবং স্থানীয়দের মাঝে সুপেয় পানি সরবরাহ করা হবে। এরপরও সংকট থাকতে পারে। তাই করণীয় বিষয় নিয়েও চিন্তাভাবনা চলছে।

পাঠকের মতামত

চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রেলপথে ওভারপাস ফাঁকা, হাতিরা আসে না

চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রেলপথে বন্যপ্রাণী রক্ষায় গড়ে তোলা হয়েছিল এশিয়ায় সর্বপ্রথম ‘এলিফ্যান্ট ওভারপাস’। উদ্দেশ্য ছিল– বন্যহাতির জীবন ...