নিজস্ব প্রতিনিধি ::
গত তিনদিন ধরে কক্সবাজারের সর্বত্র আষাঢ়ী অতিভারী বর্ষণ চলছে। অতিবৃষ্টির তোড়ে জেলার মিঠাপানির তিন নদী চকরিয়ার মাতামুহুরি, ঈদগাঁওর ফুলেশ্বরী ও কক্সবাজারের বাঁকখালীতে নেমেছে পাহাড়ি ঢল। ঢলের তীব্রতায় ভেঙ্গে গেছে ঈদগাঁওর রাবারড্যাম এলাকার নদীর বাঁধ। এতে প্লাবিত হচ্ছে বৃহত্তর ঈদগাঁওর জালালাবাদ, ঈদগাঁও, চৌফলদন্ডী, পোকখালী ও ইসলামাবাদ এলাকার অর্ধশত গ্রামের রাস্তা-ঘাট, বাসা-বাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ফসলে মাঠ। ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে আভ্যান্তরীণ সড়কও। একই অবস্থা বিরাজ করছে কক্সবাজার শহরসহ চকরিয়া, পেকুয়াসহ বেশ কয়েক উপজেলার নিম্নাঞ্চল। ঢলের তীব্রতা বাড়তে থাকায় নামতে পারছেনা সমতলের বৃষ্টির পানি। ফলে পানি বন্দি হয়ে পড়ছে জেলার নিম্নাঞ্চলের শতাধিক গ্রামের কয়েক লাখ মানুষ।এছাড়াও মঙ্গলবার সকালে অতিবৃষ্টিপাতে পাহাড়ের মাটি চাপায় মহেশখালীর হোয়ানক ইউনিয়নের মোহরাকাটা গ্রামের জুমপাড়ার মনোয়ার আলম (৩৮) মারা গেছেন। বাড়ি রক্ষা করতে গিয়ে তিনি মাটিচাপা পড়েন। অপরদিকে, ঢলের পানিতে ঢুবে উম্মে সালমা (৭) নামের এক স্কুল ছাত্রী। সে ইসলামাবাদ পূর্ব ইউছুপেরখীল এলাকার আলী আব্বাসের মেয়ে ও ইউছুপেরখীল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণীর শিক্ষার্থী।আবহাওয়া অধিদফতর কক্সবাজার স্টেশনের আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক বলেন, রবিবার সকাল থেকেই ভারি বর্ষণ শুরু হয়েছে। এটি মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত অতিভারী বর্ষণ হিসেবে অব্যাহত ছিল। রবিবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ৪৮ ঘন্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ২৩১ মিলিমিটার। এভাবে বর্ষণ আরো দুদিন অব্যহত থাকতে পারে। সাথে পাহাড় ধ্বসেরও সম্ভাবনা রয়েছে বলে আবহাওয়ার পূর্বাবাসের কথা জানান তিনি।অনেক স্থানে নদীর বেড়িবাঁধ ভাঙ্গন পুন:মেরামত সম্ভব হয়ে না উঠায় সহজে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। প্লাবিত হচ্ছে কক্সবাজার শহরের হোটেল-মোটেল জোন, ঝিলংজা ইউনিয়নের চান্দেরপাড়া, খরুলিয়া, দরগাহপাড়া, পোকখালীর মধ্যম পোকখালী, নাইক্ষংদিয়া, চৌফলদন্ডী, নতুনমহাল, ঈদগাঁওর মাইজপাড়া, ভাদিতলা, ভোমরিয়াঘোনা, কানিয়ারছরা, ঈদগাঁও বাজার এলাকা, কালিরছড়া, রামুর উপজেলার ধলিরছরা, রশিদনগর, জোয়ারিয়ানালা, উত্তর মিঠাছড়ি, পূর্ব ও পশ্চিম মেরংলোয়া, চাকমারকুল, কলঘর, লিংকরোড়, চকরিয়ার উপজেলার ভাঙ্গারমুখ, ফাঁসিয়াখালী, মালুমঘাট, ডুলাহাজারা, খুটাখালী, ফুলছড়ি, ইসলামপুর ও পেকুয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা। অপরদিকে, জোয়ারের পানির সাথে বৃষ্টির পানি ভোগান্তি বাড়িয়েছে উপকূলের দূর্গত মানুষগুলোর।ঈদগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছৈয়দ আলম ও জালালাবাদ ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান (১) ওসমান সরোয়ার ডিপো জানান, অতিভারী বর্ষণে ঈদগাঁও নদীতে তীব্র বেগে ঢল নেমেছে। সোমবার ঢলের তোড়ে রাবারড্যাম এলাকায় নদীর বাঁধ ভেঙ্গে পুরো এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বৃষ্টিপাত চলমান থাকায় ক্রমে বাড়ছে নদীর পানি। পূর্বে ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধ মেরামত সম্ভব না হওয়ায় অতি সহজে অন্য লোকালয়ে পানি ঢুকছে।সদরের উপকূলীয় পোকখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক আহমদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু ও মোরার প্রভাবে ভেঙ্গে যাওয়া বেডিবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানির ঢুকে বিশাল এলাকা প্রতিদিন প্লাবিত করছে। এর সাথে এখন যোগ হয়েছে দুয়েকদিন ধরে অতি বর্ষণের পানি। বাড়ন্ত পানি নিম্ন এলাকার বাড়ি ঘরে প্রবেশ করছে।চৌফলদন্ডী ইউপির সদস্য ফরিদুল আলম জানান, পাউবো’র নিয়ন্ত্রণাধীন ২৭নং সøুইচগেইটটি বন্ধ করে রাখায় উজান থেকে নেমে আসা পানি বের হতে পারছে না। পাউবোকে একাধিকবার তাগাদা দিলেও কার্যকর কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় বৃহত্তর ঈদগাঁওর প্রায় অর্ধশত গ্রাম পানি বন্দী।