প্রকাশিত: ২৩/০১/২০১৭ ১১:৩৪ পিএম

ফারুক আহমদ :
উখিয়া সীমান্তের ঘুমধুমের পাহাড়ে কুমির চাষে বিস্ময়কর সাফল্য এসেছে। প্রতিষ্টিত এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম কুমির চাষ প্রকল্পে ৬শ’ বাচ্চা প্রজনন হওয়ায় এ সফলতা দেখে উদ্যোক্তারা মহা খুশি। ঘুমধুমের পাহাড়ে প্রতিষ্ঠিত কুমির চাষ প্রকল্পটি কেবল বাংলাদেশে নয় এটি দক্ষিণ এশিয়ার সর্ব বৃহৎ কুমির চাষ প্রকল্প। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কুমির চাষ বিরাট ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে বলে জানিয়েছেন রপ্তানীকারকরা।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, উখিয়া উপজেলা সদর থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা থেকে ৬০ কিলোমিটার দুরত্বে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের বালূখালী টেলিভিশন উপ-কেন্দ্র থেকে মাত্র আধা কিলোমিটার ভিতরে ঘুমধুম পাহাড়ী এলাকায় ২৫ একর জায়গার উপর এ বৃহৎ কুমির চাষ প্রকল্পটি গড়ে তুলে দেশের বৃহত্তর বহুজাতিক শিল্প প্রতিষ্টান আকিজ গ্রুপের অপর একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্টান আকিজ ওর্য়াল্ড লাইফ ফার্ম লিমিটেডের স্বত্ত্বাধিকারী সাংসদ শেখ আকিল উদ্দিন। প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক ও দর্শনার্থীদের সমাগম হচ্ছে কুমির চাষ দেখতে।
প্রকল্পের ফিল্ড অফিসার সুলতান আহমদ জানান, মালয়েশিয়া থেকে ৫০টি কুমিরের বাচ্ছা আমদানি করে ঘুমধুমের পাহাড়ে আধুনিক ও প্রযুক্তির মাধ্যমে কুমিরের চাষ করা হয়। গত কয়েক বছর পূর্বে গড়ে উঠা এ প্রকল্পের মধ্যে ৩টি কুমির মারা যায়। ৪৭টির মধ্যে লালিত-পালিত ৩১টি মাদি কুমির বাচ্চা দেওয়া শুরু করেছে। গত কয়েক মাসে প্রায় ৬শ’ কুমিরের বাচ্চার প্রজনন হয়েছে। নিবিড় পরিচর্যা, চিকিৎসা ও পর্যাপ্ত খাবার প্রয়োগ করায় বর্তমানে সকল বাচ্চা সুস্থ অবস্থায় দিন দিন বড় হচ্ছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, চীন, জাপানসহ বিভিন্ন পশ্চিমা দেশে কুমিরের মাংসের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আগামী ১বছরের মধ্যে এ প্রকল্পে উৎপাদিত কুমির এসব দেশে রপ্তানী করে হাজার কোটি টাকা আয় করার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ব্যাপক অবদান রাখবে। উদ্যোক্তারা আরো আশা করছেন, কুমির চাষের পাশাপাশি এ প্রকল্পে প্রজাপতির চাষ, বার্ড পার্ক সহ কটেজ ও মিউজিয়াম হাউজ গড়ে তুলে প্রকল্পটিকে একটি পর্যটন স্পট হিসাবে গড়ে তোলা হবে। এতে দেশি-বিদেশী পর্যটকের আগমন ঘটলে সরকার পর্যটন খাতেও প্রচুর রাজস্ব আদায় করতে সক্ষম হবে।
সরেজমিন কুমির চাষ প্রকল্প ঘুরে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে,  ২০০৯ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটিকে ২০১০সালের শুরুতেই পরিক্ষামূলক ভাবে ৫০টি কুমির উম্মুক্ত জলাশয়ে ছাড়া হয়। তৎমধ্যে ৩টি কুমির মারা গেলেও বর্তমানে ৪৭টি কুমির সুস্থ রয়েছে। কুমির চাষ প্রকল্পের ম্যানেজার নুরুল ইসলাম জানান, সপ্তাহে এসব কুমিরদের খাবার হিসাবে ২‘শ কেজি মাছ, ৩শ কেজি মাংস সরবরাহ করা