
উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
কক্সবাজারের সাগর বেস্টিত দ্বীপ মহেশখালীর অর্থনৈতিক অঞ্চল-৩ শিল্প স্থাপনের বড় বিনিয়োগে আসছে দেশিয় শিল্প গ্রুপ টি কে গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান সুপার পেট্রোকেমিক্যাল প্রাইভেট লিমিটেড (এসপিপিএল)।
এ অর্থনৈতিক জোনের ধলঘাটা ও দক্ষিণ ধলঘাটা মৌজায় শিল্প স্থাপনে এসপিপিএলকে ৩০০ একর জমি দিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)।
১০ সেপ্টেম্বর রোববার দুপুরে রাজধানীর প্যান প্যাসেফিক সোনারগাঁও হোটেলে বেজা ও এসপিপিএল এর মধ্যে জমি বরাদ্দ সমঝোতা সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
চুক্তিতে বেজার নির্বাহী সদস্য মো. হারুনুর রশিদ ও এসপিপিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোস্তফা হায়দার নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সই করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি) মো. আবুল কালাম আজাদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী সভাপতিত্ব করেন।
চুক্তি অনুযায়ী এসপিপিএল এ জমিতে এসপিপিএল পেট্রোকেমিক্যাল রিফাইনারী, পেট্রোলিয়াম পণ্য মজুদাগার, এলপিজি টার্মিনাল ও বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করবে।
টি কে গ্রুপের সাথে এ জমিতে একটি তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) টার্মিনাল নির্মাণ করবে দক্ষিণ কোরিয়ার এস কে গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এস কে গ্যাস।
চুক্তি অনুষ্ঠানে বেজার নির্বাহী সদস্য মো. হারুনুর রশিদ বলেন, এসপিপিএল বেসরকারি পর্যায়ে স্থাপিত দেশের বৃহত্তম পেট্রোলিয়াম এবং পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান।
এসপিপিএল বর্তমানে আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন জ্বালানি তেল উৎপাদন করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনকে (বিপিসি) সরবরাহ করছে।
এ প্রতিষ্ঠান সরকারের অকটেন ও ডিজেলের আমদানি নির্ভরতা হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। দেশের অকটেন চাহিদার প্রায় ৬০% পূরণ করে এসপিপিএল।
এছাড়া আমদানি বিকল্প পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য জাইলিন ও টলুইন উৎপাদন করে; যা রং, মুদ্রণ কালি এবং এডহেসিভ উৎপাদনকারী বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত হচ্ছে।
তিনি বলেন, বেজার সার্বিক সহযোগিতায় এসপিপিএল বিশাল বিনিয়োগে স্টেট অব আর্ট মেশিনারিজ স্থাপনের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। এখানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ১০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
পরবর্তীতে যৌথ প্রয়াসের মাধ্যমে এসপিপিএল ও দক্ষিণ কোরিয়ার এস কে গ্যাস প্রস্তাবিত জমিতে একটি এলপিজি টার্মিনাল স্থাপন করবে। এজন্য কারিগরি দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এলপিজি টার্মিনাল স্থাপিত হলে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সাশ্রয় সম্ভব হবে।
এ প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে চীন, জার্মান, যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্সের কারিগরি সহযোগিতায় বিশাল বিনিয়োগে মহেশখালিতে বৃহৎ পরিসরে পেট্রোকেমিক্যাল রিফাইনারী প্লান্ট স্থাপিত হবে।
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, সরকার মহেশখালী উপজেলাকে পাওয়ার এন্ড হাব করার উদ্যোগ নিয়েছে। সেজন্য এখানে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
এ জোনে বিশেষ করে বিদ্যুৎ, স্টিল, এলপিজি গ্যাস এর মতো ভারী শিল্প করা যাবে। এসব শিল্পকে ঘিরে ৪-লেন সড়ক, রেল সংযোগ করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আমাদের পরিকল্পনা হলো এ জোনের আওতায় ৮ হাজার একর জমি রাখা হবে।
বড় বড় শিল্পকারখানা আমাদের অর্থনীতিতে অবদান রাখবে। ইতোমধ্যে চায়নার কুইমিং স্টিল এন্ড আয়রণ কোম্পানি এ জোনে ২ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তারা এখানে জায়গা চেয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মহেশখালী, মীরসরাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।
তিনি বলেন, এসপিপিএল এ জোনে ৮-১০টি ইন্ডাস্ট্রি স্থাপন করবে। জানুয়ারি নাগাদ তাদের জমি হস্তান্তর করা হবে। এসপিপিএল এর মতো এ জোনে শিল্প স্থাপনে আমেরিকান একটি কোম্পানি, বাংলাদেশের ইস্টকোস্ট গ্রুপসহ অনেক দেশিয় কোম্পানি জমি চেয়েছে। আশা করি দ্রুত এ জোনে অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ শুরু হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, আজ প্রধানমন্ত্রী ১০ উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন উদ্বোধন করেছেন। বিদ্যুৎ বিভাগ আরও ৩৫ উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়ন করার প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করেছে।
তিনি বলেন, সরকার উন্নয়নের জন্য প্রত্যন্ত অঞ্চলে অর্থনৈতিক জোন স্থাপন করছে। সুপার পেট্রোকেমিক্যাল মহেশখালীর প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। গ্যাস সীমিত হয়ে আসছে। সরকার ইতোমধ্যে গ্যাস সংযোগ দেবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। আগামী ৭-১০ বছর পর আর গ্যাস সংযোগ দেওয়া সম্ভব হবে না। সে থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় এলপিজি গ্যাস। এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণের পদক্ষেপ যুগোপযোগী।
অনুষ্ঠানে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আবুল মুনসুর মো. ফয়জুল্লাহ, বিডার চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল ইসলাম, ঢাকাস্থ দক্ষিণ কোরিয়া দূতাবাসের বাণিজ্য শাখার মহাপরিচালক ও বিভাগীয় প্রধান জে ডব্লিউ কিম, এস কে গ্যাস এর ভাইস প্রেসিডেন্ট রো কানগো প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পাঠকের মতামত