ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ০৪/০১/২০২৪ ৬:৩০ পিএম

কক্সবাজারের ৪টি সংসদীয় আসনে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৫৫৬। কেন্দ্রগুলোতে কক্ষ আছে ৩ হাজার ৫০৭টি। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ ভোটকেন্দ্রকেই ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বা অতি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিশেষ করে সাগরদ্বীপ মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত কক্সবাজার-২ আসনে শতভাগ কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তা ছাড়া কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে ৯৮ শতাংশ, কক্সবাজার-৩ আসনের রামু ও ঈদগাঁও উপজেলার ৯০ শতাংশ ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনী সহিংসতায় কক্সবাজার-১ আসনের পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নের মাতবরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও গুলিবর্ষণের ঘটনায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থক মো. আবদুল্লাহ (২২) নিহত হয়েছিলেন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও এই কেন্দ্রে গোলযোগ ও সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন ভোটাররা। এবার নৌকার প্রার্থী না থাকলেও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির প্রার্থী (সভাপতি) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের হাতঘড়ি প্রতীকের পক্ষে মাঠে নেমেছেন। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য জাফর আলমও ট্রাক প্রতীক নিয়ে লড়ছেন।

পেকুয়া উপজেলায় ভোটকেন্দ্র রয়েছে ৪৪টি। এর মধ্যে অতি ঝুঁকিপূর্ণ ২২টি, ঝুঁকিপূর্ণ ২২টি। পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ইলিয়াছ প্রথম আলোকে বলেন, সব কটি ভোটকেন্দ্রকে প্রশাসন গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) হিসেবে চিহ্নিত করে বিশেষ নজরে রেখেছে।

চকরিয়া উপজেলায় ভোটকেন্দ্র আছে ১১৪টি। এর মধ্যে ৯৬টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ এবং ১৮টিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। চকরিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে অধিক নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণের মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে।

কক্সবাজার-১ আসনে মোট ভোটকেন্দ্র ১৫৮টি। ভোটার ৪ লাখ ৮৬ হাজার ২৫২ জন। ২০২১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ইউপি নির্বাচনে কক্সবাজার-২ আসনের মহেশখালীর কুতুবজোম ইউনিয়নের জামেউস সুন্নাহ দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে দুই পক্ষের সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে নিহত হন আবুল কালাম। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আশেক উল্লাহ রফিকের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিএনএম প্রার্থী ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. শরীফ বাদশা। এবারও ভোটকেন্দ্রটিতে গোলযোগের আশঙ্কায় আছেন ভোটাররা। কেন্দ্রটিতে ভোটারসংখ্যা ৪ হাজার ৬৯৪।

কক্সবাজার–২ আসনের (মহেশখালী ও কুতুবদিয়া) মহেশখালীতে ভোটকেন্দ্র রয়েছে ৮১টি। সব কটি কেন্দ্র অধিক গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে মহেশখালী থানার ওসি সুকান্ত চক্রবর্তী বলেন, দুর্গম ও দ্বীপ এলাকায় সব কটি ভোটকেন্দ্র, তাই কঠোর নিরাপত্তা গ্রহণ করা হচ্ছে।

অন্যদিকে কুতুবদিয়া উপজেলার ৩৭টি কেন্দ্রের সব কটিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কারণ জানতে চাইলে কুতুবদিয়া থানার ওসি গোলাম কবির বলেন, এখানে সাধারণ কেন্দ্র নেই বললেই চলে। অধিকাংশ কেন্দ্র দুর্গম এলাকায় হওয়ায় হেঁটে যেতে হয়। তারপরও সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে।

কক্সবাজার-৩ আসনে (সদর, রামু ও ঈদগাঁও) মোট ভোটকেন্দ্র ১৬৭টি। এর মধ্যে রামুতে ৬৪টি, কক্সবাজার সদরে ৭৬টি ও ঈদগাঁওয়ে ৩৬টি। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ ভোটকেন্দ্রকেই ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করা হয়েছে। কক্সবাজার সদরের ৭৬টি ভোটকেন্দ্রের সব কটি ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করার কারণ জানিয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি মো. রাকিবুজ্জামান বলেন, এ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচনী প্রচারণা চললেও যেকোনো মুহূর্তে গোলযোগ দেখা দিতে পারে। এই আসনে ভোটারসংখ্যা ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৬১০।

কক্সবাজার-৪ আসনে (উখিয়া, টেকনাফ) ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১০৪টি। এর মধ্যে টেকনাফে ৫৭টি এবং উখিয়াতে ৪৭টি। টেকনাফে ১৪টিকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ এবং ৩৪টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ দাবি করে টেকনাফ মডেল থানার ওসি মো. ওসমান গণী বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রসমূহে কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিতের প্রস্তুতি চলছে। উখিয়ার ৪৭টি কেন্দ্রের ৯০ শতাংশই ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করা হয়েছে। এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ২৬ হাজার ৯৭১ জন।

নিরাপত্তাশঙ্কায় সংখ্যালঘু ও নারী ভোটার
চকরিয়া পৌরসভার সংখ্যালঘু ভোটার বাবুল দে ও উন্দ্রিরা দে বলেন, ট্রাক ও হাতঘড়ি প্রতীকের পক্ষে ভোট চাওয়া হচ্ছে। কিন্তু কেন্দ্রে যাওয়ার সাহস পাচ্ছেন না তাঁরা। কেন্দ্র দখল নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যেতে পারে। কারণ, দুই পক্ষেই আওয়ামী লীগের লোকজন।

একই কথা বলেন কক্সবাজার পৌরসভার ভোটার শ্যামল কান্তি দে ও রেখা রানী। তাঁরা বলেন, নিরাপত্তা না পেলে তাঁরা কেন্দ্রেই যাবেন না।

জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের তথ্যমতে, ৪ আসনে মোট ভোটার ১৬ লাখ ৫৩ হাজার ৯৬০ জন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৬ লাখ ভোটারের মধ্যে অন্তত ৪ লাখ সংখ্যালঘু ভোটার রয়েছেন। অধিকাংশ সংখ্যালঘু ভোটারের বসবাস কক্সবাজার পৌরসভা, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, রামু ও চকরিয়া উপজেলায়। সংঘাত-গোলযোগ দেখা দিলে ভোটের দিন সংখ্যালঘু ও নারী ভোটাররা কেন্দ্রে যাবেন কি না, সন্দেহ রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, ‘৫৫৬টি কেন্দ্রের সব কটিকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। শান্তিপূর্ণভাবে এবং উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন সম্পন্ন করতে যা করা প্রয়োজন, আমরা তার প্রস্তুতি নিচ্ছি। ভোটকেন্দ্র দখল, ব্যালট ছিনতাই কিংবা গোলযোগের সুযোগ কাউকে দেওয়া হবে না।’ সুত্র : প্রথম আলো

পাঠকের মতামত

ঈদের ছুটিতে মৈত্রী সড়কে রোহিঙ্গাদের ভিড়, উদ্বেগ স্থানীয়দের

ঈদুল আজহার ছুটিতে দর্শনার্থীদের পদচারণে মুখর হয়ে উঠেছে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের মৈত্রী ...