
ঈদের ছুটিতে কক্সবাজারে বহুতল নির্মাণের অন্তহীন কাজ
কক্সবাজারের পর্যটন জোন কলাতলীর সমুদ্রতীরবর্তী এলাকায় বহুতল ভবন নির্মাণ বন্ধের কঠোর উদ্যোগ এখনও নেই, যদিও সেন্টমার্টিন ও সোনাদিয়া দ্বীপে ইসিএ রক্ষার জন্য কিছু কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এতে, ইসিএ এলাকায় নির্মাণ কাজের ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের নির্দেশনার পরও ব্যবসায়ীরা থেমে থাকছেন না। তারা পরিবেশ রক্ষায় কোনো সচেতনতা প্রদর্শন না করে ‘নজরানা’ দিয়ে প্রশাসনের নিরব সহযোগিতা পাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
কলাতলীতে নির্মাণ কাজের চলমান অবস্থার বিষয়ে পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন ‘উই ক্যান কক্সবাজার’ গত নভেম্বরে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দেয়। তাদের আবেদন ছিল, ইসিএ আইন ও স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান (এসটিপি) বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসন যেন আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে। যদিও কিছুদিন নির্মাণ কাজ থেমে থাকলেও, গত রোজার শেষ দশক ও ঈদুল ফিতরের ছুটিকে কাজে লাগিয়ে আবারও নির্মাণ কাজ চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রাতেও থেমে থেমে এসব স্থাপনায় কাজ চলছে।
২০১৭ সালে বাংলাদেশের পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) একটি রিট দায়ের করে, যার পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ইসিএ এলাকায় ভবন নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা দেয়। তবে, অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ বা ফাঁকি দিয়ে দালানগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে। ‘উই ক্যান কক্সবাজার’ এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সৈকত এলাকা এখন বেপরোয়া অবকাঠামো নির্মাণের শিকার, যা পর্যটন নগরীর পরিবেশের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠছে।
‘উই ক্যান কক্সবাজার’ এর প্রধান নির্বাহী ওমর ফারুক জয় বলেন, কক্সবাজারে আসা দেশি-বিদেশি পর্যটকরা নীল জলরাশির তীরে নির্মল প্রকৃতির অনুভূতি নিতে আসেন। কিন্তু আইন অমান্যকারী ব্যবসায়ীরা পরিবেশকে দূষিত করছে, যা পর্যটকদের মাঝে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করছে। যদিও ইসিএ এলাকায় নির্মাণ বন্ধে আদালত নির্দেশ দিয়েছে, তা কার্যকর হচ্ছে না। প্রশাসনও এই দালান নির্মাণকারীদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
কক্সবাজারের একটি পরিবেশ সংরক্ষণ সংগঠনের সদস্য সচিব এইচএম ফরিদুল আলম শাহীন জানান, ইসিএ এলাকায় নির্মাণ বন্ধে সরকার ও আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও কলাতলীর ডিভাইন ইকো-রিসোর্টের পূর্বে এবং মধ্যকলাতলীতে অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা উঠছে। এসব স্থাপনাতে স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান (এসটিপি) নেই, যার ফলে পরিবেশ আরো দূষিত হতে পারে।
পরিবেশকর্মী আমান উল্লাহ আমান বলেন, কক্সবাজারে পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল এবং তিনশোর বেশি রেস্তোরাঁ রয়েছে, কিন্তু অবৈধভাবে ইসিএ এলাকায় আরও স্থাপনা গড়ে উঠছে, যা পরিবেশের ক্ষতি করছে। এসব নির্মাণ ছাড়পত্র ছাড়া চলমান থাকলে শহরটি বাসযোগ্য না হয়ে পড়বে।
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন জানিয়েছেন, তারা মাস্টারপ্ল্যানের মাধ্যমে পরিকল্পিত কক্সবাজার গড়তে কাজ করছেন। ঈদের পর যারা কউকের নির্দেশনা মানছে না, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি সতর্ক করেছেন।
এদিকে, সোনাদিয়া দ্বীপের ৯ হাজার একর বনভূমি ২০১৭ সালে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে (বেজা) ইকোট্যুরিজম পার্ক করার জন্য দেওয়া হলেও, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় গত ১৭ মার্চ সেই এলাকা বন বিভাগে ফিরিয়ে দিয়েছে, যাতে এটি রক্ষিত এলাকা হিসেবে সংরক্ষিত থাকে
পাঠকের মতামত