প্রকাশিত: ১৩/০৭/২০১৬ ৭:২৫ এএম

sea-beatchনিউজ ডেস্ক::

প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পে বাংলাদেশ ও ভারতের পূর্বাঞ্চলের প্রায় ১৪ কোটি মানুষের জীবন ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সোমবার প্রকাশিত এক গবেষণায় এ আশঙ্কার বিষয়টি উঠে এসেছে।এর ফলে পর্যটন শহর কক্সবাজারেও ভয়াবহ ভূমিকম্পের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

১১ জুলাই সোমবার নেচার জিওসায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত ওই গবেষণায় দেখা যায়, ভূ-গাঠনিক অবস্থানের কারণেই বাংলাদেশে বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের একদল গবেষকের ওই গবেষণায় অংশগ্রহণ করেন।গবেষণায় প্রদত্ত তথ্যমতে, তেমন ভূমিকম্প ঘটলে তা এ অঞ্চলের ১৪ কোটি মানুষকে বিপদের মুখে ঠেলে দিতে পারে।তবে কবে নাগাদ এ ভূমিকম্প ঘটবে তা নিয়ে আরও গবেষণা করা প্রয়োজন।

ওই গবেষণাপত্রের বরাতে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্স জানিয়েছে, এখনই বাংলাদেশ বড় ভূমিকম্পে কেঁপে উঠবে এমন কথা বলা না গেলেও, দুটি গতিশীল ভূ-গাঠনিক প্লেট পরস্পরের ওপর চেপে বসতে থাকায় সেখানে শক্তিশালী ভূমিকম্পের শক্তি জমা হচ্ছে।‘ওই ধরনের ভূমিকম্প কবে ঘটতে পারে, সে পূর্বাভাস জানাতে আরও গবেষণা করতে হবে।

’গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ভারতের পূর্বাঞ্চল ও বাংলাদেশের যে অঞ্চল সেই সম্ভাব্য ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র প্রায় ১০০ কিলেমিটার ব্যাসের মধ্যে প্রায় ১৪ কোটি মানুষের বসবাস। বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এই অঞ্চলে রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হলে মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

তেমন কোনও ভূমিকম্প হলে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা ভবন,ভারী শিল্প, বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং গ্যাস ক্ষেত্রগুলো ধ্বংসের মুখে পড়তে পারে বলে গবেষকরা আশঙ্কা করছেন।

এদিকে সোমবার নেচার জিওসায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত গবেষণার পর কক্সবাজারে ভূমিকম্প আঘাত হানার আশঙ্কা আরো তীব্র হয়েছে। চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল বুধবার সন্ধ্যায় সারা দেশের ন্যায় কক্সবাজারেও ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ায় এ আশঙ্কা আরো তীব্র হয়েছে।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে কক্সবাজারের-মিয়ানমার সীমান্তে  আরও বড় মাত্রার ভূমিকম্পের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।আর এই ভূমিকম্পে বেশি ক্ষতির মুখে পড়তে পারে পর্যটননগরী কক্সবাজার।এর ফলে বহু মানুষের প্রাণহানী সহ মহাবিপর্যয় নামবে পর্যটনসহ লবণ,শুটকি, চিংড়ি, হ্যাচারী,পান-সুপারি, মৎস্য উৎপাদন সহ নানা ব্যবসায়।

এছাড়াও কক্সবাজার শহরে রয়েছে অসংখ্য ঝুঁকিপূর্ণ ভবন।একই সাথে কক্সবাজারের বিশাল অংশ ভয়াবহ বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে পারে এ আশঙ্কা করছে ভূ-বিজ্ঞানীরা। আর রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হলে কক্সবাজারের শত শত ভবন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।সেই সাথে বিভিন্ন স্থানে অগ্নিকান্ডের আশঙ্কাও রয়েছে।

বিশেষ করে কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল জোনখ্যাত কলাতলীতে অপরিকল্পিতভাবে ভবন নির্মাণ ও জনঘনত্ব বেশি হওয়ায় ভূমিকম্পে শহরে মারাত্বক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। রিখটার স্কেলে ৮ বা এর বেশি মাত্রার ভূমিকম্পকে মহা প্রলয়ঙ্করী হিসেবে নির্দেশ করা হয়।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জিওগ্রাফী বিভাগের অধ্যাপক ও কক্সবাজার মাস্টার প্ল্যানের পরিকল্পনাকারী কক্সবাজারের কৃতি সন্তান অলক পাল কক্সবাংলাকে জানান, ভারত ও মিয়ানমার প্লেটের সংযোগস্থলে রয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের পূর্বাংশ তথা কক্সবাজার-চট্টগ্রাম-মিয়ানমার প্লেটের মধ্যে অবস্থিত।কক্সবাজার পাহাড়ি এলাকা।এমন ভূতাত্ত্বিক কাঠামোর মধ্যে ভূমিকম্প হবে এটিই স্বাভাবিক।এ জন্যই কক্সবাজার বেশি ভূমিকম্প প্রবণ। এছাড়া মায়ানমার এবং বাংলাদেশ সীমান্তে একটি ফল্ট জোন (ভূতাত্ত্বিক চ্যুতি) রয়েছে। কক্সবাজার ও চট্রগ্রাম এই চ্যুতির অত্যন্ত কাছে হওয়ায় বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে অবস্থান করছে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম। মায়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তের উক্ত চ্যুতির মধ্যে ৮ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প হলে কক্সবাজারের শতশত ভবনের মধ্যে অধিকাংশ ভবনই ধ্বংস হয়ে যাবে।

তিনি আরও বলেন,কক্সবাজারে পাহাড় কাটা বন্ধ, জলবায়ুর উষ্ণতা রোধসহ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা গেলে কক্সবাজার ঝুঁকিতে মধ্যম অবস্থানে থাকবে।