ইসলামাবাদের চেয়ারম্যান নুর ছিদ্দিক জানান, ভারি বর্ষণে ঢল ও বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল। ইউনিয়নের পূর্ব ইউছুপেরখীলে ঢলের পানিতে পড়ে সালমা নামে এক স্কুল ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে।মহেশখালী উপজেলা চেয়ারম্যান হোছাইন ইব্রাহিম জানান, মঙ্গলবার সকালে হোয়ানকে পাহাড়ের মাটি চাপায় এক যুবক মারা গেছেন।চকরিয়ার সুরাজপুর-মানিকপুর ইউপি চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম বলেন, ঢলের পানি ঢুকে তাঁর ইউনিয়নের শতাধিক পরিবারের বসতঘর প্লাবিত হচ্ছে। বরইতলী ইউপি চেয়ারম্যান জালাল আহমদ সিকদার বলেন, পানির প্রবাহ বাড়ায় তাঁর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর, ডেইঙ্গাকাটা, রসুলাবাদসহ একাধিক গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। কোনাখালী ইউপি চেয়ারম্যান দিদারুল হক সিকদার ও বিএমচর ইউপি চেয়ারম্যান এসএম জাহাংগীর আলম বলেন, তাদের ইউনিয়নে হাজারো পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। চিরিঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান জসীম উদ্দিন বলেন, ঢলের কারণে উপজেলার চিংড়িজোনের শত শত চিংড়ি প্রকল্প পানিতে তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে মাছ ভেসে গিয়ে বড় ধরণের ক্ষতির সম্মুখীন হবে চিংড়িজোনের হাজারো চাষী।চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি জাফর আলম জানান, মাতামুহুরী নদীতে ঢলের তীব্রতা বাড়ায় পৌরসভাসহ উপজেলার নিমাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। চকরিয়া-পেকুয়ার প্রায় অর্ধশত গ্রাম ঢল ও বষ্টির পানিবন্দি হয়ে মানবেতর দিনকাটাচ্ছে অধিবাসীরা। ঢলের পানি বাড়তে থাকায় পাউবোর ক্ষতিগ্রস্থ শহররক্ষা বাধ আবারো তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলের পানিতে উখিয়ার বিভিন্ন গ্রামের আঞ্চলিক সড়কের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ফলে দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ ও শিক্ষার্থীদের। পালংখালী ইউনিয়নের থাইংখালী খালের ভাঙ্গনে ফরেষ্ট রোড হয়ে আশার বাপের পাড়া সড়কের প্রায় ২ শত গজ ব্রীক সলিংয়ের একাংশ তলিয়ে গেছে। কক্সবাজার টেকনাক সড়কের ৮০ মিটার দীর্ঘ থাইংখালী ব্রীজের অবকাঠামো ধ্বসে পড়ার কারণে সংযোগ সড়ক বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
কক্সবাজার সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রানা প্রিয় বড়–য়া জানান, পাহাড়ী ঢলের পানি ব্রীজের সরাসরি আঘাত হানার কারণে গাইড ওয়াল ধ্বসে পড়েছে।পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান এম. গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ক্ষয়ক্ষতির কথা উল্লেখ করে উপজেলা প্রশাসনে পত্র দেয়া হয়েছে।উপজেলা সহকারি প্রকৌশলী সোহরাব হোসেন জানান, এলজিইডির অর্থায়নে নির্মিত গ্রামীণ সড়কসহ সৈকত সড়কের ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা গুলো চিহ্নিত করে সংস্কার করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।এদিকে অতিবর্ষণে পাহাড় ধ্বস বা যেকোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে স্থানীয়দের রক্ষার্থে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিংসহ সব ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানান কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন।কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.সবিবুর রহমান বলেন, ভেঙ্গে যাওয়া ও বিলীন হওয়া বেড়িবাঁধ মেরামতের কিছু কিছু বরাদ্দ মিলেছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে মেরামত কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। নিম্নাঞ্চলের পানি নামতে বন্ধ সøুইচগেইট খুলে দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর একটি বাসে গ্যাস নেওয়ার সময় সিলিন্ডার বিস্ফোরণে তিনজন নিহত হয়েছেন। দগ্ধ হয়েছেন অন্তত ২০ ...
পাঠকের মতামত