ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ২০/০৩/২০২৪ ১০:০৭ এএম

চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত কক্সবাজার জেলার প্রবাসীরা ১০২.৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে বলে তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
মঙ্গলবারের (১৯ মার্চ) আন্তর্জাতিক ডলারের রেট অনুযায়ী, ১ ডলার সমান ১০৯ টাকা ৭৬ পয়সা হিসেবে ১০২.৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাংলাদেশি টাকার ভিত্তি দাঁড়ায় ১ হাজার ১২৩ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, রেমিট্যান্স গ্রহণে চট্টগ্রাম বিভাগে কক্সবাজারের অবস্থান অষ্টম।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জনশুমারির তথ্য বলছে, কক্সবাজারের ৯ উপজলায় রেমিট্যান্স সুবিধাভোগী প্রায় ৬৩ হাজার ৮৯৯টি পরিবার। সুবিধাভোগীর ক্ষেত্রে গ্রামাঞ্চলের ৩৭ হাজার ২৭৭ পরিবারের বিপরীতে চার পৌর অঞ্চলে এই সুবিধা পান ২৬ হাজার ৬২২ পরিবার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, গত ৮ মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে ১০২.৩ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে- জুলাইতে ১৪.৯ মিলিয়ন ডলার (১৬৩ কোটি ৫৩ লক্ষ), আগস্টে ৮.৯ মিলিয়ন (৯৭ কোটি ৬৮ লক্ষ), সেপ্টেম্বরে ৭.৯ মিলিয়ন (৮৬ কোটি ৭০ লক্ষ), অক্টোবরে ১৫.৫ মিলিয়ন (১৭০ কোটি ১২ লক্ষ ), নভেম্বরে ১৩.১ মিলিয়ন (১৪৩ কোটি ৭৮ লক্ষ), ডিসেম্বরে ১৩.৯ মিলিয়ন (১৫২ কোটি ৫৬ লক্ষ), জানুয়ারিতে ১৬.২ মিলিয়ন (১৭৭ কোটি ৮০ লক্ষ) এবং সবশেষ ফেব্রুয়ারিতে ১১.৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (১২৮ কোটি ৪১ লক্ষ টাকা)।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শুরুতে প্রবাসী আয়ে কিছুটা নিম্নমুখী ছিল। তবে আগস্টের পর বৈধপথে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানো ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। খাত সংশ্লিটরা জানিয়েছে, আসন্ন দুই ঈদকে সামনে রেখে এই আয় আরও বাড়বে।
বিবিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রবাসী আয় প্রবাহ বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সূচক হিসেবে বিবেচিত। কারণ, প্রবাসী আয় বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, জাতীয় সঞ্চয় ও টাকার হাতবদলের মাত্রা বাড়ানোর মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
তথ্য বলছে, প্রবাসী আয়ের বেশির ভাগই জমা হয় বেসরকারি ব্যাংকে। এর মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক, দ্বিতীয় অগ্রণী ব্যাংক এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক।
ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, বিভিন্ন দেশে এই তিন ব্যাংকের শাখা থাকায় সহজেই টাকা পাঠাতে পারেন প্রবাসীরা। অপরদিকে রাষ্ট্রায়াত্ব এবং অনেক বেসরকারি ব্যাংক এই সুবিধা চালু করতে পারেনি, সেকারণে রেমিট্যান্স গ্রহণে ব্যাংকগুলো পিছিয়ে পড়ছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক কক্সবাজার শাখার ব্যবস্থাপক সাখাওয়াত আলী বলেন, ‘চলতি অর্থবছরে ৪৭ জন সুবিধাভোগীকে ৪৫ লক্ষ ৯১ হাজার রেমিট্যান্সের অর্থ বিতরণ করেছি। আসন্ন ঈদ ও কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে রেমিট্যান্স আরো বাড়বে।’
কক্সবাজারের বিভিন্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপক, জনশক্তি রপ্তানি ও কর্মসংস্থান অফিসের কর্মকর্তা এবং একাধিক প্রবাসী জানায়, প্রবাসী আয়ের বেশির ভাগই আসে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, ওমান, বাহরাইন থেকে। এর বাইরে মালয়েশিয়া-ইতালির অবস্থান।
বর্তমান ডলারের বাজারমূল্য ধরা হয়েছে ১০৯ টাকা ৭৬ পয়সা। প্রবাসীরা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে রেমিট্যান্স পাঠালে আড়াই শতাংশ প্রণোদনা পেয়ে থাকেন। তবে কিছু কিছু ব্যাংকে রিজার্ভ বাড়াতে প্রবাসীদের ৫ শতাংশ পর্যন্ত প্রণোদনা দিচ্ছে। অপরদিকে প্রবাসী আয়ের বৃহৎ একটি অংশ গিলে খাচ্ছে হুন্ডি কারবারিরা।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবদরা বলছেন, অবৈধ চ্যানেলে নজরদারি বাড়ানো গেলে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় আরো বাড়বে। এ ক্ষেত্রে উপকৃত হবে সরকার। বাড়বে রিজার্ভও।
জানতে চাইলে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানর সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, `দেশে ডলারের রেট একেক জায়গায় একেক রকম। ব্যাংক দিচ্ছে ১১০ টাকার মতো, সেখানে কার্ব মার্কেটে মিলছে ১১৭-১২০ টাকা। ফলে বেশি লাভের আশায় প্রবাসীরা হুন্ডির মাধ্যমেই বেশি রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে।’
বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স যাতে বেশি আসে এবং হুন্ডি ঠেকাতে করণীয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশে যারা হুন্ডি নামের অবৈধ কারবারে জড়িত রয়েছে সবার আগে তাদের ধরে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে। এটি করা সরকারের জন্য খুব কঠিন কোনো কাজ নয়, শুধু সদিচ্ছা দরকার। সুতরাং সরকার, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর হলেই হুন্ডি রোধ করা যায়।’
এদিকে গত ১ মার্চ কক্সবাজারে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ পরিপালন কর্মকর্তা সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানো উৎসাহিত করা এবং রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ নিয়ে আলোচনা করেন। এবং হুন্ডি ও চোরাচালান বন্ধে বিভিন্ন নির্দেশনা দেন।
কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে ২৩ হাজার ৫১৭ জন মানুষ কাজের খোঁজে প্রবাসে গেছেন। আর ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে গেছেন ১ হাজার ৫১৯ জন। সুত্র: দৈনিক কক্সবাজার

পাঠকের মতামত

কক্সবাজার সৈকতে ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিলো আমেরিকান সেনা ও বিমানবাহিনী

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে আমেরিকান সেনা ও বিমানবাহিনী। ১৮ মে থেকে ...

কক্সবাজারে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণের অনুমোদনে জেলাবাসীর আনন্দ-উচ্ছ্বাস

কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় ক্রয় কমিটি। এই খবরে ...