এ ব্যাপারে কক্সবাজারের বিল্ডিং প্ল্যানার্সের পরিচালক ও স্বনামধন্য প্রকৌশলী ইনঞ্জনিয়ার বদিউল আলম কক্সবাংলাকে জানান,ভূমিকম্প কখনো মানুষ মারে না,অপরিকল্পিত নির্মাণই মানুষ মারে।শহরে যে হারে অপরিকল্পিত নির্মাণ হয়েছে তাতেই বড় ধরনের ভূমিকম্পে পুরো নগরী ধ্বংস্তুপে পরিণত হবে।

কক্সবাজারের ব্যবসা বাণিজ্য এবং পর্যটন শিল্প তছনছ হয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতিটি ভবন নতুন করে এসেসম্যান্ট করতে হবে।ভূমিকম্প প্রতিরোধে শক্তিশালী করতে হবে। অন্যথায় আমাদের ভিশন ২০২১ বা ভিশন ২০৪১ ব্যর্থ হয়ে যাবে।

তিনি আরও বলেন,গত ২০ বছর আগে যে ভবণগুলো নির্মিত হয়েছে সেগুলো মারাত্বক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।এছাড়া কক্সবাজার শহরে কোন নিয়মনীতি ছাড়া যেভাবে বহুতল ভবন তৈরি হয়েছে হঠাৎ ভূমিকম্পে ধ্বংসজজ্ঞ এবং প্রাণহানি এড়ানো প্রায় অসম্ভব।তাই নজর দিতে হবে ক্ষতি কমানোর দিকেই।এছাড়া ৭ মাত্রার উপরে ভূমিকম্প হলে পর্যটন নগরীর কক্সবাজারের বহুতল ভবনের ৭০ শতাংশই ধসে পড়তে পারে যা ঘটাবে মহাদূর্যোগ।

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ নাজমুল হক কক্সবাংলাকে জানান,চলতি বছর জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ১০টি ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে।তার মধ্যে গত ১৩ এপ্রিলের ভূমিকম্প দুইবার অনুভূত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জানি না, ঠিক কবে সেই বিপদ আসবে।তবে প্রতিবেদন অনুয়ায়ী ৯ মাত্রার ভূমিকম্প সত্যিই হলে তার ক্ষয়ক্ষতি এতোটাই ভয়াবহ হবে যে পর্যটন রাজধানী কক্সবাজার হয়ত বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠবে।

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক সর্দার শরিফুল ইসলাম কক্সবাংলাকে বলেন,জলবায়ুর পরিবর্তন, নির্বিচারে পাহাড় কাটা,বৃক্ষ নিধন,বিল্ডিং কোড না মেনে বহুতল ভবন নির্মাণ ও বিভিন্নভাবে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্টের ফলে দিন দিন ভূমিকম্প ঝুঁকিতে পড়ছে কক্সবাজার। তিনি আরও জানান, কক্সবাজারের সমুদ্রবেষ্টিত পাহাড়গুলো দিন দিন কেটে ফেলা হচ্ছে। ফলে মাটি স্থির থাকার ভারসাম্য ক্রমেই হারিয়ে ফেলছে। এতে ভূমিকম্পের ঝুঁকিটা তীব্রতার দিকে যাচ্ছে।

কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার আব্দুল মজিদ কক্সবাংলাকে জানান, ভূমিকম্প পরবর্তী উদ্ধার কাজের জন্য উদ্ধার কাজের ভারি সব ধরণের যন্ত্রপাতির সংকট রয়েছে।তবে এই ধরণের যন্ত্রপাতি সেনাবাহিনীর রয়েছে এবং তারা ছাড়া আর কেউ এগুলো চালাতে পারে না। তিনি আরও বলেন,কক্সবাজারে আমরা ইতোমধ্যে ২ থেকে ৩ হাজার লোককে ভূমিকম্প সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। আরো লোককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো: আলী হোসেন কক্সবাংলাকে জানান,পর্যটন শহর কক্সবাজারে বহু সংখ্যক ভবন ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে এবং এটি নি:সন্দেহে আতঙ্কজনক। তাই দ্রুত সময়ে বিশেষজ্ঞ এবং সুশীল সমাজের মতামত নিয়ে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পাঠকের মতামত

সেই নাজিম উদ্দিনকে ইউএনও হিসেবে পদায়নের পরেরদিন প্রত্যাহার

কুড়িগ্রামে সাংবাদিককে মধ্যরাতে ঘরের দরজা ভেঙে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্যাতনকারী কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের তৎকালীন রেভিনিউ ...

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ, দুর্ভোগ চরমে

শ্রমিককে মারধরের প্রতিবাদে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে পরিবহন মালিকরা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ...

সেন্টমার্টিন যেতে রেজিস্ট্রেশন: সিদ্ধান্ত হয়েছিল বিগত আ.লীগ সরকারের আমলে

সেন্টমার্টিন যেতে রেজিস্ট্রেশনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে, এমনটাই জানিয়েছেন বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের ...

উখিয়ায় কেন্দ্রীয় ফেমাস সংসদের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন সম্পন্ন

কক্সবাজারের ঐতিহ্যবাহি সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন কেন্দ্রীয় ফেমাস সংসদের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। শুক্রবার ( ৬ ...

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে দ্রুতগতির বাসের ধাক্কায় প্রাণ গেল শিশুর

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার জাতীয় মহাসড়কের চন্দনাইশের দোহাজারী পৌরসভার দেওয়ানহাট পুয়া ফকির মাজার সংলগ্ন এলাকায় দ্রুতগতির যাত্রীবাহী বাসের ...