হয়। পাশাপাশি বাচ্চা কুমিরদের মাছ-মাংস কিমা বানিয়ে খাবাতে হয়। তিনি জানান, প্রতি মাসে এসব কুমিরদের জন্য ব্যয় হয় দেড় লাখ টাকা। এ প্রকল্পে থাকা ৩১টি মাদি কুমির গত ২ বছরে  ৮’শ বাচ্চা প্রসব করেছে। তৎমধ্যে বিভিন্ন কারনে ১১টি বাচ্চা মারা গেলেও বাকী বাচ্চাগুলো বর্তমানে সাড়ে ৪ ফুট থেকে সাড়ে ৩ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়েছে। ওজনেও বেশ ভাল। সব কুমিরই সুস্থ আছে। আগামী বছর এসব কুমির বিদেশে রপ্তানী করলে প্রায় হাজার কোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। এ হাতে সরকার ও রাজস্ব আদায় করতে সক্ষম হবে।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, ময়মনসিংহ জেলার ভালুকায় একটি ব্যক্তি মালিকানাধীন ও সুন্দরবনে সরকারী অর্থায়ানে আরো একটি কুমির চাষ প্রকল্প রয়েছে। তবে ঘুমধুমের পাহাড়ে আধুনিক পদ্ধতিতে গড়ে ওঠা প্রকল্পটি দেশের সর্ববৃহত্তম ও দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম কুমির চাষ প্রকল্প।
কুমির চাষ প্রকল্পের এডভাইজার ঝুলন দাশ জানান, প্রকল্পে থাকা মাদি কুমির গুলো এক সাথে গড়ে ৫০-৫৫টি ডিম ছাড়ে। এসব ডিম সমূহ সঠিক রক্ষণা-বেক্ষণের জন্য নজর রাখা হলে প্রতিটি ডিম থেকেই বাচ্চা ধারণ করা সম্ভব। তিনি আরো বলেন, আগামী বছরের শুরুতেই বিদেশে রপ্তানি প্রক্রিয়া শুরু হবে তৎ মধ্যে কোরিয়ায় রপ্তানি করা হবে  কুমিরের মাংস, জাপানে রপ্তানি করা হবে চামড়া ও হাটু। অন্যান্য সামগ্রী যাবে চীনে। কোরিয়া  ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান একেএম জাহাংগীর আজিজ বলেন, অবহেলিত একটি ইউনিয়নে কুমির চাষ প্রকল্পে মত একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠায় এলাকার অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হয়েছে। পাশাপাশি আকিজ গ্রুপের বদন্যতায় এখানে একটি পর্যটন স্পট গড়ে তোলার ও তাদের পরিকল্পনা রয়েছে। তা যদি বাস্তবায়ন হয়, তাহলে ঘুমধুম একটি বাণিজ্যিক নগরীতে পরিনত হবে।

পাঠকের মতামত

মিয়ানমারে প্রতিনিধি দল পাঠাবে বাংলাদেশ-মালয়েশিয়াসহ ৫ দেশ

মিয়ানমারে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য জরুরি মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ...

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ট্রাকের ধাক্কায় নিহত ১

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সাতকানিয়ার ঠাকুরদিঘি এলাকায় লবণবাহী ট্রাকের ধাক্কায় এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। নিহতের নাম ...

জাসদ কার্যালয়ের জায়গায় ‘শহীদ আবু সাঈদ জামে মসজিদ’ নির্মাণের ঘোষণা

বগুড়া শহরের জিরো পয়েন্ট সাতমাথা সংলগ্ন এলাকায় বৃহস্পতিবার রাতে ভেঙ্গে ফেলা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ-ইনু) ...

বাড়ছে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ, আটক ৩৩

বান্দরবানের আলীকদম সীমান্তে বাড়ছে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সংখ্যা। আজও বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকালে শিশুসহ ৩৩ মিয়ানমারের নাগরিককে আটক ...